নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৩ অক্টোবর৷৷ দেশের রেল মানচিত্রের সাথে জুড়ল সাব্রুম৷ ত্রিপুরার সর্বশেষ প্রান্তে রেল পৌছে যেতেই মানুষের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা দ্বিগুণ মাত্রা পেয়েছে৷ সেই অনুভতি দুগর্োৎসবের আনন্দকেও দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে৷ একই সাথে ত্রিপুরায় ডেমু ট্রেন পরিষেবাও শুরু হয়ে গেছে৷ ফলে, দুগর্োৎসবের সূচনালগ্ণে ভারতীয় রেলের জোড়া উপহারে স্বাভাবিকভাবেই ত্রিপুরাবাসী ভীষণ আনন্দিত৷ বৃহস্পতিবার আগরতলা রেল স্টেশনে সবুজ পতাকা নেড়ে আগরতলা-সাব্রুম এবং আগরতলা-ধর্মনগর ডেমু ট্রেন পরিষেবার সূচনা করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷

আজকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন পরিবহণমন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহরায়, সাংসদ প্রতিমা ভৌমিক, বিধায়ক রামপ্রসাদ পাল, বিধায়ক রতন চক্রবর্তী, বিধায়ক মিমি মজুমদার, বিধায়ক সুধন দাস, বিধায়ক প্রভাত চৌধুরী, মুখ্যসচিব ইউ ভেঙ্কটেশ্বরুলু, পরিবহণসচিব এল ডারলং, উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ের জিএম সঞ্জীব রায়-সহ শীর্ষ আধিকারিক প্রমুখ৷
প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালে মিটার গেজে ভারতের রেল মানচিত্রের সাথে যুক্ত হয়েছিল ত্রিপুরা৷ তার পর দীর্ঘ ৮ বছর লেগেছে মিটারগেজ থেকে ব্রডগেজে রূপান্তর হতে৷ ২০১৬ সাল থেকে ত্রিপুরায় এক্সপ্রেস ট্রেন শুরু হয়েছে৷ দূরপাল্লার ট্রেন পরিষেবায় রাজধানী-সহ একাধিক এক্সপ্রেস ট্রেন ত্রিপুরা থেকে যাত্রী পরিবহণ শুরু করেছে৷ বর্তমানে দিল্লি ছাড়াও সদূর দক্ষিণ ভারতের সাথে ত্রিপুরার সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে৷ এখন লোকাল ট্রেন পরিষেবায় জুড়লো রাজ্য৷
এদিকে, আগরতলা থেকে সাব্রুম পর্যন্ত দূরত্ব আড়াই ঘণ্টায় অতিক্রম করবে ডেমু ট্রেন৷ তেমনি আগরতলা থেকে ধর্মনগর পর্যন্ত দূরত্ব অতিক্রম করতে ডেমু ট্রেনে সময় লাগবে সোয়া তিন ঘণ্টা৷ আপাতত, ধর্মনগর-সাব্রুম লাইনে ১ জোড়া এবং আগরতলা-সাব্রুম লাইনে ৩ জোড়া ট্রেন চালাচল করবে৷ প্রতিটি ডেমু ট্রেনে ১০টি করে কামরা রয়েছে৷ তার মধ্যে একটি শুধু মহিলা যাত্রীদের জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়েছে৷ আগামীকাল থেকে আগরতলা-বিলোনিয়া দুই জোড়া লোকাল ট্রেন বাতিল করেছে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ে৷ আজ দুপুর সোয়া একটায় দুটি ট্রেনের সূচনা হয়েছে৷
এদিকে, রাজ্যে সূচনা হল ডেমু ট্রেনের৷ সাথে সাব্রুমও জুড়ে গেল রেল মানচিত্রে৷ এতে উৎফুল্লিত মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বলেন, ২০১৪ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় সরকার এখন পর্যন্ত উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রেল পরিষেবার ক্ষেত্রে যে সকল কাজ করেছে তাতে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে ত্রিপুরা৷
অনুষ্ঠানে উদ্বোধকের ভাষণে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বলেন, রাজ্য সরকার যাত্রীদের সুবিধার্থে দুর্গাপূজার আগে ডেমু রেল পরিষেবা চালু করার অঙ্গীকার করেছিল৷ আজ এই কাজটি সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, রেলমন্ত্রী-সহ রাজ্যের পরিবহণ দফতরকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন মুখ্যমন্ত্রী৷ তিনি বলেন, ২০১৪ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় সরকার এখন পর্যন্ত উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রেল পরিষেবার ক্ষেত্রে যে সকল কাজ করেছে তাতে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে ত্রিপুরা৷ এই সময়ের মধ্যেই ত্রিপুরাসুন্দরী, হামসফর, কাঞ্চনজঙ্ঘা, দেওঘর, রাজধানী-সহ ৬-টি এক্সপ্রেস ট্রেন পরিষেবা শুরু হয়েছে৷
মুখ্যমন্ত্রী ত্রিপুরায় রেলের বিস্তারে ভবিষ্যত সম্ভাবনার তথ্য তুলে ধরেছেন৷ তাঁর কথায়, ধর্মনগর-কৈলাসহর-পেঁচারথলের মধ্যে ৪১.৭৫ কিমি রেলপথ নির্মাণের জন্য সমীক্ষার কাজ চলছে৷ এ-বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে সমীক্ষার কাজ শেষ হওয়ার পর রেলওয়ে ট্র্যাকের কাজ শুরু হবে৷ এর জন্য ব্যয় হবে ১৭১৩ কোটি টাকা৷ এই রেলপথের মাধ্যমে কৈলাসহরকেও রেল পরিষেবার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া সম্ভব হবে৷
সাথে তিনি যোগ করেন, এছাড়া ধর্মনগর-পেঁচারথল-খোয়াই-আগরতলা-বিলোনিয়া পর্যন্ত বিকল্প রেলপথ নির্মাণের জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে৷ ২০২০ সালের মধ্যে সমীক্ষার কাজ শেষ হলে রেলওয়ে ট্র্যাকের কাজ শুরু হবে৷ বিকল্প এই রেলপথটি তৈরি হলে ত্রিপুরায় প্রতিটি প্রান্ত রেলের সাথে জুড়ে যাবে৷ তাঁর দাবি, বিকল্প এই রেলপথ নির্মাণে ত্রিপুরায় ৬-৭ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হবে৷ তাতে রাজ্যের জিডিপি বাড়বে এবং রোজগার সৃষ্টির পাশাপাশি পরিকাঠামো উন্নয়ন হবে৷

