১২০০০ অশিক্ষক পদ অবলুপ্ত হয়ে গিয়েছে জানালেন শিক্ষামন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৩০ আগস্ট৷৷ চাকরিচ্যুত ১০৩২৩ অ্যাডহক শিক্ষকদের বিকল্প ব্যবস্থার মাধ্যমে সরকারি চাকরি নিশ্চিত করার জন্য ত্রিপুরা সরকারের উপর প্রচণ্ড চাপ তৈরি করেছিলেন বিরোধীরা৷ কিন্তু শিক্ষামন্ত্রী রতনলাল নাথের কৌশলী জবাব এবং ট্রেজারি বেঞ্চের সদস্যদের চাঁচাছোলা আক্রমণে শেষে উত্থাপিত প্রস্তাব প্রত্যাহারের আবেদন জানান বিরোধী দলনেতা মানিক সরকার৷ সাথে ট্রেজারি বেঞ্চের সংশোধনী প্রস্তাবটিও প্রত্যাহারের জন্য অনুরোধ জানান তিনি৷ তাঁর আবেদনে ট্রেজারি বেঞ্চ সম্মত হয়ে দুটি প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নিয়েছে৷ আজ বিধানসভায় শিক্ষামন্ত্রী রতনলাল নাথ সাফ জানিয়েছেন, ১২০০০ অশিক্ষক পদ অবলুপ্তি হয়ে গেছে৷ ফলে, ওই সব পদে নিয়োগের কোনও সম্ভাবনা নেই৷


শুক্রবার ত্রিপুরা বিধানসভার বর্ষাকালীন অধিবেশনের প্রথম দিনে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে চাকরিচ্যুত ১০৩২৩ অ্যাডহক শিক্ষকদের বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে শিক্ষক অথবা অশিক্ষক পদে সরকারি চাকরি নিশ্চিত করা সংক্রান্ত বেসরকারি প্রস্তাব আনেন সিপিএম বিধায়ক প্রভাত চৌধুরী৷ তাঁর প্রস্তাবের বিরোধিতা করে ট্রেজারি বেঞ্চের সদস্য সুশান্ত চৌধুরী এবং মুখ্য সচেতক কল্যাণী রায়ও সংশোধনী প্রস্তাব আনেন৷ আইনসঙ্গতভাবে চাকরিচ্যুত ১০৩২৩ অ্যাডহক শিক্ষকের চাকরির ব্যবস্থা করার জন্য প্রস্তাব আনেন তাঁরা৷


এই দুটি প্রস্তাবের ওপর বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে ট্রেজারি বেঞ্চের সদস্য সুশান্ত চৌধুরী বলেন, ত্রিপুরা সরকার চাকরিচ্যুত ১০৩২৩ জন অ্যাডহক শিক্ষকের প্রতি যথেষ্ট সহানুভূতিশীল৷ কিন্তু, আইনবিরুদ্ধ কোনও পদক্ষেপ নেবে না সরকার৷ তাঁর কথায়, পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারের পাপের বোঝা এখন আমাদের বইতে হচ্ছে৷ কারণ, গৌহাটি হাইকোর্টের রায় মেনে ৩৮৪ জন চাকরি প্রত্যাশীর চাকরি দেওয়া হলে আজ ১০৩২৩ চাকরিচ্যুত শিক্ষকরা বিড়ম্বনার মধ্যে পড়তেন না৷ তাঁর বক্তব্য, পূর্বতন সরকার নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকেই চাকরি দিয়েছে৷ তাই হাইকোর্টে মামলা হয়েছে৷ তাতে নিয়োগ নীতিতে ত্রুটির জন্য ১০৩২৩ জন শিক্ষকের চাকরি বাতিল হয়েছে৷ সুপ্রিম কোর্টও ওই রায় বহাল রেখেছে৷ তবুও বর্তমান সরকার ২০২০ সালের মার্চ ৩১ পর্যন্ত তাঁদের অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য তদ্বির করেছে৷ তাতে সুপ্রিম কোর্ট অনুমতি দিয়েছে৷


কিন্তু সিপিএম বিধায়ক প্রভাত চৌধুরী তাঁর প্রস্তাবের সপক্ষে বলেন, সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট ১২০০০ অশিক্ষক পদ বাতিল করেনি৷ বরং ওই পদে চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের নিয়োগের সুযোগ করে দিয়েছে৷ তাঁর কথায়, ত্রিপুরা সরকারের সদিচ্ছা থাকলেই ওই ১২০০০ অশিক্ষক পদে চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের মধ্যে যাঁদের যোগ্যতা রয়েছে তাঁদের নিয়োগ করতে পারবে৷ কিন্তু আপনাদের চিন্তাধারা তাঁদের চাকরিতে কোপ পড়বে বলেই মনে হচ্ছে, তোপ দাগেন তিনি৷


এ-বিষয়ে সংশোধনীর পক্ষে মুখ্য সচেতকও পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে বলেন, সময় মতো ওই আবেদনকারীদের চাকরি দেওয়া হলে আজ এই দিন দেখতে হত না৷ ১০৩২৩ শিক্ষকের চাকরিও বাতিল হত না৷ তাতে, প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী তথা বর্তমান সিপিএম বিধায়ক তপন চক্রবর্তী বলেন, বিজেপি-র ভিজন ডকুমেন্টে সাফ বলা হয়েছে, মানবিকতার দৃষ্টিভঙ্গিতে ১০৩২৩ চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের সমস্যার সমাধান করা হবে৷ তিনি বলেন, পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকার ১২০০০ নতুন পদ সৃষ্টি করে রেখেছে৷ তাতে অর্থ দফতরেরও অনুমোদন রয়েছে৷ সাথে তিনি যোগ করেন, সুপ্রিম কোর্টও ওই পদ বাতিল করেনি৷ তাই, চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের ওই পদে নিয়োগের মাধ্যমে তাঁদের ভবিষ্যত নিরাপত্তা সম্ভব হবে৷ তাঁর দাবি, নতুনভাবে কোনও পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন হবে না৷ ট্রেজারি বেঞ্চের সদস্য সুদীপ রায়বর্মন বলেন, সংবিধানের ধারা ১৬ মোতাবেক ওই পদক্ষেপ বেআইনি৷ কারণ একাংশকে বঞ্চিত করে অন্য অংশকে সুযোগ সুবিধা দেওয়া সংবিধান বিরোধী৷ বরং সরকার পক্ষ এবং বিরোধীরা একত্রিত হয়ে চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের জন্য পথ খুঁজে বের করা উচিত বলে তিনি মনে করেন তিনি৷


এদিন শিক্ষামন্ত্রী রতনলাল নাথ বলেন, নিয়ম অনুযায়ী ১২০০০ পদ অবলুপ্ত হয়ে গেছে৷ কারণ, নতুন পদ সৃষ্টির এক বছরের মধ্যে নিয়োগ করা না হলে তা অবলুপ্ত হয়ে যায়৷ তা বিরোধীদের অজানা নয়, কটাক্ষ করে বলেন তিনি৷ তবে, চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের প্রতি আমরাও সহানুভূতিশীল৷ তাই, আইনের গণ্ডির ভেতরে তাঁদের পথ খুঁজে বের করার চেষ্টা হবে, আশ্বাস দিয়ে বলেন তিনি৷ এতে বিরোধী দলনেতা দুটি প্রস্তাব প্রত্যাহারের আবেদন জানান৷ ট্রেজারি বেঞ্চও তাতে সম্মত হয়৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *