গৃহবধূকে পুড়িয়ে হত্যা, স্বামীসহ পাঁচজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২০ আগস্ট৷৷ গৃহবধূকে পুড়িয়ে মারার অপরাধে স্বামী-সহ পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছে আদালত৷ সাথে ভারতীয় ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় যাবজ্জীবনের পাশাপাশি দশ হাজার টাকা এবং ৪৯৮ ধারায় পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করেছে আদালত৷


প্রসঙ্গত, সিপাহিজলা জেলার বিশালগড় মহকুমার নাড়াউড়া গ্রামে গৃহবধূকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িত পাঁচজনকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে আদালত৷ মৃতার স্বামী মদন দেবনাথ, শাশুড়ি লক্ষ্মী দেবনাথ, দেবর গোপাল দেবনাথ, অরুণ দেবনাথ ও রতন দেবনাথকে সাজা শুনিয়েছে আদালত৷


ঘটনার বিবরণে প্রকাশ, ২০০৪ সালের জুলাই মাসে নাড়াউড়া গ্রামের কাজলকান্তি দেবনাথের মেয়ে বীনারানি দেবনাথের সাথে সামাজিক প্রথা মেনে বিয়ে হয়েছিল একই গ্রামের বাসিন্দা মদন দেবনাথের৷ বিয়েতে পাত্র পক্ষের দাবি অনুযায়ী নগদ টাকা, সোনা, গয়না, আসবাবপত্র সবকিছুই মিটিয়ে দিয়েছিল পাত্রীপক্ষ৷ বিয়ের পর কিছুদিন তাদের দাম্পত্য জীবন সুখে-স্বাচ্ছন্দ্যে কাটলেও তা স্থায়ী হয়নি৷ অভিযোগ, গৃহবধূ বীনারানি দেবনাথকে বাপের বাড়ি থেকে নগদ টাকা এনে দেওয়ার জন্য ক্রমাগত চাপ সৃষ্টি করেছিলেন স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির সদস্যরা৷ ফলে, সাধ্যমতো কিছু টাকা মিটিয়েও দিয়েছিলেন মৃতার বাবা কাজনকান্তি দেবনাথ৷


এদিকে, গৃহবধূ বীনার গায়ের রং কালো ছিল৷ এ-নিয়ে প্রায় সময়ই নানা বাকবিতণ্ডা হত৷ বীনার শ্বশুরবাড়ির তরফ থেকে অপবাদ দেওয়া হয়েছিল তিনি কখনও মা হতে পারবেন না৷ কিন্তু বিয়ের পাঁচ বছর পর বীনা এক কন্যা সন্তানের জন্ম দেন৷ তাতে পরিস্থিতি আরও চরম আকার ধারণ করে৷ কন্যাসন্তান জন্ম দেওয়ার তাঁর উপর নির্যাতনের মাত্রা আরও বেড়ে গিয়েছিল৷


অভিযোগ, এরই মধ্যে স্বামী মদন দেবনাথ পরকীয়া প্রেমে আসক্ত হয়ে পড়েন৷ ফলে, তখন বীনার উপর নির্যাতনের মাত্রা আরও বেড়ে যায়৷ এরই শেষ পরিণতি ঘটে ২০১২ সালের ১২ ডিসেম্বর৷ ওই গৃহবধূকে তাঁর স্বামী, শাশুড়ি এবং তিন দেবর মিলে গায়ে কেরোসিন ঢেলে হত্যার চেষ্টা করেন৷ অগ্ণিদগ্দ অবস্থায় তাঁকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল৷ কিন্তু, তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে চিকিৎসকরা তাঁকে আগরতলার জিবি হাসপাতালে স্থানান্তর করেছিলেন৷ কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি৷ ২০১৩ সালের ৩ জানুয়ারি তাঁর মৃত্যু হয়৷


এই ঘটনায় মৃতার বাবা কাজলকান্তি দেবনাথ বিশালগড় থানায় একটি সুনির্দিষ্ট মামলা দায়ের করেন৷ বিশালগড় থানার পুলিশ ভারতীয় ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৪৯৮/৩০২/৩৪ ধারায় মামলা নিয়ে তদন্ত শুরু করেন৷ তদন্ত শেষে পুলিশ আদালতে চার্জশিট দাখিল করে৷ এই মামলায় ১৬ জন সাক্ষী দেন৷ মঙ্গলবার আদালত এই মামলায় পাঁচজনকে দোষী সাব্যস্ত করেন৷ তাদেরকে ভারতীয় ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৪৯৮ ধারায় ৩ বছরের জেল ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরও তিন মাসের জেল হাজতের নির্দেশ দেয় আদালত৷ এছাড়া ৩০২ ধারায় তাদেরকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা আর্থিক জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয়মাসের কারাদণ্ডের নির্দেশ দেয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *