
নিজস্ব প্রতিনিধি, চুড়াইবাড়ি, ২৩ জুলাই৷৷ উত্তর ত্রিপুরার ধর্মনগর থানাধীন নদিয়াপুর রেলস্টেশনে হানা দিয়ে প্রায় দু-কোটি টাকা মূল্যের ৪০ হাজার নেশার ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করেছে পুলিশ৷ এর সঙ্গে আটক করা হয়েছে অসমের করিমগঞ্জ জেলার পাথারকান্দি থানাধীন আসিমগঞ্জের বাসিন্দা এক পাচারকারীকে৷ ধৃতকে আসিমগঞ্জের জনৈক আব্দুল খালেকের বছর ৩২-এর ছেলে একলাস উদ্দিন বলে পরিচয় পাওয়া গেছে৷ একই দিনে এই একই জেলার দশদা কাঞ্চনপুরের দামছড়ায় প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা মূল্যের ১৫২ গ্রাম ব্রাউন সুগার বজেয়াপ্ত করেছে খেদাছড়া থানার পুলিশ৷ এর সঙ্গে আটক করা হয়েছে কাননরয় রিয়াং (৫০) নামের এক মহিলাকে৷
উত্তর ত্রিপুরার পুলিশ সুপার ভানুপুদ চক্রবর্তী জানান, মঙ্গলবার শিলচর (অসম)-ধর্মনগর (উত্তর ত্রিপুরা) প্যাসেঞ্জার ট্রেনে করে নেশা সামগ্রী নিয়ে প্রবেশের আগাম খবর পেয়ে দলবল নিয়ে সাদা পোশাকে তিনি নিজে (পুলিশ সুপার ভানুপদ চক্রবর্তী) জেলার নদিয়াপুর রেলস্টেশনে ওত পেতে বসেছিলেন৷ বেলা একটা নাগাদ যাত্রীবাহী ট্রেনটি নদিয়াপুর স্টেশনে যথারীতি দাঁড়ালে গাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়৷ তালাশি অভিযানে একটি ব্যাগ-সহ একলাসকে পাকড়াও করেন তাঁরা৷ তার ব্যাগ থেকে বেশ কয়েকটি প্যাকেট থেকে মোট ৪০ হাজারটি ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়৷ এগুলোর বাজারমূল্য কমপক্ষে দুই কোটি টাকা বলে জানান তিনি৷
পুলিশ সুপার চক্রবর্তী জানান, জেরায় ধৃত একলাস নাকি বলেছে, সে এ লাইনেপ্রথম এসেছে৷ তাকে অন্যরা কমিশনের বিনিময়ে মালগুলো ধর্মনগরে পৌঁছে দিতে বলেছিল৷ কিন্তু ধর্মনগরে কড়া চেকিং থাকায় সে রুট বদল করে নদিয়াপুরেই ট্রেন থেকে নেমে যায়৷ কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি, ধরা পড়ে যায়৷
একলাসের বিরুদ্ধে নারকোটিক ড্রাগস অ্যান্ড সাইকোট্রপিক সাবসট্যান্সেস অ্যাক্ট, ১৯৮৫-এর ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে৷ আগামীকাল বুধবার তাকে ধর্মনগরের মুখ্য বিচারবিভাগীয় আদালতে পেশ করা হবে, জানান পুলিশ সুপার চক্রবর্তী৷
এ প্রসঙ্গে, ওয়াকিবহাল মহলের অভিযোগ, দক্ষিণ অসমের বরাক উপত্যকার বিভিন্ন এলাকায় এবং ত্রিপুরাকে করিডর করে প্রতিবেশী বাংলাদেশে ব্যাপক হারে নেশা জাতীয় সামগ্রী পাচার করা হচ্ছে৷ নেশার বিরুদ্ধে ত্রিপুরা পুলিশ অভিযান চালিয়ে একের পর এক সাফল্য পাচ্ছে আর অসম পুলিশ নাকে তেল দিয়ে দিব্যি ঘুমোসচ্ছে৷
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে মানসিক বৈকল্য সৃষ্টিকারী গোলাপি রঙের ভয়ানক মাদক ট্যাবলেট ইয়াবা (ট্রেড মার্ক ডব্লিউটি) মূলত তৈরি হয় মায়ানমার, ইন্দোনেশিয়া এবং চিনে৷ মেথামফেটামিন এবং ক্যাফিনের মিশ্রণে৷ নেশার ভয়ানক ট্যাবলেটগুলো দালাল মারফত হাত বদল হয়ে মায়ানমার হয়ে মণিপুর, মিজোরাম থেকে বরাকে প্রবেশের পর বিভিন্ন স্থানে পাচার হচ্ছে৷ গোটা বরাক উপত্যকার মধ্যে এ-ধরনের কারবারের সঙ্গে ড়িত বৃহত্তর পাথারকান্দির একাংশ যুবক৷
উত্তর ত্রিপুরার পুলিশ সুপার ভানুপদ চক্রবর্তী এ তথ্য দিয়ে জানান, কাননবয় রিয়াং দশটি সাবানের কেসে পুরে ব্রাউন সুগারগুলি পাচারের জন্য নিয়ে যাচ্ছিল৷ গোপন তথ্যের ভিত্তিতে তাকে আটক করে একটি ব্যাগ থেকে সাবান কেসগুলি বের করে সেগুলি থেকে ১৫২ গ্রাম ব্রাউন সুগার উদ্ধার করা হয়েছে৷ তাছাড়া মহিলার কাছ থেকে নগদ ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকাও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বলে জানান পুলিশ সুপার৷ তিনি জানান, উদ্ধারকৃত ব্রাউন সুগারগুলির বাজারমূল্য প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা হবে৷
পুলিশ সুপার ভানুপদ চক্রবর্তী জানান, কাননবয়ের বিরুদ্ধে নারকোটিক ড্রাগস অ্যান্ড সাইকোট্রপিক সাবসট্যান্সেস অ্যাক্ট, ১৯৮৫ অনুযায়ী মামলা রুজু করা হয়েছে৷ আগামীকাল তাকে ধর্মনগরের মুখ্য বিচারবিভাগীয় আদালতে পেশ করা হবে৷ এছাড়া বাজেয়াপ্তকৃত ব্রাউন সুগারগুলি আগরতলার ফরনসিক ল্যাবে পাঠিয়ে সেগুলির পরীক্ষা করানো হবে৷
তিনি আরও জানান, ধৃত মহিলার স্বামীও ড্রাগস কারবারি৷ সে অনুরূপ ড্রাগস পাচার মামলায় বর্তমানে মিজোরামের কারাগারে বন্দি৷

