কলকাতা,১৭ জুন (হি.স): অবশেষে জট কাটল। কর্মবিরতি প্রত্যাহার করলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। সোমবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকের পর জুনিয়র ডাক্তাররা জিবি বৈঠকের পর এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দাঁড়িয়ে একথাই ঘোষণা করলেন তাঁরা। কোনও ঘটনা ঘটলেই কড়া ব্যবস্থা । মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণার পরেই কার্যত ধর্মঘট তোলার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন নবান্নের বৈঠকে হাজির জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধিরা । আর মুখ্যমন্ত্রীও জানিয়ে দিয়েছেন, ধর্মঘট উঠে গেলেই বিক্ষোভাকারীদের দাবি মতো তিনি আহত চিকিৎসক পরিবহ মুখোপাধ্যায়কে দেখতে যাবেন । মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আলোচনা খুব ফলপ্রসূ হয়েছে । আমি খুশি আমার জুনিয়র ডাক্তাররা ছুটে এসেছেন । জুনিয়র ডাক্তার ছাড়া সিনিয়র ডাক্তাররা সমস্যা পড়ি । আমরাও সমস্যায় পড়ি । ভালো থাকুন’ । মিটিং শেষে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন পরিবহকে দেখতে যাবেন। ছাত্ররা কথা রাখার ইঙ্গিত দিতেই ইন্সটিটিউট অফ নিউরোসায়েন্সের দিকে ছুটলেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন স্বাস্থ্য দফতরের অধিকর্তারাও।
অবশেষে কাটল অচলাবস্থা। দাবি মেনে নেওয়ায় মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে কর্মবিরতি প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করলেন চিকিৎসকরা। ৭দিন পর কাটল অচলাবস্থা। অবশেষে আন্দোলন প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করলেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ইতিবাচক বৈঠকের ফলশ্রুতি হিসেবে আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা করেছেন চিকিৎসকরা। তবে, তাঁরা জানিয়েছেন, আপাতত তাঁরা সরকারকে সময় দিচ্ছেন তাদের দাবি পূরণের জন্য। সেই সঙ্গে সকলকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন, আন্দোলনে পাশে থাকার জন্য।
এদিন মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্যমন্ত্রী জানান, ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে, সে দিকে নজর রাখব আমরা । আর যদি ঘটেও থাকে, তা হলে সঙ্গে সঙ্গে কড়া পদক্ষেপ নিতে হবে । মুখ্যমন্ত্রী নিজেও নিগ্রহের হাত থেকে চিকিৎসকদের বাঁচাতে বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেন তাঁর সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের । গোটা রাজ্যের জন্য একটি জরুরিভিত্তিক নম্বর এবং ই-মেল আইডি চালু করতে ডিজি বীরেন্দ্রকে নির্দেশ দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জুনিয়র ডাক্তাররা দাবি তোলেন, নিরাপত্তা সংক্রান্ত ব্যাপারে পুলিশ পদক্ষেপ না করলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে । তাতে সম্মতি জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ।
সোমবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করেন জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধিরা । সেখানে যাবতীয় দাবি, দাওয়া অভিযোগ, অনুযোগ যোগ তুলে ধরেন তাঁরা । তা নিয়ে সদর্থক আলোচনা এবং মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া পর কর্মবিরতি প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করেন জুনিয়র ডাক্তাররা । সরকারি হাসপাতালে চিকিত্সকদের নিরাপত্তা সহ ১২ দফা দাবি নিয়ে সোমবার নবান্নে যায় ডাক্তারদের প্রতিনিধি দল । শুরুতে বিকেল ৩টেয় আলোচনা শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নানান জটিলতা, টানাপড়েন মিটিয়ে তা শুরু হয় ঘণ্টাখানেক দেরিতে । সেখানে একে একে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে নিজেদের দাবি জানান জুনিয়র ডাক্তাররা ।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আশ্বস্ত হয়েছি । ডাক্তারকে ভগবানের মত মানি । তোমাদের দাবিটা সঠিক । আমি নির্দেশ দিয়ে দিচ্ছি । আমি তো সব করতে পারি না । সেটা প্রয়োগ করতে হবে । এরকম ঘটনা যেন না ঘটে দেখতে হবে । আর ঘটলেই সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিতে হবে । তোমরা যা বললে সব করব । আমরা বাচ্চা ভাইটি ভালো হয়ে উঠুক । তোমরা করছ না বলে দেখতে যেতে পারছি না । আন্দোলনকারীদের তরফে একজন বলেন, ‘আমরা কারও পদবি দেখে চিকিৎসা করি না’ । এর জবাবে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘করবে না । করাটা উচিত নয়’ ।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ডাক্তারকে আমরা ভগবানের মতো শ্রদ্ধা করি । আজ অনেক লোক সত্যিই সমস্যায় পড়েছে । পুলিশকেও বলব ব্যবস্থা নিন । সব পাবলিক খারাপ, সব পেশেন্ট খারাপ ঠিক নয় । চিকিৎসক, ডাক্তার, ইন্টার্নদের নিয়ে আমরা সবকিছু দেখবে । যদি কিছু ঘটে সঙ্গে সঙ্গে স্ট্রং অ্যাকশন নেওয়া হবে’ ।
উত্তরবঙ্গে মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নিয়ে এক জুনিয়র ডাক্তার বলেন, সেখানে সিটি স্ক্যান করার ব্যবস্থা নেই । মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দেন, ‘উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজে সিটি স্ক্যানের ব্যবস্থা করা হোক । মেডিকেল কলেজ থেকে অটো স্ট্যান্ড, টোটো স্ট্যান্ড ওঠাতে হবে’ । এক আন্দোলনকারী বলেন, ‘প্রতিটি পয়েন্টের ডেডলাইন বেঁধে দিন’ । এনিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি তো ডাক্তারদের সঙ্গে মিটিং করি । ডাক্তারদের মিটিংয়ে জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধিত্ব থাকবে’ । এক আন্দোলনকারী বলেন, ‘আপনি স্ট্রং ওযার্ড বলুন । এনিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি স্ট্রং ওয়ার্ড ব্যবহার করেছি । চারবার বলেছি । তোমরা কী বলতে হবে বল, বলব’ । তিনি আরও বলেন, ‘মূল্যবোধ ও জনসংযোগের জন্য বিশেষ পাঠ্যক্রম হবে’ ।
বৈঠকের শুরুতেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এত কষ্ট করে নবান্নে আসার জন্য তোমাদের অসংখ্য ধন্যবাদ । ১২ দফা দাবিকে এদিন প্রস্তাব বলে তুলে ধরে জুনিয়ার চিকিৎসকরা দাবি তোলেন রোগীর পরিজনদের হাতে গুরুতর আহত ডাক্তার পরিবহ মুখোপাধ্যায়কে মুখ্যমন্ত্রী দেখতে যান ।
মুখ্যমন্ত্রী জানান, কোনও জুনিয়র চিকিৎসকের বিরুদ্ধে কোনও মামলা করা হয়নি । তিনি বলেন, ‘তোমরা ছোটছোট ছেলেমেয়ে, তোমার আমাদের ভবিষ্যৎ। কেন কেস করতে যাব তোমাদের বিরুদ্ধে’? তিনি জুনিয়র ডাক্তারদের তাদের বক্তব্য তুলে ধরতে বলেন ।
তখন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র ডাক্তার অর্চিষ্মান ভট্টাচার্য বলেন, ‘ভয়ের মধ্যে কাজ করতে হচ্ছে আমাদের । বাধ্য হয়ে আন্দোলনে নেমেছি । আমরা চেষ্টা করেছি আপনার কাছে পৌঁছতে । কিন্তু আমাদের বার্তা হয়ত আপনার কাছে পৌঁছয়নি । আমরা খুব তাড়াতাড়ি কাজে ফিরতে চাই । এই অচলাবস্থা চলুক তা কেউই চাই না আমরা । সাধারণ মানুষ অনেক ক্ষেত্রেই কষ্ট পান । অত্যাচারিত হতে হতে আমরাও নিরুপায়’ ।
জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধি বলেন, ‘আপনাদের প্রতি আমাদের পূর্ণ আস্থা রয়েছে । আপনাদের সদিচ্ছার কোনও অভাব নেই । আমাদের আর্জি, অনুরোধ এদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হলে স্পর্ধা কমে যায় । পরিবহকে দেখতে আসুন । আমাদের কাছে ১২ দফা প্রস্তাব রয়েছে । তা কী বলতে পারি’ ?
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ওরা যদি চায়, তাহলে দেখানো হোক যারা সেদিন জুনিয়র ডাক্তারদের মারধর করল তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে । কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে । ডাক্তারদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি’ ।
স্বাস্থ্যসচিব রাজীব সিনহা বলেন, ‘অভিযুক্তদের নাম প্রকাশের কথা বলছে চিকিৎসকরা’ । সেসময় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কী অ্যাকশন নিয়েছ ? সেটা জানিয়ে দাও ডাক্তারদের । ওদের বিরুদ্ধে স্ট্রং কেস দেওয়া হয়েছে । জামিন মঞ্জুরও হয়নি । ঘটনার তদন্তও শুরু হয়েছে ।
কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা বলেন, ‘৯০০ পুলিশ দেওয়া হচ্ছে কলকাতার হাসপাতাল গুলোতে ’ । তখন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘একজন নোডাল অফিসারের ব্যবস্থা করে দাও । জেলায় দেখবে জেলা পুলিশ’ ।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ইমারজেন্সির সামনে একটা কলাপসিবল গেট লাগিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করব । রোগীর দুই পরিজন ছাড়া কাউকে জরুরি বিভাগে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না । আমি চাই না এসবে দেরি হোক । আর একটা কথা বলব, কোন রোগী কত অসুস্থ, কোন পেশেন্ট মারা গেছে, এই কথা সবসময় ঠিক ভাবে হয় না । কমিউনিকেশনের অভাব । রোগীর পরিবার এবং চিকিৎসকদের মধ্যে সমন্বয় সাধনের জন্য সরকারি হাসপাতালে জনসংযোগ আধিকারিক নিয়োগের প্রস্তাব দেন মুখ্যমন্ত্রী । বলেন, পাবলিক রিলেশন করার জন্য তিনজনকে রাখা হোক । পেশেন্ট পার্টিকে বোঝানোর জন্য তাঁরা থাকবেন’ । এক সপ্তাহের মধ্য চিকিৎসকদের সব দাবি মেনে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন মুখ্যমন্ত্রী ।
আন্দোলনকারীদের তরফে ১২ দফা দাবি পেশ করা হয় সরকারের কাছে । সেই দাবি একে একে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে বিস্তারিত ভাবে বলেন জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধিরা । মুখ্যমন্ত্রী নিজেও নিগ্রহের হাত থেকে ডাক্তারদের বাঁচাতে বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেন তাঁর সংশ্লিষ্ট আধিকারীকদের ।
কল্যানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এক জুনিয়র ডাক্তার বলেন, পরিকাঠামোর উন্নতি এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রত্যেক হাসাপাতালে একটি যৌথ কমিটি গঠন করা হোক । রোগী কল্যাণ সমিতি একাধিক জায়গায় কার্যকরী নয় । তাই, রোগী কল্যাণ সমিতিতে চিকিৎসকদের প্রতিনিধি নেওয়ার প্রস্তাব মুখ্যমন্ত্রীর । মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘জেলায় একটা করে হস্টেল করে দাও । রোগী কল্যাণ কমিটিতে একজন করে চিকিৎসক প্রতিনিধি রাখতে হবে । ওটা কার্যকরী করতে হবে । পুলিশের প্রতিনিধি রাখতে হবে’ ।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা কেউ চাইনা হাসপাতালে চিকিৎসকদের উপর হামলা হোক । তবু, কিছু অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটেই যায় । এটা প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য, আরও জনসেচতনতা প্রয়োজন ।
আন্দোলনকারীদের বক্তব্য, বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতারা অনেক সময় হাসপাতালে এসে অনেক কথা বলেন । মুখ্যমন্ত্রীও এই কথা মেনে নেন । তিনি বলেন, ‘আমি এটা দেখেছি’ । তিনি জানান, একটা সার্কুলার দিয়ে দেওয়া হোক । যে যাই হোক এভাবে হাসপাতালে যাওয়া যাবে না । দরকার হলে জনজাগরণ করা হোক’ । জবাবে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘একটা জেনারেল সার্কুলার করা যেতে পারে। শৃঙ্খলা মেনে না চললে, তাদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হবে’।
জুনিয়র ডাক্তাররা জানান, ‘অনেক সরকারি হাসপাতালে গেট নেই । প্রচুর রেফারেল রোগী । চাপ সামলানো মুশকিল । অনেক সময়ই উত্তেজনা দেখা দেয় । রাজনৈতিক দলের নেতারা ব্যাপক ঝামেলা করেন । আমাদের পক্ষে সামাল দেওয়া সম্ভব হয় না । আপনার দিকে তাকিয়ে রয়েছি’ ।
জুনিয়র ডাক্তারদেরদের পক্ষে জানানো হয়, ‘হাসপাতালের পরিকাঠামো ভালো না হলে আমাদের ভোগান্তি হয় । আমরা ভগবান হতে চাই না । আমাদের ভালো পরিকাঠামো চাই । রোগীর আত্মীয়দের অভিযোগ জানানোর ব্যবস্থা ভালো হোক । বেসরকারি নিরাপত্ত রক্ষীরা অনেক সময়েই পরিস্থিতি সামলাতে পারে না । পুলিশ চিকিৎসকদের উপরে আক্রমণ হচ্ছে দেখেও তৎপর হয় না’ ।
এক আন্দোলনকারী বলেন, ‘হামলা হলে যেন কোনওরকম রাখঢাক না করা হয় । অর্থাৎ, জিরো টলারেন্স নীতি চাই’ । এর উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘তোমরা কী ভাবো আমরা চাই, এই ধরনের ঘটনা ঘটুক ? স্বতঃস্ফূর্তভাবে এধরনের ঘটনা ঘটে যায় । আমরা অনুরোধ করছি, আইন হাতে তুলে নিয়ো না । কিছু জিনিস ঘটে যায় যা আমরা চাই না । এদের সবাইকে বোঝাতে হবে । সামাজিক কর্তব্য আমাদের’ । নীলরতন সরকার হাসপাতালের ঘটনা নিয়ে পুলিশ কমিশনারকে মমতা বলেন, ‘পুলিশকে বলো অ্যাকশন নিতে’ ।
এক আন্দোলনকারী বলেন, ‘আরও জোরদার আইন করতে হবে এই ঘটনা আটকানোর জন্য’ । এর উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘তোমরা কি মনে কর, আমরা কোনও ইনসিডেন্ট চাই ? দুর্ঘটনা হলে স্থানীয়রা এসে পুলিশকে এসে মেরে দেয় । এটা স্বতঃস্ফূর্ত । কাল তোমাদের গায়ে কেউ হাত দেবে । সেটা আমরা চাইনি । তোমার কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে গ্রিভ্যান্সে সেলে যাও । নিজেদের হাতে আইন তুলে নাও । এটা পুরোপুরি কন্ট্রোল করা যায় না । ০ দশমিক ১ শতাংশ এই ঘটনা ঘটে । এটা সবাইকে বোঝাই সবাই মিলে । বিজ্ঞাপন দেওয়ার কথা বলেছি’ ।
সেই রাতের এনআরএস হাসপাতালের ঘটনা বর্ণনা করে পুলিশের বিরুদ্ধে নিস্ক্রিয়তার অভিযোগ তোলেন জুনিয়র ডাক্তাররা । তা নিয়ে বৈঠকে উপস্থিত কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা এবং ডিজি বীরেন্দ্র-র উদ্দেশে মমতা বলেন, নিস্ক্রিয় থাকলে হবে না । এই ধরনের ঘটনায় দ্রুত পদক্ষেপ করতে হবে । তিনি বলেন, ৩৪ বছর পর এ রাজ্যে অনেক উন্নতি হয়েছে । আমরা ন’টা নতুন মেডিক্যাল কলেজ করেছি । প্রত্যেক জেলায় এইচডিইউ, আইসিইউ করে দিয়েছি । মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ৬০০ কোটি থেকে ৯ হাজার ৬০০ কোটি বাজেট করা হয়েছে । টাকাটাও জোগাড় করতে হয় ।
সেদিন এনআরএস হাসপাতালে জুনিয়র ডাক্তার পরিবহ মুখ্যোপাধ্যায়কে দেখতে যাবার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দাবি তোলেন জুনিয়র ডাক্তাররা । এনআরএস হাসপাতালে কেন মুখ্যমন্ত্রী গেলেন না বলে প্রশ্ন তোলেন জুনিয়র ডাক্তাররা ।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি কখন, কোথায় কীভাবে যাবে সেটা আমার ওপর ছেড়ে দাও । তোমরাও ভালো ছেলেমেয়ে । কাজও কর । কিছু লোক চেষ্টা করছে, তোমাদের রাগানোর । আমি প্রথম শুনেই চন্দ্রিমাকে পাঠাই । বলেছিলাম, এনআরএস হাসপাতালের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে কথা বলি । কিন্তু, তোমরা কথা বলোনি । পরিবহর পরিবারের সঙ্গে গিয়ে রাজীব কথা বলে এসেছেন’ ।
এক আন্দোলনকারী বলেন, ‘ মেডিকেল কাউন্সিলের ভিজ়িটের আগে হাসপাতাল সাজিয়ে গুজিয়ে রাখা হয় । কিন্তু, বজায় রাখা হয় না । আপনি নিরাপত্তা বাহিনী অনেক দিয়েছেন । কিন্তু, সেটা বজায় রাখা হচ্ছে না । সেটায় খামতি হলেই তার রেশ আমাদের উপর আসছে । গ্রিভ্যান্স রিড্রেসাল দেখা যায় না । আমাদের বিরুদ্ধে রোগীর অভিযোগ থাকতেই পারে । তাঁর এটা অধিকার থাকতে পারে । তাই গ্রিভ্যান্স রিড্রেসাল সেলে রোগী ও চিকিৎসক সবাইকে দেখা হবে । একজন ইন্টার্নকে রোগী পরিজনদের সামনে দাঁড়িয়ে সিপিআর করতে করতে যখন আমাদের উপর যে চাপ তৈরি হয়, তা বোঝানো যাবে না । আমাদের সাজেশন, গ্রিভ্যান্স রিড্রেসাল সেল করা হোক’।
শেষে মুখ্যমন্ত্রী জানান, আলোচনা ফলপ্রসু হয়েছে । তোমরা আন্দোলন তুলে নাও । জুনিয়র ডাক্তাররা জানান, বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে তা লিখিত ভাবে লিপিবদ্ধ করে দেওয়া হোক । তাতে মুখ্যমন্ত্রী রাজি হয়ে যান । তিনি জানান, স্বাস্থ্য সচিব রাজীব সিনহার সঙ্গে গিয়ে ২ জন আন্দোলনকারী ওই মিনিটস তৈরী করুন । তখন ডাক্তাররা হাত জোর করে অনুরোধ করেন, তিনি যেন পরিবহকে দেখতে যান । মুখ্যমন্ত্রী বলেন তোমরা আন্দোলন তুলছ না বলেই আমিও দেখতে যেতে পারছি না । এখন জুনিয়র ডাক্তাররা বলেন তারা আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু এনআরএস হাসপাতালে ফিরে গিয়ে জেনারেল বডির মিটিং করেই আমাদের সিদ্ধান্ত জনাব ।
দীর্ঘ টানাপোড়েনের পর রাজ্য সরকারের সঙ্গে জুনিয়র ডাক্তারের সঙ্গে বৈঠক হয় আজ । বিকেল চারটেয় বৈঠক কক্ষে আসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । নবান্নে মন্ত্রিসভার বৈঠকের ঘরে শুরু হয় বৈঠক । বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও প্রশাসনের পক্ষে ছিলেন স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা প্রদীপ মিত্র । মুখ্য সচিব মলয় দে, স্বরাষ্ট্রসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্য পুলিশের ডিজি বীরেন্দ্র, কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা, এডিজি আইনশৃঙ্খলা জ্যানবন্ত সিং, স্বাস্থ্য সচিব রাজীব সিনহা । ছিলেন, রাজ্যের নিরাপত্তা উপদেষ্টা সুরজিত কর পুরকায়স্থ, রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য । মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ছিলেন প্রবীণ চিকিৎসক সুকুমার মুখোপাধ্যায় ও অভিজিৎ চৌধুরী । অবশেষে জট কাটায় স্বস্তির নিশ্বাস দেখা যায় সব মহলে ।