মহিলা সংক্রান্ত অপরাধে উদ্বেগ বাড়ছে রাজ্যে

নিজস্ব প্রতিনিধি, উদয়পুর/আগরতলা, ৫ মে৷৷ রাজ্যে নারী সংক্রান্ত অপরাধের ঘটনায় গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন মহলে৷ গার্হস্থ্য হিংসার পাশাপাশি অন্যান্যন অপরাধের ঘটনাও মহিলাদের উপর ঘটছে৷ উদ্বেগের ও উৎকন্ঠার বিষয় হচ্ছে মহিলাদের অধিকার সুরক্ষার জন্য গঠিত মহিলা কমিশনও আজ আক্রান্ত৷ অপরাধের তদন্ত করতে গিয়ে এবং নির্যাতিতার খোঁজ খবর নিতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন খোদ মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন বর্ণালী গোস্বামী৷ অল্পেতে তিনি প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন৷ কাকড়াবনে স্ত্রীকে গলা টিপে খুন করেছে স্বামী৷ শুধু তাই নয় স্ত্রীকে খুন করে থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করে খুনের ঘটনার কবুল করেছে ঘাতক স্বামী৷


সংবাদে প্রকাশ, পরকীয়া সন্দেহে স্ত্রীকে গলা টিপে খুন করেছেন স্বামী ৷ ঘটনা গোমতি জেলার কাকড়াবন থানাধীন পালাটানা এলাকায় ঘটেছে৷ রবিবার সকালে নারায়ণ দাস তাঁর স্ত্রী রিংকু দাস (২৮)-কে শাড়ির আঁচল দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে খুন করেছেন৷ স্ত্রীকে খুন করে নারায়ণ থানায় আত্মসমর্পণ করেছেন৷
কাকড়াবন থানার পুলিশ জানিয়েছে, আজ সকাল দশটা নাগাদ পালাটানা এলাকায় এক গৃহবধূ রিংকু দাস স্বামীর হাতেই খুন হয়েছেন৷ স্ত্রীকে খুন করার পর স্বামী নারায়ণ দাস থানায় এসে আত্মসমর্পণ করেছে৷ পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মৃতদেহ উদ্ধার করে গোমতি জেলা হাসপাতালে ময়না তদন্তের জন্য পাঠিয়েছে৷এদিকে, প্রয়াতার শ্বাশুড়ি মঞ্জুরানি দাস স্বীকার করেছেন, তাঁর ছেলেই নিজের স্ত্রীকে খুন করেছে৷ মঞ্জুরানি বলেন, নয় বছর আগে অমরপুর থাকছড়ার বাসিন্দা রিংকু দাসের সাথে সামাজিক রীতি মেনেই বিয়ে হয়েছিল৷ কিন্তু বিয়ের কয়েক বছর পর থেকে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অশান্তি শুরু হয়৷ তিনি বলেন, তাঁদের দুই কন্যাসন্তান রয়েছে৷ তবুও, নারায়ণ তাঁর স্ত্রী পরকীয়ায় আসক্ত সন্দেহ করতেন৷ মঞ্জু দাস বলেন, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝামেলা নিয়ে বহুবার সালিসি সভায় নিষ্পত্তি করা হয়েছে৷ কিন্তু আজ স্ত্রীকে খুন করে ফেলবে নারায়ণ তা কখনও ভাবিনি, বলেন তিনি৷


প্রতিবেশীদের বক্তব্য, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া প্রতিদিনের ঘটনা ছিল৷ সন্দেহের বশেই ঘটনাটি ঘটেছে বলে মনে করছেন প্রতিবেশীরা৷ পুলিশ জানিয়েছে, স্ত্রীকে খুন করে নারায়ণ তার শ্বশুড়বাড়িতে ফোন করে জানায় রিংকু অসুস্থ হয়ে পড়েছে৷ এর পরই তিনি বাড়ি থেকে বের হয়ে থানায় আত্মসমর্পণ করেন৷ এদিকে, তাদের দুই সন্তান প্রথমে ঘরের মেঝেতে মৃতদেহ পড়ে রয়েছে দেখতে পেয়েছিল৷ পুলিশের বক্তব্য, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, স্ত্রীর সাথে সম্পর্কে অবনতি এবং সন্দেহের পরিণতি এই ঘটনা৷ তবে তদন্ত চলছে, এখনই খুনের ঘটনায় নিশ্চিতভাবে কিছুই বলা সম্ভব নয়৷
এদিকে, নাবালিকা উদ্ধারে গিয়ে ত্রিপুরা মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন বর্ণালী গোস্বামী আক্রান্ত হয়েছেন৷ আজ বিকেলে উত্তর ত্রিপুরা জেলার পানিসাগর থানাধীন উপ্তাখালি খুদ্রাকান্তি এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে৷


এ-বিষয়ে ত্রিপুরা মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন বর্ণালী গোস্বামী জানিয়েছেন, গত ৩ মে কদমতলা থেকে এক নাবালিকাকে ফুঁসলিয়ে নিয়ে যায় পানিসাগর থানাধীন উপ্তাখালি খুদ্রাকান্তি এলাকার জনৈক যুবক৷ এর পর অনেক চেষ্টা করেও নাবালিকাকে ফেরত আনা যাচ্ছিল না৷ আজ দুপুরে ওই নাবালিকার মা প্রথমে ফোনে, পরে লিখিতভাবে অভিযোগ জানিয়েছেন৷ এই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশের সহায়তায় নাবালিকা উদ্ধারে গিয়েই আক্রান্ত হয়েছি, বলেন বর্ণালী গোস্বামী৷ তাঁর কথায়, অভিযুক্ত যুবকের বাড়িতে গিয়ে নাবালিকার বিষয়ে খোঁজ নিলে তাঁরা বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন৷ এর পর অনেকটা জোর করে ঘরে ঢুকে দেখি একটি ছোট কোঠার বাইরে তালা লাগানো৷ তখনই সন্দেহ হয় এবং তালা ভেঙে নাবালিকাকে উদ্ধার করি৷


বর্ণালী গোস্বামী বলেন, নাবালিকাকে বন্ধ ঘর থেকে বের করতেই মুহূর্তের মধ্যে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে৷ স্থানীয় মহিলারা হঠাৎ ঘরে ঢুকে আমার উপর চড়াও হন৷ তবে, পুলিশের সহযোগিতায় কোনও আঘাত পাইনি৷ তিনি জানান, পরিস্থিতি ভীষণ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে দেখে উত্তর জেলা পুলিশ সুপারকে সমস্ত বর্ণনা দিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ পাঠানোর অনুরোধ জানাই৷ বর্ণালী গোস্বামী বলেন, পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গিয়েছিল যে মনে হয়েছিল তারা আমাকে প্রাণে মেরে ফেলার পরিকল্পনা নিচ্ছে৷ তবে অল্প সময়ের মধ্যে পুলিশ ও টিএসআর পৌঁছে যাওয়ায় ভয়ঙ্কর পরিণতি থেকে রেহাই পেয়েছি৷
তিনি বলেন, নাবালিকাকে উদ্ধার করে তার পরিবারের হাতে তুলে দিয়েছি৷ নাবালিকার বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে৷ তাকে জোর করে সেখানে আটকে রাখা হয়েছিল পুলিশের সামনে নাবালিকাটি জবানবন্দি দিয়েছে৷ তবে ওই যুবকের বিরুদ্ধে নাবালিকার পরিবার এখনও মামলা করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়নি৷ সাথে তিনি যোগ করেন, আজ আমার উপর যে আক্রমণ হয়েছে ওই ঘটনারও এখনও কোনও মামলা করার বিষয়ে ভাবিনি৷ তবে নাবালিকা উদ্ধার করে নিরাপদে তার পরিবারের হাতে তুলে দিতে পেরেছি তাতে ভীষণ সন্তুষ্টি পেয়েছি৷
অন্যদিকে, গোমতী জেলার পিত্রা এলাকা থেকে এক নাবালিকা অপহৃত হয়েছে৷ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এক যুবক তাঁকে বলপূর্বক তুলে নিয়ে গেছে৷ হিন্দু সম্প্রদায় ভুক্ত নাবালিকাকে অপহরণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে৷
রবিবার সাত সকালে পিত্রা এলাকা ষোড়শ বর্ষীয়া এক নাবালিকা অন্যান্য দিনের মতো প্রাত ভ্রমণে বেরিয়েছিল৷ প্রাত ভ্রমণ কালে মান্নান খান নামে পূর্ব গোকূলপুরের এক যুবক তাকে বলপূর্বক অপহরণ করে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ৷ প্রাতভ্রমণ থেকে বাড়িতে না ফেরায় পরিবারের লোকজনদের মধ্যে সন্দেহ দেখা দেয়৷ এরই মধ্যে অপহৃতা নাবালিকা তার ভগ্ণিপতিকে ফোনে বিষয়টি জানায়৷ তখনই বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়৷ পুলিশ এব্যাপারে নাবালিকা অপহরণ সংক্রান্ত মামলা গ্রহণ করেছে৷ ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে৷ অপহৃতকে উদ্ধার কিংবা অপহরণকারীকে গ্রেপ্তারের কোন সংবাদ নেই৷ অপহরণকারী যুবক মোবাইল ফোনের সিম বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে৷ নাবালিকাকে বেশ কিছুদিন ধরেই সে প্রেম নিবেদন করছিল বলেও জানা গেছে৷ সে রাজী না হওয়ায় তাকে বলপূর্বক অপহরণ করে নিয়ে গেছে৷
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা টগবগ করছে৷ হিন্দুত্ববাদীরা এই ঘটনার বিরুদ্ধে গর্জে উঠার হুমকি দিয়েছে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *