নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৮ এপ্রিল ৷৷ আইপিএফটির পৃথক রাজ্য ইস্যুতে মুখে কুলুপ এঁটেছেন পিসিসি সভাপতি প্রদ্যোত কিশোর দেববর্মন৷ দিনে আইপিএফটির সহ সভাপতি অনন্ত দেববর্মা এবং রাতে আইপিএফটির যুব সংগঠনের সভাপতি শুক্লাচরণ নোয়াতিয়া কংগ্রেসকে সমর্থন দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন৷ তাঁরা আইপিএফটি থেকে পদত্যাগ দিয়েছেন৷ আইপিএফটির এই দুই পদত্যাগী নেতার পৃথক রাজ্যের ইস্যুতে বিরোধীতা করার বদলে পিসিসি সভাপতি মুখে কুলুপ এঁটেছেন৷ স্বাভাবিকভাবেই মনে করা হচ্ছে লোকসভা নির্বাচনকে ঘিরে কংগ্রেসও পৃথক রাজ্য ইস্যুতে নরম অবস্থান নিয়েছে৷ সোমবার সাংবাদিক সম্মেলনে পৃথক রাজ্যের ইস্যুতে কংগ্রেসের অবস্থান নিয়ে কোন উত্তর দেননি তিনি৷

কংগ্রেস দলকে সমর্থন করার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছেন আইপিএফটি-র পদত্যাগী সহসভাপতি অনন্ত দেববর্মা৷ আজ তিনি ত্রিপুরা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদ্যোত কিশোর দেববর্মণের বাসভবন উজ্জ্বয়ন্ত প্রাসাদে এক সাংবাদিক সম্মেলন করে কংগ্রেসকে সমর্থন করার কথা ঘোষনা করেছেন৷ তাঁর সঙ্গে আইপিএফটি-র চারটি বিভাগের চারজন সভাপতি, দলের সংখ্যালঘু সেলের এক নেতা-সহ বহু সাধারণ কর্মী ও সমর্থক উপস্থিত ছিলেন৷
এদিন অনন্ত দেববর্মা দল ছাড়ার কারণগুলি সংবাদ মাধ্যমের কাছে তুলে ধরেন৷ অনন্ত বলেন, তিপ্রাল্যান্ড আন্দোলনের ভিত্তিতে আইপিএফটি গঠিত হয়েছিল৷ দলের এই মূল দাবিকে সামনে রেখে গত বছর ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনে লড়ে সাফল্য এসেছে৷ বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি-র সঙ্গে আসন ভাগ করে আইপিএফটি ৯-টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল দল৷ এর মধ্যে ৮-টি আসনে জয়ী হয়েছেন দলের প্রার্থীরা৷ এমন-কি নির্বাচনের আগে দিল্লিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আইপিএফটি দলের প্রতিনিধিরা দেখা করে তিপ্রাল্যান্ডের দাবির কথা তুলে ধরেছিলেন৷ কিন্তু নির্বাচনের পর আইপিএফটি-র তরফে তিপ্রাল্যান্ড রাজ্যের দাবিতে বনধ ডাক দিলে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বনধের তীব্র বিরোধিতা করেন৷ বনধ প্রত্যাখ্যান করতে তাঁরা বাধ্য হন৷ তাছাড়া দলের সহ-সভাপতি হওয়ার পরও তাঁর সঙ্গে কথা না বলেই অনেক সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক৷ তবে তিনি বলেন, সভাপতি তথা মন্ত্রী এনসি দেববর্মা বয়সের ভারে ন্যুব্জ৷ তাই সাধারণ সম্পাদক তথা মন্ত্রী মেবারকুমার জমাতিয়া নিজের মর্জিমতো সিদ্ধান্ত নেন৷
তাঁর আরও অভিযোগ, মন্ত্রী হওয়ার পর সাধারণ সম্পাদকের জীবনযাত্রার ধরন পাল্টে গিয়েছে৷ নতুন নতুন গাড়ি কিনছেন সাধারণ সম্পাদক৷ দলের কর্মীদের কথা চিন্তা না করে তিনি নিজের কথা চিন্তা করতে ব্যস্ত বলেও অভিযোগ করেন অনন্ত৷ বলেন, দলের নিচুতলার কর্মী-সমর্থক এবং নেতাদের জন্য তাঁরা চিন্তা করছেন না৷ অথচ দলকে মজবুত করতে তিনি বড় ভূমিকা পালন করছে৷ এমন-কি সহসভাপতি হিসেবে তিনি সারা ত্রিপুরা ঘুরে বেড়িয়েছেন৷ এর জন্য দল থেকে একটি টাকাও কোনও দিন নেননি বলেও দাবি করেছেন অনন্ত দেববর্মা৷
তিনি দল ত্যাগ করছেন শুনে বিজেপি-র ত্রিপুরা প্রদেশ সভাপতি তথা মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লবকুমার দেব, উপমুখ্যমন্ত্রী জিষ্ণু দেববর্মণ, বিজেপি-র পশ্চিম আসনের প্রার্থী তথা দলের প্রদেশ সাধারণ সম্পাদিকা প্রতিমা ভৌমিক তাঁকে দল না ছাড়ার অনুরোধ জানিয়েছেন বলেও জানান অনন্ত৷
অপর দিকে কংগ্রেসের প্রদেশ সভাপতি মহারাজা প্রদ্যোত কিশোর দেববর্মা বলেন, অনন্ত দেববর্মা এতদিন একটি আলাদা রাজনৈতিক দলে ছিলেন৷ তাই তাঁদের আলাদা মতাদর্শ রয়েছে৷ তাঁদের মতাদর্শ ছেড়ে কংগ্রেসে আসতে বলছেন না৷ মূলত চারটি কারণে তাঁরা কংগ্রেস দলকে সমর্থন করছেন৷ এই চারটি বিষয় হল, কংগ্রেস দল ক্ষমতায় এলে সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট বিল ২০১৬ প্রত্যাহার করে নেবে, কেন্দ্রীয় সরকার সরাসরি ত্রিপুরা রাজ্যের স্বশাসিত জেলা পরিষদে টাকা দেবে, সুপ্রিম কোর্ট দেশের বনাধিকারের উপর যে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে তা তুলে নেওয়ার জন্য কংগ্রেস সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করবে এবং ত্রিপুরা রাজ্যের জনজাতিদের যে সকল জমি অবৈধভাবে দখল হয়েছে তা পূর্ণরুদ্ধারের জন্য কাজ করবে কংগ্রেস সরকার৷
প্রদ্যোত কিশোর দেববর্মা এদিন প্রশ্ণ করেন, আইপিএফটি-র একজন নেতা পদত্যাগ করেছেন৷ এখানে আইপিএফটি নেতাদের কোনও চিন্তা নেই৷ অথচ বিজেপি নেতাদের এত মাথাব্যাথা? এ-থেকে বোঝা যায়, আইপিএফটি-র একাংশ নেতা ও বিজেপির মধ্যে গোপন আঁতাত রয়েছে৷ বিজেপি-র এই রাজনীতি সাধারণ মানুষ বুঝতে পেরেছেন৷ আগামীদিনে কংগ্রেসে আরও লোক আসছেন বলে দাবি করেছেন কংগ্রেসের প্রদেশ সভাপতি মহারাজা প্রদ্যোত কিশোর দেববর্মা৷
এদিন, পিসিসি সভাপতির কাছে জানতে চাওয়া হয়, পৃথক রাজ্যের দাবীদারদের সমর্থন কংগ্রেস গ্রহণ করেছে৷ তাতে পৃথক রাজ্য ইস্যুতে কংগ্রেসের অবস্থান কি তা জানতে চাওয়া হয়েছে৷ এই প্রশ্ণের জবাব এড়িয়ে যান পিসিসি সভাপতি৷ বরং তিনি দাবী করেন, লোকে আমাকে সাম্প্রদায়িক নেতা হিসেবে মনে করলেও আমি সেই চিন্তাধারাকে সমর্থন করি না৷ সকলকে নিয়েই রাজনীতি করতে চাই৷ তাই হয়তো সাম্প্রদায়িকতার কালী ছিটানো হচ্ছে৷ তবে, পৃথক রাজ্য ইস্যুতে তিনি কেন কংগ্রেসের অবস্থান স্পষ্ট করেননি সেই প্রশ্ণ উঠেছে৷ রাজনৈতিক মহলের মতে লোকসভা নির্বাচনকে ঘিরে উপজাতি ভাবাবেগে কংগ্রেসকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য পৃথক রাজ্য ইস্যুটিকেও পিসিসি সভাপতি গুরুত্ব দিতে চাইছেন৷
এদিকে, আইপিএফটির যুব সংগঠনের সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ দিয়ে কংগ্রেসকে সমর্থন করবেন বলে জানিয়েছেন শুক্লাচরণ নোয়াতিয়া৷ এদিন রাতে তিনি পিসিসি সভাপতি প্রদ্যোত কিশোর দেববর্মনের সাথে দেখা করে তার অবস্থান স্পষ্ট করেছেন৷ তিনি পিসিসি সভাপতিকে জানিয়েছেন লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসকেই সমর্থন দেবেন তার সমর্থকরাও৷ পিসিসি সভাপতি তাঁর এই সমর্থনকে সাদরে গ্রহণ করেছেন৷

