নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৯ মার্চ৷৷ রাজ্যে নির্বাচন নিয়ে শাসক ও বিরোধীদের পাল্টা অভিযোগে রাজনৈতিক উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে৷ বিজেপির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এনে বিরোধী সিপিএম দল নির্বাচন কমিশনের কাছে অবাধ ভোটের দাবী করেছে৷ অন্যদিকে, শাসক বিজেপি কংগ্রেস সভাপতি প্রদ্যুৎ কিশোর দেববর্মনের বিরুদ্ধে উস্কানীমূলক বক্তব্য রাখার অভিযোগ আনল৷ সেই সাথে সিপিএমের বিরুদ্ধে বিজেপির অভিযোগ, সিপিএম শক্তি হারিয়ে ফেললেও দুসৃকতীমূলক কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে৷
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদ্যুৎ কিশোর দেববর্মণের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানাবে বিজেপি৷ প্রদ্যুৎ কিশোর দেববর্মণের বিরুদ্ধে অভিযোগ, লোকসভা নির্বাচনের জন্য বিভিন্ন এলাকায় প্রচারে গিয়ে তিনি উস্কানিমূলক ভাষণ দিচ্ছেন৷ তাঁর এ ধরনের বক্তব্যে রাজ্যে বসবাসরত অন্য জনগোষ্ঠীর সঙ্গে দাঙ্গার সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করছে বিজেপি৷ তাই প্রদ্যুতের বিভিন্ন বক্তব্যের ভিডিও ক্লিপিংস-সহ ভারতের নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ জানাবে বিজেপি৷ শুক্রবার সন্ধ্যায় আগরতলার কৃষ্ণনগর এলাকার প্রদেশ বিজেপি অফিসে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ কথা জানান দলের মুখপাত্র নবেন্দু ভট্টাচার্য৷

নবেন্দু জানান, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ত্রিপুরা সফরের দিন পরিবর্তন হয়েছে৷ তিনি ৬ এপ্রিলের পরিবর্তে আগামী ৭ এপ্রিল ত্রিপুরায় আসবেন৷ এদিন তিনি গোমতী জেলার উদয়পুরে এক নির্বাচনি জনসভায় ভাষণ দেবেন৷ অপরদিকে বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের ত্রিপুরা সফরের দিন স্থির হয়েছে আগামী ১৫ এপ্রিল৷ তাঁর আসার দিন এগিয়ে আসতে পারে অথবা পিছোতেও পারে বলে জানিয়েছেন নবেন্দু ভট্টাচার্য৷ তবে দলের ত্রিপুরা প্রদেশ কমিটি ১৫ এপ্রিলকে সম্ভাব্য দিন ধরেই এগোচ্ছে বলেও জানান তিনি৷
তিনি আরও বলেন, ত্রিপুরায় সিপিআইএম শক্তি হারালেও তাদের দুষৃকতীমূলক কাজকর্ম শেষ হয়নি৷ তাদের অনেকে এখনও রাজ্যে আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টায় সক্রিয় রয়েছে৷ সিপিআইএম-আশ্রিত দুষৃকতীরা বৃহস্পতিবার রাতে খোয়াই জেলার অন্তর্গত তেলিয়ামুড়া মহকুমার চাকমাঘাট এলাকার এক বিজেপি কর্মকর্তার বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে৷ কিন্তু বাড়ির লোকজনের তৎপরতায় আগুন নিয়ন্ত্রণ করে বড় ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করা হয় বলে জানান নবেন্দু৷
এদিকে, মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লবকুমার দেব প্রকাশ্যে হুমকি দিচ্ছেন, বিরোধীদের তিনি দেখে নেবেন৷ তাঁর এমন হুমকির পরিপ্রক্ষিতে বিজেপি সদস্যরা বিরোধী দলের কর্মী ও সমর্থকদের ওপর হামলা চালাচ্ছেন৷ লোকসভা নির্বাচনে বিরোধী দলের প্রার্খী ও কর্মীরা যাতে প্রচার অভিযান চালাতে না পারে তার জন্য লাগাতার হামলা হুজ্জতি চালানো হচ্ছে৷ মুখ্যমন্ত্রী আবার স্বরাষ্ট্র দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্তও৷ তাই এ-সব হামলা হুজ্জতির ঘটনা পুলিশের সামনে সংঘটিত হলেও তাঁরা কিছু করছে না৷ অভিযোগ করেছেন সিপিআইএম-এর ত্রিপুরা রাজ্য কমিটির সম্পাদক গৌতম দাস৷
শুক্রবার এক সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে তিনি এই অভিযোগ করে আরও বলেন, বিজেপির হামলা থেকে রেহাই পাচ্ছে না ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বর্তমান বিরোধী দলনেতা মানিক সরকারের নির্বাচনি সমাবেশও৷ গতকাল দুপুরে মানিক সরকার সিপাহিজলা জেলার অন্তর্গত তাঁর বিধানসভা এলাকায় নির্বাচনি জনসমাবেশে যান৷ সেখানে পুলিশের কাছ থেকে এই সমাবেশের জন্য আগাম অনুমতি নেওয়া ছিল৷ কিন্তু শাসকদল বিজেপি-আশ্রিত কতিপয় সমাজবিরোধী সভায় আগত লোকজনদের পথে বাধা দেয়৷ গৌতমের অভিযোগ, তাই মানিক সরকার একটি সভা করলেও অপর আরও একটি সভা করতে পারেননি৷ ফলে বাধ্য হয়ে সভা না করেই ফিরে এসেছেন৷ এই বিষয়টি গতকাল রাতেই নির্বাচন দফতরকে সিপিআইএম-এর তরফে জানানো হয়েছে৷
গৌতম দাস আরও অভিযোগ করেন, গত বছর মার্চ মাসে ত্রিপুরায় বিজেপি ও আইপিএফটি-র জোট সরকার প্রতিষ্ঠার পর থেকে রাজ্যের বিরোধী দলগুলি, বিশেষ করে বাম দলগুলির ওপর আক্রমণের ঘটনা ঘটছে৷ বামেদের শত শত পার্টি অফিস আক্রান্ত হয়েছে, দলীয় কর্মীদেবওপর হামলা, এমন-কি প্রাণনাশের মতো চেষ্টারও ঘটনা ঘটছে৷ নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে রাজ্যের বিভিন্ন নির্বাচিত সংস্থায় বিদ্যমান বাম প্রতিনিধিদের জোর করে পদত্যাগ করিয়ে নির্বাচনের নামে প্রহসন করে ক্ষমতায় বসেছেন বিজেপি সদস্যরা৷ তাঁরা চাইছেন লোকসভা নির্বাচনকেও প্রহসনে পরিণত করে ক্ষমতা দখল করতে৷ অথচ এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন৷ তাই বামফ্রন্টের তরফে ভারতের নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে রাজ্যে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করে মানুষের স্বাধীন মতাধিকার প্রয়োগে সহযোগিতা করতে৷ এই আবেদন জানিয়ে কিছুদিন আগেও সিপিআইএম দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি দিল্লিতে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের কছে ত্রিপুরা রাজ্যে গত এক বছরে বামেদের ওপর সংগঠিত রাজনৈতিক আক্রমণের ঘটনার হিসাব তুলে দিয়েছেন৷ তিনি রাজ্যে সুষ্ঠুভাবে ভোট প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য সহায়তা করতে রাজ্যের সংবাদ মাধ্যমকেও আহ্বান জানান৷
সাংবাদিকদের তরফে গৌতম দাসকে জিজ্ঞাসা হয়, বর্তমান বিরোধী দলনেতার বিরুদ্ধে দলের নিচুস্তরের কর্মীদের একাংশের অভিযোগ রয়েছে তিনি তাঁদের এখন খোঁজখবর রাখেন না৷ এই অভিযোগ কতটুকু সত্য?এই প্রশ্ণের উত্তরে গৌতম দাস বলেন, মানিক সরকার একজন অভিজ্ঞ রাজনৈতিক নেতা৷ তিনি বর্তমানে বিরোধী দলনেতা হলেও গত ২০ বছর তিনি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মানুষের সেবা করেছেন৷ তাই তিনি জানেন, কর্মীদের খোঁজখবর কী করে নিতে হয়৷ কিন্তু সাংবাদিক সম্মিলনে বসা সিপিআইএম-এর ত্রিপুরা রাজ্য সম্পাদক মণ্ডলের সদস্য নারায়ণ কর সাংবাদিকদের এই প্রশ্ণ শুনে উত্তেজিত হয়ে অনেকটা ধমকের সুরে সাংবাদিকদের পাল্টা প্রশ্ণ করেন, এখন কি রাজ্যে সুষ্ঠু পরিবেশ আছে?