বিজেপি ছেড়ে কংগ্রেসে প্রত্যাবর্তন সুবল ভৌমিকের

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৯ মার্চ৷৷ লোকসভা নির্বাচনে প্রাক্কালে ধাক্কা খেল রাজ্যের শাসক দল বিজেপি৷ দল ছেড়ে কংগ্রেসের পতাকাতলে সামিল হলেন বিজেপির সহ সভাপতি সুবল ভৌমিক৷ শুধু দলত্যাগ করেই থেমে থাকেননি তিনি৷ বিজেপির প্রদেশ সভাপতি তথা মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবের বিরুদ্ধেও বিষোদ্গার করেন৷ তিনি সাফ অভিযোগ করেন, মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব গোটা দেশের মধ্যে ত্রিপুরার সম্মান ধুলোয় মিটিয়ে দিচ্ছেন৷ এককথায় তিনি মুখ্যমন্ত্রীর যোগ্যতা নিয়েই জনসমক্ষে প্রশ্ণ ছুড়ে দিয়েছেন৷


সুবল ভৌমিক সহ বেশ কয়েকজন নেতা বিজেপি দল ত্যাগ করে জাতীয় কংগ্রেসের পতাকাতলে শামিল হয়েছেন৷ সোমবার গভীর রাত পর্যন্ত প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদ্যোত কিশোর দেববর্মণের বাস ভবনে বৈঠক শেষে বিজেপি দল ত্যাগ করে কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন সুবল ভৌমিক৷ প্রাক্তন মন্ত্রী তথা বিজেপির আরও এক নেতা প্রকাশ চন্দ্র দাসও কংগ্রেস দলে ফিরে এসেছেন৷ সিপিএম থেকে একজন কাউন্সিলারও দলত্যাগ করে কংগ্রেস দলে যোগদান করেছেন৷ তার নাম দেবাশীস সেন৷
মঙ্গলবার দুপুর নাগাদ কংগ্রেস ভবনে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি কংগ্রেসের অন্যান্য শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের উপস্থিতিতে সুবল ভৌমিক সহ অন্যান্যরা আনুষ্ঠানিকভাবে কংগ্রেস দলে যোগ দেন৷ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদ্যোত কিশোর দেববর্মণ তাদের দলীয় পতাকা তুলে দিয়ে দলে বরণ করে নেন৷ বুধবার রাজ্যে আসছেন কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি রাহুল গান্ধি৷ খুমুলুঙে অনুষ্ঠিত হবে সমাবেশ৷ সেখানে আরও বেশ কয়েকজন কংগ্রেস দলে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে৷ রাহুল গান্ধির রাজ্য সফরকালে রাজ্যের দুটি লোকসভা আসনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হবে৷ পূর্ব ত্রিপুরা আসনে সম্ভবত প্রার্থী হচ্ছেন প্রদেশ সভাপতি প্রত্যোদ কিশোর দেববর্মণ৷
ত্রিপুরার দুটি আসনেই কংগ্রেস দল জোরদার লড়াই করার প্রস্তুতি নিচ্ছে৷ এরই মধ্যে সুবল ভৌমিক সহ অন্যান্যরা নেতারা কংগ্রেস দলে যোগ দেওয়ায় সাংগঠনিক ভিত আরও অনেকটাই মজবুত হয়েছে৷ উল্লেখ্য, প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি হিসাবে প্রদ্যোতকিশোর দেববর্মণ দায়িত্ব গ্রহণ করেই দল ছেড়ে যাওয়া সব নেতাদের ঘরে ফেরার আহ্বান জানিয়েছিলেন৷ ঘরে ফিরলে প্রত্যেকেই যোগ্য সম্মান দেওয়াহবে বলেই আশ্বস্ত করেছিলেন৷ শুধু তাই নয়, কংগ্রেসের প্রত্যেক নেতাকে অতীতের ভেদাভেদ ভুলে একসাথে কাজ করার আহ্বানও জানিয়েছিলেন তিনি৷ পাহাড় ও সমতলকে একসূত্রে গাঁথার মন্ত্র উচ্চারণ করেন প্রদ্যোত৷ তাতে ইতিমধ্যেই সাফল্য আসতে শুরু করেছে৷ পক্ষান্তরে রাজ্যের শাসক দল বিজেপি মহা ফাঁপড়ে পড়েছে৷ যতদূর জানা গেছে, সুবল ভৌমিককে বিধানসভা নির্বাচনের সময় প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল দলীয় সভাপতি কিংবা লোকসভা আসনে তাকে প্রার্থী করা হবে৷ কিন্তু প্রতিশ্রুতি পালন করা হয়নি৷ সুবল ভৌমিকের দলত্যাগের এটিই মূল কারণ৷ সুবল ভৌমিক দলত্যাগ করায় বিজেপির সাংগঠনিক ক্ষেত্রে বড় ধরনের আঘাত নেমে এসেছে৷
বিষয়টি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে দলীয় নেতৃত্ব৷ দিল্লি থেকে মঙ্গলবার সকাল থেকেই মুহূর্তে বিজেপি নেতারা সুবল ভৌমিককে ফোন করে আস্বস্ত করার চেষ্টা করেন৷ কিন্তু নাছোর বান্দা সুবলবাবু নিজের ঘরে ফিরতেই আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেন৷ কংগ্রেস দলে ফিরে সুবলবাবু দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন বিজেপিতে সাংগঠনিক কোন স্বাধীনতা নেই৷ একমাত্র কংগ্রেস দলেই সকলের স্বাধীনতা রয়েছে৷ রাজ্যের মানুষ বহু প্রত্যাশা করে রাজ্যে পরিবর্তন ঘটিয়েছিলেন৷ রাজ্যবাসীর প্রতি চরম বিশ্বাসঘাতকা করেছে বিজেপি৷ সেকারণেই তিনি কংগ্রেস দলের পতাকাতলে শামিল হয়েছেন৷
কংগ্রেসের পতাকাতলে সামিল হয়ে সুবল ভৌমিক বলেন, স্বাধীনতার পর থেকেই এই রাজ্যের মানুষ কংগ্রেসকে আপন করে নিয়েছিলেন৷ ছাত্র জীবন থেকে সুবল ভৌমিক নিজেও কংগ্রেস দলের সাথে যুক্ত৷ পাঁচ বছর আগে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন৷ বিজেপিতে গিয়ে নতুন তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে৷ রাজ্য থেকে কমিউনিস্টকে ক্ষমতাচ্যুত করে পরিবর্তন আনতে ঝাপিয়ে পড়েছিলেন৷ কিন্তু, যে পরিবর্তন এসেছে তাতে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে৷ এই পরিবর্তন কেউ কোনদিন চাননি৷ কমিউনিস্টদের স্বেচ্ছাচার জনবিরোধী নীতি বিশেষে করে খেটে খাওয়া মানুষকে দলতন্ত্রের শিকার থেকে মুক্ত করতে যেখানে আইনের শাসন নেই-সেখানে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে বিজেপিকে রাজ্যের ক্ষমতায় আসীন করেছিলেন জনগণ৷ গত এক বছর ক্ষমতায় থেকে রাজ্যের কোনও পরিবর্তন ঘটাতে পারেনি বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার৷ গ্রামে গঞ্জে চরম হাহাকার চলছে৷ তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, কেন্দ্রে রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেস সরকার গড়বে৷ দেশবাসী সঠিকভাবেই বুঝতে পারছেন কংগ্রেসের হাতেই দেশের স্বাধীনতা সুরক্ষিত থাকবে৷ বিজেপি দলের ভিতরে কোন গণতন্ত্র নেই বলে তিনি অভিযোগ করেন৷ কংগ্রেস দলেই অবাধ গণতন্ত্র রয়েছে৷ প্রত্যেক নেতা কর্মী স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন৷ বিজেপিতে তা নেই৷ বিজেপি ক্ষমতায় আসার আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বামফ্রন্টের ২৫ বছরে যাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হয়েছিল, ক্ষমতায় আসার ছয় মাসের মধ্যে প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে৷ কিন্তু, ক্ষমতায় আসার পর আজ অবদি একটি মামলাও প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়নি৷ সিপিএমের বিরোধীতা করতে গিয়ে যারা প্রাণ দিয়েছিলেন তাদের পরিবার ন্যায় বিচার পায়নি৷ বাম আমলের ছায়া বিজেপির আমলেও বহাল রয়েছে৷ দুর্নীতিগ্রস্ত আমলাদের বিরুদ্ধে এই সরকার কোন ব্যবস্থা নেয়নি৷ তিনি বলেন, রাজ্যের একটা সুনাম রয়েছে৷ কিন্তু, মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য সেই সুনাম বিনষ্ট করছে৷ গোটা দেশজুড়ে ত্রিপুরার বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য হাসির খোরাকে পরিণত হচ্ছে৷ লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়া নিয়েও ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন সুবলবাবু৷ এমন লোকজনকে প্রার্থী করা হচ্ছে যাদের গ্রহণযোগ্যতা নেই৷ বারবাার প্রতিবাদ করা সত্যেও কোন প্রতিকার নেই৷ ব্যক্তির ইচ্ছায় এখানে সরকার চলছে৷ বিজেপিতে কেউ থাকবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন৷ সবাই বিজেপি থেকে বেরিয়ে এসে কংগ্রেস দলে যোগ দেবেন৷ তিনি আক্ষেপ করে বলেন, বিজেপিকে রাজ্যের শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করতে তিনি নিজেও বহু রক্ত ঝড়িয়েছেন৷ অথচ তার নামেই অপবাদ দেওয়া হচ্ছে৷ সুবল বাবু দলের সভাপতি হলে নাকি সাতদিনের মাথায় রাজ্যের সরকারটাই পড়ে যাবে৷ দলীয় প্রার্থী করা হলে দলের সর্বনাশ হয়ে যাবে৷ সুবলবাবু বলেন, ‘আমি বিজেপি দলের বোঝা হয়ে থাকতে চাই না৷ সেই কারণেই বিজেপি ছেড়ে কংগ্রেস দলে ফিরে এসেছি’৷
এদিকে, এদিন কংগ্রেস ভবনে সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদ্যুৎ কিশোর দেববর্মন, প্রাক্তন পিসিসি সভাপতি বীরজিৎ সিনহা, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সমীর রঞ্জন বর্মন সহ অন্যান্যরা৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *