ঢাকা, ১২ মার্চ (হি. স.) : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের ফল ঘোষিত হয়েছে সোমবার রাত তিনটার দিকে, হল সংসদগুলোর ফলও। তারপরই আরও অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে গোটা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর। ডাকসুর ২৫টি পদের মধ্যে সহ-সভাপতি (ভিপি) ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক পদ ছাড়া বাকি পদে নির্বাচিত হয়েছে শাসক আওয়ামি লিগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলিগ প্রার্থীরা। হলগুলোতেও প্রাধান্য ছাত্রলিগের। কিন্তু ফল ঘোষণার পরপরই ভিপি ও সমাজকল্যাণ পদে নির্বাচন তারা প্রত্যাখ্যান করে উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আখতারুজ্জামানের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেয়। ভিপি পদে জয়ী হয়েছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা নুরুল হক, সমাজকল্যাণ সম্পাদক পদেও নির্বাচিত হন কোটা সংস্কার আন্দোলনের আরেক নেতা। তাঁরা নির্বাচন করেন সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ থেকে। ছাত্রলিগ দাবি করছে, নুরুল হক জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তাই তাঁকে তাঁরা ভিপি হিসেবে মানবে ন। এই দুই পদে নতুন নির্বাচন করতে হবে। এই বিক্ষোভের মধ্যেই মঙ্গলবার সকালে নব-নির্বাচিত ভিপি নুরুল হকের নেতৃত্বে একটি বিজয় মিছিল শাহবাগ থেকে মধুর ক্যান্টিন হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) পৌঁছান।

এ সময় ভিপি পদে পরাজিত কেন্দ্রীয় ছাত্রলিগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনের অনুসারীরা নুরুল হকের ওপর হামলা করে। পাশে থাকা বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দ ছাত্রলিগকে ধাওয়া দিলে তারা পালিয়ে যায়। পরে নুরুল হকের সমর্থনে অন্যান্য ছাত্র সংগঠন ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা টিএসসিতে জড়ো হন। বিকেলে রাজু ভাস্কর্যের সামনে সমাবেশ থেকে প্রহসনের নির্বাচনের প্রতিবাদে কাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন ডাকসুর নবনির্বাচিত সহ-সভাপতি (ভিপি) নুরুল হক। তিনি ভিপি ও সমাজসেবা সম্পাদক পদ ছাড়া অন্য সব পদে পুনঃনির্বাচন দাবি করেন। তিনি বলেন, \”সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ছাত্রলিগের কেউ নির্বাচিত হবেন না। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে পুনঃনির্বাচনের আন্দোলন চালিয়ে যাব।\” এ সময় কোটা আন্দোলনকারী, স্বতন্ত্র প্রার্থী, বিভিন্ন বাম সংগঠনের নেতা-কর্মী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
নব-নির্বাচিত ভিপি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, \”আমি ভিসি স্যারকে চ্যালেঞ্জ করছি, যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, আর ছাত্রলিগ একটি পদও পায়, তাহলে স্বেচ্ছায় ভিপি পদ ত্যাগ করে চলে যাব।\” প্রশাসনের উদ্দেশে নবনির্বাচিত ভিপি বলেন, \”আগুনের স্ফুলিঙ্গ নিয়ে খেলবেন না, পুড়ে ছারখার হয়ে যাবেন। ফল ঘোষণা নিয়েও নাটক করা হয়েছে। রাত তিনটার দিকে ফল ঘোষণা করা হয়েছে, আমাদের বিতর্কিত করার জন্য বিভিন্ন ধরনের শ্লোগান দিচ্ছে ছাত্রলিগ। ছাত্রলিগ গুজবের সংগঠন। তারা গুজবের জন্ম দেয়। প্রশাসন ছাত্রলিগের অপকর্মের সহযোগী।\” এ সময় প্রশাসনকে উদ্দেশে নুরুল হক বলেন, \”ছাত্রদের নিয়ে খেলবেন না। কারচুপির নির্বাচনের পরও আমি ছাত্রদের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছি।
বাকি পদগুলোতে ছাত্রলিগ জেতেনি, তাদের জিতিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাই পুনঃনির্বাচন দাবি করছি। ২৮ বছর পর ডাকসু নির্বাচন হল, কিন্তু এই নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের অধিকার হরণের চেষ্টা করা হয়েছে।\” এদিকে ক্যাম্পাসে আরেকটি সমাবেশে বামজোট সমর্থিত বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতারা নির্বাচন বাতিল ও পুনঃতফসিলের দাবি জানিয়েছে। নির্বাচনে ভিপি প্রার্থী লিটন নন্দী বলেছেন, \”আমরা ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়েছি। আমরা নির্বাচন বাতিল করে পুনঃতফসিল চাই। দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বিক্ষোভ-পাল্টা বিক্ষোভের এক পর্যায়ে কয়েকটি টায়ারে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীরা সবাই রাস্তায় নেমে এসেছেন। শ্লোগান হচ্ছে পক্ষে-বিপক্ষে। ক্যাম্পাসে বিপুল সংখ্যায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।\” সোমবার বিকেলে ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার আগেই ভোটে কারচুপি ও অনিয়মের অভিযোগ তুলে ভোট বর্জন করেছিল ছাত্রলিগ ছাড়া বাকি সব সংগঠন। এসময় তাঁরা ফের ভোটের দাবি জানায়।