নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৮ মার্চ৷৷ এক বছরের হিসেব দিলেন মন্ত্রী সুদীপ রায় বর্মণ৷ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তর, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও পরিবেশ দপ্তর, পানীয় জল ও স্বাস্থ্য বিধান দপ্তর, তথ্য ও প্রযুক্তি দপ্তরের হিসেব আজ তুলে ধরে মন্ত্রী সুদীপ রায় বর্মণ দাবি করেন, এক বছরে অনেক কাজ হলেও সন্তোষজনক পর্যায় পৌঁছাতে পারিনি৷ তবে, কাজের মাপদন্ড সন্তোষজনক পর্যায়ে পৌঁছাবেন বলে এদিন তিনি দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন৷

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী সুুদীপ রায় বর্মন আজ এক সাংবাদিক সম্মেলনে স্বাস্থ্য দপ্তরের বিভিন্ন শাখা, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও পরিবেশ দপ্তর, পানীয়জল ও স্বাস্থ্য বিধান শাখা এবং তথ্য ও প্রযুক্তি দপ্তরের গত এক বছরের উল্লেখযোগ্য সাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরেন৷ মহাকরণের প্রেস কনফারেন্স হলে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের পদস্থ আধিকারিকগণ উপস্থিত ছিলেন৷ প্রতিটি দপ্তরের প্রকল্প অনুযায়ী গত ৯ মার্চ, ২০১৮ থেকে ৮ মার্চ ২০১৯ পর্যন্ত দপ্তর সমূহের পরিসংখ্যান ভিত্তিক সাফল্যের তথ্য তুলে ধরা হয়৷
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তরের কাজকর্ম সম্পর্কে মন্ত্রী শ্রীবর্মন বলেন, আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে রাজ্যে ৭১টি হেলথ এণ্ড ওয়েলনেস সেন্টার স্থাপিত হয়৷ প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনা ২০১৮ সালের ২৩ সেপ্ঢেম্বর আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়৷ এই কর্মসূচিতে রাজ্যের ৬৪টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালকে অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে৷ স্বাস্থ্যমন্ত্রী শ্রীবর্মন বলেন, আন্তরিতার সাথে দপ্তরের প্রতিটি কর্মী কাজ করছে৷ মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ত্রিপুরাকে আরও উন্নতির শিখরে নিয়ে যাওয়া৷ তিনি জানান, জননী সুুরক্ষা কার্যক্রমে ২৯ হাজার ৩৩৭ জন গর্ভবতী মহিলা এবং ৪ হাজার ৮৮২ জন শিশু সুুবিধা পেয়েছে৷ ২০১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৭ হাজার ৭০৭ জন শিশুকে টিকাকরণ করা হয়েছে৷ টিকাকরণ কার্যক্রমে বাদ পড়া শিশুদের(২ বছরের কম বয়স) সম্পর্ণ টিকাকরণ করতে মিশন ইন্দ্রধনুষ প্রকল্প চালু করা হয়েছে এবং গ্রাম স্বরাজ যোজনার মাধ্যমে এই প্রকল্পে দ্বিতীয় রাউণ্ডে ১০০ শতাংশ শিশুকে টিকাকরণ করা হয়েছে৷ রাষ্ট্রীয় বাল স্বাস্থ্য কার্যক্রমে জন্মগত হৃদরোগের ২১৪ জনকে চিকিৎসা করা হয়েছে৷ এছাড়া এই কর্মসূচিতে ১১৪ জন ঠোঁট কাটা রোগী ও ৭১ জন বাঁকা পা রয়েছে এমন রোগীদের চিকিৎসার মাধ্যমে তা স্বাভাবিক অবস্থায় আনা হয়েছে৷ দক্ষতা বৃদ্ধির জন স্বাস্থ্য দপ্তরের ৪৯০ জন স্বাস্থ্য কর্মীকে বিভিন্ন ধরণের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে৷
তিনি জানান, মোট ২২১৬ জন টি বি রোগীকে চিহ্ণিত করে চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে৷ তিনি বলেন, জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের অধীনে এই পরিষেবা হয়েছে৷ এছাড়াও তিনি জানান, এপ্রিল ২০১৮ থেকে জানুয়ারি ২০১৯ পর্যন্ত বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে বর্হিবিভাগে ৩৫৬৬৯২৮ জন এবং অর্ন্তবিভাগে ৩৪৫৫১৭ জনকে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হয়েছে৷ এপ্রিল ২০১৮ থেকে ফেবয়ারি ২০১৯ পর্যন্ত জন্ম পি’করণ সংখ্যা ৬৬৭২৫ এবং মৃত পি’করণ সংখ্যা ২৭৭২০৷ ত্রিপুরা হেলথ স্কিম ফর পুওর এ ফেবয়ারি পর্যন্ত ৮৭০ জন রোগী উপক’ত হয়েছে৷ খরচ হয়েছে
৪ কোটি ১৬ লক্ষ ৩১ হাজার ৮৩৭ টাকা৷ ১১৬ জন চিকিৎসক নিয়োগ করা হয়েছে৷ ২ জন নিউরোসার্জন, ১ জন কন্সান্টটেন্ট, ১ জন সিনিয়র কনসাল্টটেন্ট, ১ জন অ্যানেস্থিটিওলজিষ্ট, ৪ জন আর এম ও, ৩ জন আই সি ও মেডিক্যাল অফিসার নিয়োগের জন্য ফেবয়ারিতে নিয়োগ পত্র দেওয়া হয়েছে৷ বিনামূল্যে রোগ নির্ণয় পরিষেবা আই জি এম হাসপাতাল, ৬টি জেলা হাসপাতাল ও ১২টি মহকুমা হাসপাতালে চালু করা হয়েছে৷ জিবি হাসপাতালে ইউরোলজী ও প্লাস্টিক সার্জারী ইউনিট চালু করা হয়েছে৷ এই হাসপাতালে ই-হাসপাতাল পরিষেবা চালু করা হয়েছে৷ রক্তের মজত সংক্রান্ত তথ্য মানুষ যাতে পেতে পারে এজন্য ই-রক্তকোষ, মোবাইল ভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশন ই-ব্লাডব্যাংক চালু করা হয়েছে৷ এইচ আই ভি সনাক্তকরণে প্রতিমাসে গড়ে ১১০০০ ব্যক্তির রক্ত নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে৷ এপ্রিল ২০১৮ থেকে জানুয়ারি ২০১৯ পর্যন্ত ১১৩৩০৯ এর বেশী রক্তের নমুনা এইচ আই ভি চিহ্ণিত করণের জন্য পরীক্ষা করা হয়েছে৷ হোমিওপ্যাথি, এলোপ্যাথি, আয়ুর্বেদিক, ডেনটিস্ট সকল চিকিৎসকদের অবসরের বয়স ৬৫ করা হয়েছে৷ পানীয় জল স্বাস্থ্যবিধান দপ্তরের সাফল্যও মন্ত্রী সুুদীপ রায় বর্মণ তুলে ধরেন৷ তিনি জানান, অটল জলধারা মিশনে গ্রাম ও শহর এলাকায় বিনামূল্যে নভেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত ৭৭৭৫টি বাড়িতে পাইপলাইনে জল সংযোগ দেওয়া হয়েছে৷ তিনি বলেন, বি পি এল এবং এ পি এল ভূক্ত ১৩৮১৮০টি পরিবারে ব্যক্তিগত বাড়ি বাড়ি শৌচাগার নির্মাণ করা হয়েছে৷ ৬০০৮১ টি পরিত্যক্ত শৌচাগার পুনঃনির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে৷ মন্ত্রী শ্রী বর্মণ বলেন, রাজ্যের সবগুলি গ্রাম/এডিসি ভিলেজ, ব্লক এবং জেলাকে উন্মক্ত স্থানে মলত্যাগ মুক্ত (ঞ্জঙ্গ) ঘোষণা করা হয়েছে৷ অর্থাৎ ত্রিপুরা উন্মক্ত স্থানে মলমুক্ত রাজ্যের মর্যাদা লাভ করেছে৷ প্রযুক্তি বিদ্যা দপ্তরের সাফল্য সম্পর্কে তুলেধরে মন্ত্রী শ্রীবর্মণ বলেন, সোয়ান এর অধীনে রাজ্যের সকল জেলাশাসক কার্যালয়, মহকুমা শাসকের কার্যালয়, ব্লক, সংযুক্ত করা হয়েছে৷ ২০১৯ সালের ৮মার্চ পর্যন্ত ৯১টি সাইট, ২৪৪টি বিভাগীয় অফিস সংযুক্ত করা হয়েছে৷ ত্রিপুরা স্টেট ডাটা সেন্টার ২X৭ ভিত্তিতে চালু আছে৷ প্রায় ৮০টি অ্যাপ্লিকেশন, সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের ১২০টি ওয়েবসাইট হোস্ট করা হয়েছে৷ ত্রিপুরায় ৯০০টিরও বেশী ই-পরিষেবা কেন্দ্র (কমন সচিব সেন্টার) বিভিন্ন ডিজিটাল পরিষেবা প্রদান করা হয়েছে৷ প্রায় ২১টি প্রকল্পের অগ্রগতি এই ডেসবোর্ডে পাওয়া যাচ্ছে৷ মোবাইল কভারেজের অধীনে ত্রিপুরায় প্রায় ৩৫লক্ষ ৫০ হাজার মোবাইল সংযোগ সুুবিধা রয়েছে৷ স্বচ্ছ ও দ্রত টেণ্ডারিং প্রক্রিয়ার লক্ষ্যে ই-টেণ্ডারিং চালু করা হয়েছে৷ এছাড়াও বায়োমেট্রিক অ্যাটেনডেন্স সরকারি অফিসগুলিতে চালু করা হয়েছে৷ মন্ত্রী শ্রীবর্মণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পরিবেশ দপ্তরের গত ১ বছরের সাফল্যও তুলে ধরেন৷ তিনি বলেন, বিদ্যালয়স্তরে জনিয়র গণিত অলিম্পিয়াডের আয়োজন করা হয়৷ এতে ৪০০০ এর বেশী ছাত্র-ছাত্রী অংশগ্রহন করেন৷ শিল্প কলকারখানা স্থাপন ও পরিচালনার জন্য ত্রিপুরা রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ ১১৫টি স্থাপন ও ২৭৮টি পরিচালনা সংক্রান্ত সার্টিফিকেট প্রদান করেছে৷ পরিবেশ সুুরক্ষা ও রক্ষণাবেক্ষণে ১৪টি স্টেশনের বায়ু, ১০২টি স্টেশনের জল, ১০৪টি স্টেশনের শব্দ দূষণ মাত্রা পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে৷ ডুকলী ব্লকের বজেন্দ্রনগর গ্রামে একটি জৈব গ্রাম গড়ে তোলা হয়েছে৷