কলকাতা, ২৪ জুন (হি. স.) : শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় সম্পর্কে সিপিএমের অপমানজনক মন্তব্যের কড়া প্রতিবাদ করলেন বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা।
সিপিএমের তরফে সোস্যাল মিডিয়ায় দাবি করা হয়েছে, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় জনসঙ্ঘের জন্মদাতা, যা পরে ভারতীয় জনতা পার্টিতে পরিণত হয়। আরএসএস-র মতই তিনিও স্বাধীনতা সংগ্রামের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে সহযোগিতার নীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন। ব্রিটিশ আমলে তিনি যখন বাংলা প্রদেশের মন্ত্রী ছিলেন, তখন হিন্দু মহাসভা আর মুসলিম লিগের পক্ষ থেকে ১৯৪২ সালের ২৬শে জুলাই ব্রিটিশ সরকারের গভর্নর স্যার জন হার্বার্টকে এক চিঠিতে লেখেন “প্রশ্ন হল বাংলায় এই আন্দোলনের বিরুদ্ধে (ভারত ছাড়ো) কিভাবে লড়া হবে। প্রশাসন এমনভাবে চালানো দরকার যাতে কংগ্রেসের হাজার চেষ্টা সত্ত্বেও এই প্রদেশে তা শেকড় ছড়াতে না পারে। আমাদের, বিশেষ করে দায়িত্বশীল মন্ত্রীদের, জনগণকে একথা বলতে পারা উচিৎ যে কংগ্রেস যে স্বাধীনতার দাবিতে ভারত ছাড়ো আন্দোলন শুরু করেছে, জনপ্রতিনিধিদের সেই স্বাধীনতা ইতিমধ্যেই দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে ট্যুইটও
করেছেন সিপিএম-এর রাজ্য সম্পাদক সুর্যকান্ত মিশ্র।

রবিবার হিন্দুস্থান সমাচার-কে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে রাহুলবাবু বলেন, “সিপিএমের মত বেইমান দলের শংসাপত্র নিয়ে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ভাবমূর্তি তৈরী প্রয়োজন হবে না| সিপিএম নিজেই দেশবিরোধী শক্তি। এ কারণেই গোটা দেশ থেকে মুছে যেতে বসেছে | এরা কখনও দেশের ভাল চায় না। ব্রিটিশ আমলে ওরা গোয়েন্দাগিরি করেছে। বিপ্লবীদের ধরিয়ে দিয়েছে| বিলম্বিত করেছে স্বাধীনতা আন্দোলন| সিপিএমের মন্তব্যের বিন্দুমাত্র মূল্য আছে বলে আমরা মনে করি না|”
সিপিএমের তরফে লেখা হয়েছে, একটু খতিয়ে দেখুন, অন্য পরিচয়ের আড়ালে আসলে কে এই শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়? অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস প্রকাশিত ‘লিভস ফর্ম অ ডায়েরি’-র ১৭৯ পৃষ্ঠার একটি লেখার উক্তি দিয়ে সিপিএম জানিয়েছে, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এক চিঠিতে লেখেন “বিস্তীর্ণ এলাকায় ছড়িয়ে পড়া কংগ্রেসের আন্দোলনের ফলে এই প্রদেশে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে সে সম্পর্কে এবারে বলি। সরকারের উচিৎ যে কোনও লোক, যে যুদ্ধ চলাকালীন জনগণকে ক্ষেপিয়ে তুলে আভ্যন্তরীণ অশান্তি বা নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করার পরিকল্পনা করে, তাকে আটকানো। তবে হয়ত কিছু কিছু ক্ষেত্রে সেই স্বাধীনতা জরুরী অবস্থার কারণে সীমায়িত করা হয়েছে। ভারতীয়দের উচিৎ ব্রিটিশদের বিশ্বাস করা। ব্রিটেনের ভালর জন্যে নয়, এই প্রদেশের সুরক্ষা এবং স্বাধীনতা বজায় রাখার জন্যেই। গভর্নর হিসাবে আপনি এই প্রদেশের সাংবিধানিক প্রধানসুলভ কাজই করবেন এবং সম্পূর্ণভাবে আপনার মন্ত্রীদের পরামর্শ অনুযায়ী চলবেন”।
রাহুল সিনহা এ প্রসঙ্গে বলেন, “চিন যখন ভারত আক্রমণ করে, রাস্তায় নেমে কমিউনিস্টরা সরব হয়েছিল চিন ফৌজের সমর্থনে। তখন কমিউনিস্টরা বোঝেনি এতে ভারতীয় সেনাদের মনোবল মার খাবে | কার্গিল যুদ্ধের সময় প্রকাশ্যে অটলবিহারী বাজপেয়ীর সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছিল কমিউনিস্টরা। এগুলো তো লোকে ভুলে যায়নি | দেশভাগের সময় জ্যোতি বসু ও নাম্বুদ্রিপাদ পাকিস্তানের দাবিকে সমর্থন করে বলেছিলেন, ওটা ওদের আত্মনিয়ন্ত্রনের দাবি | ওটা মানতে হবে | তবেই ভারত স্বাধীন হবে |”
সিপিএম অভিযোগ করেছে, “প্রতিযোগিতামূলক সাম্প্রদায়িকতার দৌড়ে ‘রামনবমী’র পর এখন বিজেপি-র সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তৃণমূলও শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুদিবস পালন করা শুরু করেছে। ‘তৃণমূল-বিজেপি’ যে ‘মেড ফর ইচ আদার’, তা আরও প্রকাশ্যে আসছে।” এরও জবাব দিয়েছেন রাহুল সিনহা। এই প্রতিবেদককে তিনি এ দিন বলেন, “সুখের কথা, দেরিতে হলেও তৃণমূল রামনবমী এবং শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুদিবস পালন করা শুরু করেছে। কিন্তু ‘তৃণমূল-বিজেপি’ কোনও ভাবে ‘মেড ফর ইচ আদার’ নয় । যুদ্ধের সময় সিপিএমের স্লোগান ছিল “কান মে বিড়ি, মুখ মে পান। লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান!’ সেই দলের রকম ভিত্তিহীন অভিযোগ নিয়ে ভাবনার কারন নেই |