দিব্যাঙ্গজনদের সঠিক পরিচয়ের জন্য কেন্দ্র ইউনিক আই ডি বানাবে ঃ গেহলট

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৮ জুন৷৷ আমাদের সংসৃকতিতে ও পরম্পরাতে দীন দুঃখীদের সেবা করা প্রত্যেক ব্যক্তি নিজের কর্তব্য বলে মনে করেন৷

শুক্রবার রবীন্দ্র ভবনে দিব্যাঙ্গজনদের চলন সামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রকের মন্ত্রী থাওয়ার চান্দ গেহলট, মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব এবং সমাজ কল্যাণমন্ত্রী সন্তনা চাকমা৷ ছবি নিজস্ব৷

কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে যে দেশের কিছু লোক পাশ্চাত্য সংসৃকতির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ভাবছেন যে যা আয় করবে তাতে নিজেরা আরাম আয়েশে জীবন কাটিয়ে দেবে৷ সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের কল্যাণে কিছু করার প্রয়োজনীয়তাবোধ মনে করে না৷ এই ধরণের চিন্তা-ভাবনা পরিবর্তন করা খুবই দরকার৷ আজ রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে আর্টিফিশিয়াল লিম্ব ম্যানুফ্যাকচারিং কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়ার (আলিমকো) উদ্যোগে এবং রাজ্য সরকারের সমাজ কল্যাণ ও সমাজ শিক্ষা দপ্তর ও পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় আয়োজিত সামাজিক অধিকারিতা শিবির এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের (দিব্যাঙ্কজন) সহায়ক সামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে একথা বলেন কেন্দ্রীয় সরকারের সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রকের মন্ত্রী থাওয়ার চান্দ গেহলট৷ সাথে যোগ করেন, দিব্যাঙ্গজনদের সঠিক পরিচয়ের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার ইউনিক আইডি বানানোর উদ্যোগ নিয়েছে৷

তিনি বলেন, এত বড় শিবিরে আমি উপস্থিত হয়ে প্রসন্নতা বোধ করছি৷ প্রধানমন্ত্রীজী এই বিভাগের দায়িত্ব আমাকে দেওয়ার সময় বলেছিলেন, এই বিভাগ হল এমন একটি বিভাগ যার বিভিন্ন যোজনাগুলির মাধ্যমে দেশের প্রায় ৬৫ শতাংশ জনগণ উপকৃত হচ্ছেন৷ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শ্রী গেহলট বলেন, এই বিশ্ব একই পরিবারের মতো৷ আর আমরা সবাই এই পরিবারের সদস্য৷ তাই আমাদের একে অন্যের প্রতি আত্মীয়তাবোধ থাকতে হবে এবং দুঃখ -কষ্টে একে অপরের পাশে থাকতে হবে৷ আমি আজ খুশি যে প্রধানমন্ত্রীজীর নির্দেশ অনুসারে এবং কঠোর পরিশ্রম করে গত চার বছরে সারা বিশ্বে দিব্যাঙ্গজনের জন্য যে কাজ হচ্ছে তার চাইতে ভালো ও বেশি সংখ্যক কাজ করার জন্য আমরা পাঁচটি গিনিস বুক অব রেকর্ড বানিয়েছি৷ শ্রী গেহলট বলেন, আমরা এই ধরণের মেগা শিবির সারা দেশে আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম৷ আমরা দেখেছি বিগত কেন্দ্রীয় সরকারের আমলে ১৯৯২-২০১৩ সাল পর্যন্ত মোট ৫৭ টি শিবির আয়োজন করা হয়েছিলো৷ আর আমরা ২০১৪-১৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ৭ হাজার শিবিরের আয়োজন করেছি৷ এরমধ্যে এই ধরণের মেগা শিবিরের সংখ্যা  হলো ৩২১ টি৷ এতে ৬০০ কোটির উপর টাকার সহায়ক সামগ্রী ১১ লাখের উপর দিব্যাঙ্গজনদের প্রদান করা হয়েছে৷ ত্রিপুরাতেও আমরা আজ পর্যন্ত ৭৬ টি ছোট বড় শিবিরের আয়োজন করেছি৷ এই শিবিরগুলিতে ৩ কোটি টাকার অধিক সহায়ক সামগ্রী ৬ হাজার দিব্যাঙ্গজনদের প্রদান করা হয়েছে৷ আজকেও এই শিবিরে ভারত সরকারের এ ডি আই পি প্রকল্পের মাধ্যমে ১ কোটি ৩২ লক্ষ ২৮ হাজার টাকা ব্যয়ে ৪ হাজার ৫৯ টি সহায়ক সামগ্রী মোট ২০১২ জন দিব্যাঙ্গজনদের প্রদান করা হবে৷ এই ধরণের শিবির আয়োজন করার উদ্দেশ্য হলো সহায়ক সামগ্রী প্রদানে স্বচ্ছতা বজায় থাকা, ভারত সরকারের এই ধরণের যোজনা সম্পর্কে জনগণ ওয়াকিবহাল থাকা এবং কত সংখ্যক সহায়ক সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে তা জনগণকে অবহিত করা৷

শ্রী গেহলট বলেন, দিব্যাঙ্গজনদের সশক্তিকরণের উদ্দেশ্যে আমরা নতুন অনেক যোজনা চালু করেছি৷ ২০১৪-১৫ সাল থেকে দিব্যাঙ্গজনদের প্রারম্ভিক থেকে উচ্চ শিক্ষায় পড়াশুনার জন্য ৬ প্রকারের আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে৷ তাতে এখন পর্যন্ত প্রায় ২২ হাজারের মতো দিব্যাঙ্গজন ছাত্র-ছাত্রী উপকৃত হয়েছে৷ আমরা একটি নতুন আইন তৈরী করেছি যাতে দিব্যাঙ্গজনদের ২১ ধরণের শ্রেণী রয়েছে যা আগে মাত্র ৭টি শ্রেণী ছিলো৷ ভারত সরকারের বিভিন্ন সংস্থায় চাকুরিতে দিব্যাঙ্গজনদের জন্য ৪ শতাংশ সংরক্ষণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে যা আগে ৩ শতাংশ ছিলো৷ উচ্চশিক্ষায় ক্ষেত্রে কলেজগুলিতে তাঁদের জন্য ৫ শতাংশ আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ পাশাপাশি দিব্যাঙ্গনবর্গভিত্ত নিগমের মাধ্যমে তাদের ১৭ প্রকার বিভিন্ন ট্রেডে দক্ষতার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়ে থাকে৷ প্রশিক্ষণ চলাকালীন তাদের প্রতিমাসে ২ হাজার টাকা স্টাইপেন্ড সহ যাতায়াতের খরচও প্রদান করা হয়৷ এখন পর্যন্ত ৪৬ হাজার দিব্যাঙ্গজন দক্ষদতার প্রশিক্ষণ সম্পন্ন  করেছেন৷ দিব্যাঙ্গনবর্গবিত্ত নিগমের মাধ্যমে তাদের ঋণ দেওয়া হয়ে থাকে৷ এখন পর্যন্ত প্রায় দেড় লক্ষ দিব্যাঙ্গজন ঋণ নিয়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন৷ আমরা তাদের জীবনে দ্রুত গতিতে বিকাশের জন্য সারা দেশে সুগম্য ভারত অভিযান চালু করেছি৷ এই অভিযানের মাধ্যমে বাস স্ট্যান্ড, রেলস্টেশন এবং বিমানবন্দরের মতো সার্বজনিত স্থানে তাদের সহজে চলাচলের জন্য র্যাম্প, রেলিং এবং লিফট বসিয়ে সুগম্যের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ তাদের সঠিক পরিচয়ের জন্য আমরা ইউনিক আই ডি বানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি যার কাজ দ্রুতগতিতে চলছে৷ ত্রিপুরাতেও এর কাজ চলছে৷ এই কাজটি দ্রুত শেষ করার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গেহলট৷

তিনি বলেন, আমরা আরও নতুন স্কীম চালু করেছি যার মধ্যে একটি হল ককলিয়র ইমপ্ল্যান্ট সার্জারির সুযোগ প্রদান করা৷ ত্রিপুরাতেও শুনতে পারে না এবং কথা বলতে পারে না এমন ১২ জন শিশুর ককলিয়র ইমপ্ল্যান্ট সার্জারি করা হয়েছে৷ আমরা প্রথম ধাপে ৫শ জন শিশুর ককলিয়র ইমপ্ল্যান্ট সার্জারি করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছিলাম৷ কিন্তু কুশি যে আজ পর্যন্ত ১ হাজার ২২৫ জন শিশুর ককলিয়র ইমপ্ল্যান্ট সার্জারি করতে পেরেছি৷ সর্বশেষে তিনি রাজ্য  সরকারের নিকট আবেদন রাখেন যে, নতুন যে আইনি কেন্দ্রীয় সরকার তৈরী করেছে তা রাজ্যে লাগু করে এই আইনের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধাগুলি দিব্যাঙ্গজনদের প্রদান করার উদ্যোগ গ্রহণ করা৷

অনুষ্ঠানে এছাড়াও বক্তব্য রাখেন সমাজ কল্যাণ ও সমাজ শিক্ষা দপ্তরের মন্ত্রী সান্তনা চাকমা, ভারত সরকারের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদ্রেদর ক্ষমতায়ন দপ্তরের (দিব্যাঙ্গজন) যুগ্ম সচিবদ্বয় ডাঃ প্রবোধ শেঠ এবং ডলি চক্রবর্তী৷ ধন্যবাদসূচক বক্তব্য রাখেন সমাজ কল্যাণ ও সমাজ শিক্ষা দপ্তরের অধিকর্তা দেবানন্দ রিয়াং৷

এদিকে, আজ নড়সিংগড়ে সংযোজিত আঞ্চলিক প্রতিবন্ধী (দিব্যাঙ্গজন) পুনর্র্বসন কেন্দ্রের উদ্বোধন করা হয়৷ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুখ্য অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ সভাপতি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রী থাওয়ার চান্দ গেহলট৷ নরসিংগড়ে পুরোনো জুভেনাইল হোম মেরামত করে চালু করা হয় এই কেন্দ্রটি৷ সাংবাদিকদের এক প্রশ্ণের জবাবে কেন্দ্রীয় সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রী বলেন, রাজ্য সরকারের সঙ্গে জমি সংক্রান্ত ব্যাপারে আলোচনা চলছে৷ জমি পাওয়া গেলে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রতিবন্ধী পুনবার্সন কেন্দ্রটি নতুন ভাবে নির্মাণ করা হবে৷ তিনি বলেন, আপাতত এই কেন্দ্রে প্রতিবন্ধীদের চিকিৎসার সুবিধা দেওয়া হবে৷ প্রতিবন্ধী পুনর্র্বসন কেন্দ্রটিতে বর্তমানে ৬ জন ডাক্তার রয়েছেন৷ এখানে নূ্যনতম ৮০ শতাংশ বা এর বেশী প্রতিবন্ধীদের বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে৷ সেন্টারটিতে অকোপ্যাশনাল থেরাপী ইউনিট, ফিজিওথেরাপী ইউনিট, স্পীচ ও হিয়ারিং ডিসেবিলিটি ইউনিট, সোসিও ইকোনোমিক রিহ্যাবিলিটেশন ইউনিট, ভিস্যুয়াল ডিসেবিলিটি ইউনিট ইত্যাদি রয়েছে৷ এই কেন্দ্রটি কেন্দ্রীয় সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রকের অধীনে নির্মিত হয়েছে৷ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পরে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব জানান, প্রতিবন্ধী কল্যাণে কেন্দ্রীয় সরকার যে সমস্ত কর্মসূচি নিয়েছে তা এই রাজ্যেও চালু হবে৷ এ সমস্ত কর্মসূচির সুফল রাজ্যের প্রতিবন্ধীদের কাছে পৌঁছে দিতে রাজ্য সরকার উদ্যোগ নেবে৷ মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব ও অন্যান্য অতিথিগণ পুনর্বাসন কেন্দ্রটির বিভিন্ন চিকিৎসা কক্ষ ঘুরে দেখেন৷ মুখ্যমন্ত্রী প্রতিবন্ধী কেন্দ্রের অধিকর্তার সঙ্গে আলোচনাকালে কেন্দ্রটি নতুন ভাবে নির্মাণ করার জন্য জমি সংক্রান্ত বিষয়ে সহযোগিতা করার আশ্বস্ত করেন৷ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সমাজ কল্যাণ ও সমাজ শিক্ষা মন্ত্রী সান্ত্বনা চাকমা, বিধায়ক কৃষ্ণধন দাস, সাংসদ শঙ্কর প্রসাদ দত্ত, সমাজ কল্যাণ ও সমাজ শিক্ষা দপ্তরের সচিব ও অন্যান্য আধিকারিকগণ৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *