উচ্চ ঝঁুকিপূর্ণ জমির ফসল বীমার কিস্তির টাকা বহন করবে রাজ্য সরকার

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৫ মে৷৷ রাজ্যের উচ্চ ঝুকিপূর্ণ এলাকার কৃষিজমিতে ফসল বীমার সম্পূর্ণ কিস্তির টাকা রাজ্য সরকার বহন করবে৷ এর

শুক্রবার মহাকরণে সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন শিক্ষামন্ত্রী রতন লাল নাথ এবং কৃষিমন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহ রায়৷ ছবি নিজস্ব৷

জন্য ৩ কোটি ১৭ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে৷ তাতে মোট ২১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমি বীমার আওতায় আনা হবে৷ ফলে, ১ লক্ষ কৃষক উপকৃত হবেন৷ শুক্রবার সন্ধ্যায় মহাকরণে সাংবাদিক সম্মেলনে কৃষিমন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহ রায়কে পাশে বসিয়ে এই ঘোষণা দেন শিক্ষামন্ত্রী রতন লাল নাথ৷ শিক্ষামন্ত্রীর কথায়, আগামীদিনে কৃষিজমি সরকারি খরচে বীমার আওতায় আনার পরীধি বাড়ানো হবে৷

শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য, রাজ্যের কৃষি ও কৃষকদের স্বার্থে কেন্দ্রীয় সরকারের বিশেষ প্রকল্প প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনা সারা দেশের সাথে এ রাজ্যেও ২০১৬ সালের খারিফ মরশুম থেকে রূপায়ণ শুরু হয়৷ প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত কারণে ফসলের ক্ষতি হলে এই যোজনার অধীনে কৃষকগণ ফসল বিমার সুবিধা পেতে পারেন৷ কিন্তু বিগত বছরগুলিতে সঠিকভাবে এই যোজনা রূপায়ণ না করার ফলে রাজ্যের ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষীগণ-এর সুফল থেকে বঞ্চিত হয়েছেন৷

তাঁর কথায়, এই প্রকল্পকে কৃষকদের সহায়তা প্রদানের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করার জন্য বর্তমান রাজ্য সরকার বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে৷ এই বছর খারিফ মরশুম থেকেই এই প্রকল্প রূপায়ণে কৃষি দপ্তর পুরোদমে কাজ শুরু করবে৷ প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, রাজ্যে প্রায় ২১,৫০০ হেক্টর এলাকা উচ্চ ঝঁুকিপূর্ণ অঞ্চল, যেখানে প্রায় প্রতিবছর কৃষকগণ প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত কারণে বিশেষত বন্যা/রোগ পোকার আক্রমণ ইত্যাদির কারণে ফসল উৎপাদনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন৷ সম্প্রতি কালবৈশাখীর ঝড়বৃষ্টিতে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে৷ এতে কৃষকরা মারাত্মকভাবে আর্থিক ক্ষতির মধ্যে পড়েছেন৷ শুধু তাই নয়, ফসল নষ্টের কারণে মানুষের জীবনযাত্রাতেও মারাত্মকভাবে প্রভাব পড়েছে৷ তাই, কৃষি দপ্তর ফসলবীমার আওতায় আরও বেশি কৃষককে আনার জন্য কৃষকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করেছে৷

শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য, উচ্চ ঝঁুকিপূর্ণ অঞ্চল কৃষি প্রধান এলাকার কৃষকদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সর্বপ্রথম এই বিমার আওতায় নিয়ে আসা হবে৷ এর জন্য রাজ্য সরকার ৩ কোটি ১৭ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছে৷ উচ্চ ঝঁুকিপূর্ণ এলাকার প্রকল্প রূপায়ণের কাজ সম্পন্ন হয়ে গেলে  পরবর্তী সময়ে সমীক্ষার ভিত্তিতে সারা রাজ্যে প্রকল্পকে প্রসারিত করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷ মূলত ঃ খারিফ মরশুমে আউস ধান, আমন ধান এবং রবি মরশুমে বোরো ধান ও আলু এই ফসলগুলি চাষে উচ্চ ঝঁুকিপূর্ণ অঞ্চলের কৃষকদের শস্য বীমার আওতায় আনার জন্য কৃষকদের বীমার কিস্তির টাকা রাজ্য সরকার বহন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ অর্থাৎ এই ফসল বীমা যোজনার জন্য উচ্চ ঝঁুকিপূর্ণ অঞ্চলের কৃষকদের এক টাকাও কিস্তি দিতে হবে না৷ কৃষকদের পক্ষে রাজ্য সরকারই কিস্তির টাকা দেবে৷

রাজ্য প্রায় ১০ শতাংশ ধান চাষের এলাকা এবং ২০ শতাংশ আলু চাষের এলাকা উচ্চ ঝঁুকিপূর্ণ অঞ্চলের অন্তর্গত রয়েছে৷ জেলা ভিত্তিক হিসাব হলো – ধলাই জেলায় ধান চাষের এলাকা ১৭০০ হেক্টর এবং আলু চাষের এলাকা ২০০ হেক্টর, গোমতী জেলায় ধান চাষের এলাকা ৩০০০ হেক্টর ও আলু চাষের এলাকা ২৩০ হেক্টর, খোয়াই জেলায় ধান চাষের এলাকা ২২০০ হেক্টর ও আলু চাষের এলাকা ১০০ হেক্টর, উত্তর ত্রিপুরা জেলায় ধান চাষের এলাকা ১৬০০ হেক্টর ও আলু চাষের এলাকা ১১০ হেক্টর, সিপাহীজলা জেলায় ধান চাষের এলাকা ৪২০০ হেক্টর ও আলু চাষের এলাকা ২১০ হেক্টর, দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলায় ধান চাষের এলাকা ৩৬০০ হেক্টর ও আলু চাষের এলাকা ৩৫০ হেক্টর, ঊনকোটি জেলায় ধান চাষের এলাকা ১৫০০ হেক্টর ও আলু চাষের এলাকা ২০০ হেক্টর, পশ্চিম ত্রিপুরা জেলায় ধান চাষের এলাকা ২২০০ হেক্টর ও আলু চাষের এলাকা ১০০ হেক্টর৷ রাজ্যে মোট ধান চাষের এলাকা ২০,০০০ হেক্টর এবং আলু চাষের এলাকা ১৫০০ হেক্টর৷

শিক্ষামন্ত্রী কথায়, প্রতি হেক্টর আউস ও আমন ধানের বীমা করার জন্য কৃষককে বিমাকৃত রাশির দুই শতাংশ হারে কিস্তি দিতে হয়৷ আর বোরো ধানের জন্য ১৫০ শতাংশ এবং আলু চাষের জন্য বিমাকৃত রাশির ৫ শতাংশ হারে কিস্তি দিতে হয়৷ টাকার হিসাবে প্রতি হেক্টর চাষের জন্য কিস্তির হার হলো – আউস ধান ১ হাজার ১২৪ টাকা ৭৬ পয়সা, আমন ধান ১ হাজার ২১০ টাকা ৭৬ পয়সা, বোরো ধান ১ হাজার ২৬৫ টাকা ১০ পয়সা এবং আলু ১ হাজার ৯৫৪ টাকা ৯৬ পয়সা৷ সাথে তিনি যোগ করেন, অন্যান্য এলাকায় কৃষিজমিতে বীমার কিস্তি ২ শতাংশের অধিক হলে কেন্দ্র ও রাজ্য ৫০ঃ৫০ অনুপাতে প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত অর্থ বহন করবে৷ তাই শিক্ষামন্ত্রী রাজ্যের সকল কৃষকদের তাদের জমি ফসল বীমার আওতায় আনার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন৷

তাঁর দাবি, এর ফলে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষীরা, যারা অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল, তারা টাকার অভাবে কিস্তি দিতে না পারার জন্যে আগে ফসল বীমা যোজনার সুফল ভোগ করতে পারেননি, সেই সব গরীব কৃষকগণ রাজ্য সরকারের এই উদ্যোগের জন্য উপকৃত হবেন৷ সাংবাদিক সম্মেলনে কৃষি মন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহ রায়, কৃষি দপ্তরের প্রধান সচিব ইউ ভেঙ্কটেস্বরালু ও কৃষি অধিকর্তা ড. দেবপ্রসাদ সরকার উপস্থিত ছিলেন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *