সন্ত্রাসে রক্তাক্ত হচ্ছে জিরানীয়ার বিভিন্ন এলাকা, অভিযোগ সিপিএমের

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৩ এপ্রিল৷৷ বিধানসভা নির্বাচনের ভোট গণনার পর থেকে রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে যেমন বিক্ষিপ্ত সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটেছে তেমনি জিরানীয়াতেও রাজনৈতিক সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলেছে সিপিএম৷ দলের পক্ষ থেকে শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিজেপি দুর্বৃত্তদের তান্ডবে জিরানীয়া মহকুমার শিক্ষক সহ একাধিক বিরোধী দলের কর্মী রক্তাক্ত৷ শাসক দলের দুর্বৃত্তদের হিংস্র আক্রমণে একই দিনে শিক্ষক সহ ২ জন মারাত্মক আহত হয়ে জি বি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৷ গেরুয়াবাহিনীর লাগামহীন সন্ত্রাসে প্রতিদিনই রক্তাক্ত হচ্ছে জিরানীয়া মহ কুমা এলাকায় নানা প্রান্ত৷ রাজ্য সরকার ও শাসক দলের নেতৃত্ব সন্ত্রাসকারীদের সম্পর্কে নিরব দর্শকের ভূমিকা নিচ্ছে৷ সব ঘটনা জেনে শুনেও সন্ত্রাস বন্ধে কোন ভূমিকা নিচ্ছে না৷ পুলিশ প্রশাসন সন্ত্রাসকারী, আক্রমণকারী গুন্ডাবাহিনীর তান্ডব দেখে, জেনেও কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না শাসক দলের চাপে৷ জিরানীয়া রানীরবাজার, খয়েকপুর এলাকায় মারাত্মক ত্রাস ও আতঙ্কের পরিবেশ বিরাজ করছে৷ দুর্বৃত্তবাহিনী প্রকাশ্য দিবালোকেও বাইক গাড়ী নিয়ে আক্রমণ, সন্ত্রাস চালাচ্ছে৷
১৩ এপ্রিল সকাল আনুমানিক সাড়ে ১০টা নাগাদ জিরানীয়া সংহতি বিদ্যামন্দির উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কর্মরত শিক্ষক সৌমিক্র দাস (৩১) প্রাতঃ বিভাগের সুকল শেষে তাঁর মোটর বাইক দিয়ে বাড়ীতে আসার সময় সুকলের সন্নিকটেই রাম রহিম পাড়ার মুখে মূল রাস্তায় পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে বিজেপি দুর্বৃত্তবাহিনী রড, হকি স্টীক, লাঠি, ছুরি সহ অস্ত্র সস্ত্র নিয়ে আক্রমন, সংগঠিত করে৷ ১০-১২ জন বিজেপি দুর্বৃত্ত একসাথে তাঁর উপর আক্রমণ সংগঠিত করে৷ সে মারাত্মকভাবে জখম হয়৷ দুর্বৃত্তরা শিক্ষক সৌমিত্র দাস বেঁচে নেই ভেবে রাস্তার পাশে ফেলে দিয়ে যায়৷ পরবর্তী সময় এলাকাবাসী খবর দিয়ে ফায়ার সার্ভিস গিয়ে তাকে জিরানীয়া হাসপাতালে নিয়ে আসার পর তাঁর অবস্থা মারাত্মক গুরুত্বর হওয়ায় তাকে জিবি হাসপাতালে পাঠানো হয়৷ শিক্ষক সৌমিত্র দাসের (শিক্ষক) উপর আক্রমণকারী দুর্বৃত্তদের নেতৃত্বে ছিলহ কেশব বনিক (জয়নগর) চন্দন দেবনাথ (জয়নগর) শিবব্রত চক্রবর্তী (ব্লক টিলা) রমেশ নমঃ (জিরানীয়া কলোনী) নকুল দাস (জিরানীয়া কলোনী) বাপন সাহা (মান্দাই চৌমুনহী) পলটু ঘোষ (নোয়াবাদী)৷ ছবি প্রসাদ (বিশ্বজিৎ) সাহা (শনিতলা, মান্দাই চৌমুহনী), সুজিৎ চক্রবর্তী ব্লক চৌমুহনী সহ আরও কয়েকজন শাসক দলের দুর্বৃত্ত৷ শিক্ষক সৌমিত্র দাসের চিকিৎসা চলছে বর্তমানে জিবি হাসপাতালে৷ সৌমিত্র দাসের বাড়ী জিরানীয়া মধ্যপাড়ায়৷
গত ১২ ই এপ্রিল রাত ১০টা নাগাদ খয়েরপুরের পশ্চিম নোওয়াবাদীতে দিনমজুর বাপন সরকারের বাড়ীতে ঘরের দরজা ভেঙ্গে বিজেপি দুর্বৃত্তরা হামলত্রা সংগঠিত করে৷ দুর্বৃত্তদের আক্রমণের বাপন সরকার, স্ত্রী মামন সরকার, অর্পনা সরকার (মেয়ে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী) তাদের অমানুবিক ভাবে মারধোর করে৷ হিংস্র আক্রমণে বাপন সরকার মারাত্মক জখম হয়৷ তাঁর দুটি পা এবং ২টি পায়েই ভীষণ আঘাতের চিহ্ণ হয়েছে৷ কয়েকটি স্থানে হাঁড় ভেঙ্গেছে৷ রাতেই জিবি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসা হয়৷ তাঁর চিকিৎসা চলছে৷ তাঁর স্ত্রী ও মেয়ে আহত হয়েছে৷ ঘরে সমস্ত জিনিষপত্র ভাঙচুর ও লুটপাঠ করেছে দুর্বৃত্তরা৷ এলাকায় ত্রাসের সৃষ্টি হয়েছে৷ এই ঘটনাগুলি জিরানীয়া ও বোধজং নগর থানায় লিখিতভাবে দুর্বৃত্তদের নামসহ অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে ৷ এখানে উল্লেখ্য যে, বাপন সরকার সহ পরিবারের লোকদের উপর আক্রমণের ঘটনার নেতৃত্বে চইক্সছল বিশ্বজিৎ বিশ্বাস ও লিটন মালাকার৷
গত ১২ এপ্রিল জিরানীয়া শচীন্দ্র নগর কলোনীর বিদ্যাসাগর পাড়ায় শ্রমিক বেনুলাল দাসের বাড়ীতে বিজেপি দুর্বৃত্তরা হামলা করে৷ বাড়ীর সামগ্রী ভাঙচুর করে এবং মারধোর করে৷ সিপিআইএম রাজ্য জেলা ও মহকুমা নেতৃত্ব যথাক্রমে পার্টিও রাজ্য সম্পাদকমন্ডলীরে সদস্য তথা প্রাক্তন মন্ত্রী মানিক দে, পথটি পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা সম্পাদক পবিত্র কর, সাংসদ শংকর প্রসাদ দত্ত, জিরানীয়া মহকুমা সম্পাদক মধুসুদন দাস, মহকুমা সম্পাদকমন্ডলীর সম্পাদক তপন দাস সহ অন্যান্য নেতৃত্বরা জিবি হাসপাতালে গিয়ে আহতদের দেখেন, পরিবার পরিজনদের সাথে কথা বলেন, ডাক্তারদের সাথে কথা বলে চিকিৎসার বিষয়ে খোঁজ খবর নেন৷
সি পি আই (এম) পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা ও জিরানীয়া মহকুমা কমিটি শাসক দলের দুর্বৃত্তদের হিংস্র আক্রমণের তীব্র নিন্দা প্রতিবাদ জানাচেছ৷ পার্টি রাজ্য সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীর রাজ্যের শান্তি প্রতিষ্ঠার কথা বললে ও এবং পুলিশ প্রশাসনের মহানির্দেশকের দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার কথা বললেও বাস্তবে শাসক দলের দুর্বৃত্তরা তাকে পাত্তা না গিয়ে সন্ত্রাসের মাত্রা আরও বাড়িয়েছে৷ পার্টি রাজ্য সরকারকে সন্ত্রাস বন্ধে এবং শান্তির পরিবেশ রক্ষায় কার্যকরী উদ্যোগ নিতে আবেদন জানাচেছ এবং পুলিশ প্রশাসনকে দুর্বৃত্তদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানাচ্ছে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *