৷৷ সায়ন্তক চৌধুরী৷৷
পুরনো সামগ্রী ঝেটিয়ে বিদায় করার নাম হল চৈত্র মেলা৷ চৈত্র মাস মানেই দোকানের জঞ্জাল সাফ করার মাস৷ নামেই বোঝা যাচ্ছে যে, এ মেলা বছরের একটি নির্দিষ্ট মাসে হয়৷ এ মাস বছরের শেষ মাস৷ আর বছরটি হল বাংলা বছর৷ অস্বীকার করা যাবে না যে, হিন্দু বাঙালীদের সাথে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত এ বাংলা বছর৷ বিশেষ করে বছরের শেষ মাস মানেই তো পাওয়া না পাওয়ার হিসাবের মাস৷ চৈত্রের শেষ মানেই নতুন বছরের আবাহনের প্রস্তুতি৷ সেই হিসাবে রয়েছে চৈত্র মেলার গুরুত্বও৷ প্রতি বছরই রাজধানীসহ রাজ্যের নানা স্থানে চৈত্র মেলা হয়৷ এ মেলার পোষাকি নাম হল চৈত্রের রিডাকশন সেল৷ প্রতি বছর এমন মেলা নিয়ে মাতোয়ারা থাকে বড় ব্যবসায়ী থেকে আরম্ভ করে ক্ষুদে ব্যবসায়ী এমনকি বেকার যুবক যুবতীরা৷ এ সময়ে কিছু অর্থ প্রাপ্তির আশাতো সবার থাকে৷ কেননা, চৈত্র সেল তথা চৈত্র মেলা মানেইতো এক উন্মাদনার মেলা৷ ওই যে দিল্লী কা লাড্ডুর মত অবস্থা৷ খেলেও পস্তাবে, আবার না খেলেও পস্তাবে৷ এ যেন এক দুনির্বার আকর্ষণ৷ আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা উন্মুখ হয়ে থাকে মেলায় যেতে৷ কি নেই এই মেলায়৷
হেঁসেলের নানা ধরনের সামগ্রী থেকে শুরু করে মহিলাদের প্রসাধনের মনোলোভা নানা ধরনের সামগ্রীতে ঠাসা থাকে মেলায় আসা প্রতি দোকান৷ বাংলা বছরের এই বিশেষ সময়ের জন্য ঘরের মা-বোনেরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন৷ তাইতো চৈত্র মেলা মানেই হেঁসেলকে নতুন করে সাজিয়ে নেবার পালা৷ চৈত্র মেলা মানেই খেটে খাওয়া মানুষদের ছেলে মেয়েদের মুখে হাসি ফুটানোর মেলা৷ কিন্তু, এবারের চৈত্র মেলা যেন বড়ই বিষাদ ভরা মেলা৷ যেন রোদনভরা বসন্ত৷ তাইতো চৈত্রের বসন্তের উতোল হাওয়ায় পাগল পাগল মন আর পাগল হয় না৷ কেননা, এবার চৈত্র মাস বড়ই রিক্ত নিঃস্ব মাস হিসাবে যেন ধরা দিল৷ গ্রাম পাহাড়ে নেই প্রাণের ছোঁয়া৷ রাজধানী ছাড়া মহকুমা ও প্রত্যন্ত গ্রামগুলির আর্থিক অবস্থা চাঙ্গা হবার জীয়ন কাঠি হল রেগার কাজ৷ এবার রেগার কাজে মন্দাভাব৷ ১৮ এর বিধানসভার নির্বাচন রাজ্যের খেটে খাওয়া মানুষদের আশা আকাঙ্খার ফানুস যেন চুপসে দিল৷ রাজ্যে নির্বাচনোত্তর পরিস্থিতি স্থিতিশীল নয়৷ বিভিন্ন দপ্তরের কাজকর্মেও দেখা দিয়েছে অস্থির পরিস্থিতি৷ বিভিন্ন ভিলেজ কমিটি, গ্রাম পঞ্চায়েত ও নগর পঞ্চায়েতে রেগার কাজে তেমন গতি নেই৷ ফলে রেগা শ্রমিকদের জীবিকায় পড়েছে টান৷ অনেকটা নুন আনতে পান্তা ফুরানোর অবস্থা৷ এরই মাঝে এল চৈত্র মাস৷ এলো হিন্দু বাঙালীদের পার্বন৷ তাই তো চৈত্র সংক্রান্তি এবং পয়লা বৈশাখ যেন নিবিড় ভাবে জড়িয়ে আছে হিন্দু বাঙালীদের মনে৷ সেই সাথে চৈত্র মেলা দিয়েছে আলাদা একটা মাত্রা৷
কিন্তু, এবারের চৈত্র মেলা যেন বড় ফিকে মনে হচ্ছে৷ আবেগ উচ্ছাস থাকলেও লক্ষ্মীর ভাড়ারে যেন টান পড়েছে৷ পয়লা এপ্রিল থেকে রাজধানীসহ রাজ্যের নানাস্থানে চৈত্র মেলা শুরু হয়েছে৷ ধীরে ধীরে নানা ধরনের ব্যবসায়ীরাও নানা ধরনের পসরা নিয়ে মেলায় আসছে৷ কিন্তু, তাদের থেকে শংকা দূর হচ্ছে না৷ কেননা, রেগা সহ বিভিন্ন দপ্তরের কাজ থমকে আছে৷ বিশেষ করে পুর্ত ও জনসম্পদ দপ্তরের ঠিকাদাররাও কাজের বিল না পেয়ে শংকায় ভুগছেন৷ ব্যবসায়ীদের মনেও জাগছে মন্দা বিক্রির শংকা৷ তাই চৈত্র মেলায় আসা ব্যবসায়ীরা দ্বিধা ধন্দে ভুগছেন৷ তারা ভালো করে জানেন গরীব অংশের মানুষের হাতে টাকা না থাকলে মেলা যে জমবে না৷ নেই রেগা আর টুয়েপের গরিমা৷ রাজ্যের ঠিকাদাররা এ সময়ে পাচ্ছে না টাকা৷ ঠিকাদারদের অধীনে থাকা শ্রমিকরাও হাত গুটিয়ে বসে আছে৷ তাই চৈত্র মেলা কতটুকু ছন্দে ফিরবে তাই নিয়ে শঙ্কিত ব্যবসায়ীরা৷ রাজধানীতে চৈত্র মেলা উতরে গেলেও মফস্বলে চৈত্র মেলা অনেকটা যে নিষ্প্রাণ হবে তা বলা যেতে পারে৷ কেননা, প্রকৃতির নিয়মে এবার চৈত্র মেলা এলেও নির্বাচনের তোড়ে যেন এ মেলার নির্যাসটুকু হারিয়ে গেছে৷ তাই তো চৈত্র মেলাকে ঘিরে সাত রঙা রঙধনুর ছটা যেন ফিকে মনে হচ্ছে৷