নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৫ সেপ্ঢেম্বর৷৷ শুধু দেশের মানুষের সমানাধিকারই গণতন্ত্র নয়৷ গণতন্ত্রের মূল কথা হলো স্বাধীন ভাবনা, স্বাধীন চিন্তা,
মত প্রকাশের অধিকার৷ কিন্তু বর্তমান সময়ে ব্যক্তি স্বাধীনতা, গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা আক্রান্ত হচ্ছে৷ ধর্মনিরপেক্ষতার উপর আঘাত আসছে৷ এ সব বিষয়ে আমাদের ছেলেমেয়েদের সচেতন না করতে পারলে কি করে তারা সুনাগরিক হবে? কি করে তারা ভবিষ্যতে দেশের দায়িত্ব তুলে নেবে৷ শুধু তাই নয় দেশের ভাবী নাগরিকদের পাঠ্যপুস্তকে ধর্মের পোকা ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে৷ একে আটকাতে হবে৷তাদের ভাবনায় তাদের চিন্তায় তাদের চেতনায় সঠিক বোধগুলো নিয়ে যেতে হবে৷ ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে সঙ্গে সমাজকেও এ সব বিষয়ে সচেতন করতে হবে৷
আজ রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে ৫৬ তম শিক্ষক দিবস অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার একথা বলেন৷ পাশাপাশি তিনি উদ্বেগের সূরে বলেন, যারা ধর্মনিরপেক্ষতার নামে দেশের সার্বভৌমত্বের উপর আঘাত হানছে তারাই এই দেশকে হিন্দু রাষ্ট্র করতে চাইছেঠ৷ তাই তিনি মনে করেন ধর্মীয় সংকীর্ণতার উর্দ্ধে উঠে ঐক্য ধরে রাখতে না পারলে স্বাধীনতার স্বার্থকতা মিলবে না৷
আজ শিক্ষক দিবসে শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক অপরাজিতা রায়কে পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সম্মান ২০১৭ সম্মানিত করা হয়৷ মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার তাঁর হাতে মানপত্র, স্মারক উপহার তুলে দেন৷ মুখ্যমন্ত্রী শিক্ষক দিবসের স্মরণিকা শিক্ষা সমাচারের আবরণও উন্মোচন করেন৷ এই অনুষ্ঠানে ২০ জন কর্মরত শিক্ষক-শিক্ষিকা, ৬০ জন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক- শিক্ষিকাকে শিক্ষকতায় বিশেষ অবদানের জন্য সংবর্ধনা দেওয়া হয়৷ আজ এই অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সমাজ কল্যাণ ও সমাজ শিক্ষা মন্ত্রী বিজিতা নাথ৷ সভাপতিত্ব করেন শিক্ষা মন্তরী তপন চক্রবর্তী৷ বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুখ্য সচিব সঞ্জীব রঞ্জন, এম বি বি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গৌতম কুমার বসু, উচ্চশিক্ষা দপ্তরের অধিকর্তা ড বি পালিত৷ স্বাগত বক্তব্য রাখেন মধ্যশিক্ষা অধিকারের অধিকর্তা ইউ কে চাকমা৷ অনুষ্ঠানের শুরুতে অতিথিগণ ড সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান৷
অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার৷ প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি মহান শিক্ষক ড সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন৷ তিনি বলেন, দেশে এক জটিল পরিস্থিতিতে আজ শিক্ষক দিবস পালন করা হচ্ছে৷ দেশের শিক্ষা কাঠামোয় আক্রমণ নেমে আসছে৷ শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে রাষ্ট্রের ধারক বাহকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে৷ স্বাধীনতার এত বছর পরও বিরাট অংশের মানুষ গরীব৷ দেশের আট থেকে দশ শতাংশ মানুষের বিত্ত বৈভরের অভাব নেই৷ ছেলেমেয়েদের পড়াশুনার ব্যয় ভার তারাই বহন করতে পারেন৷ এর বাইরে কোটি কোটি ছেলেমেয়ে কি ভাবে পড়াশুনা করবে? লক্ষ্য করা গেছে গত কয়েক বছরে শিক্ষা ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় বাজেটে ব্যয় বরাদ্দ কমছে৷ এ কথা ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে বেসরকারী সুকলেই ভাল পড়াশুনা হয়৷ কেন্দ্রীয় সরকারের অনেকেই ভাবতে শুরু করেছে শিক্ষা ব্যবস্থাকে বেসরকারী হাতে তুলে দেওয়ার৷ সরকার সুকল কলেজ করে দিলেও এর পরিচালন ভার বেসরকারী হাতে তুলে দেওয়া হবে৷ তারা শিক্ষা ব্যবস্থাকে পণ্যে পরিণত করার চেষ্টা করছে৷ এই ব্যবস্থা চালু হলে জাতির সামনে অমানিশা ঘনিয়ে আসবে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সর্বনাশা এই চিন্তার বিরুদ্ধে সবাইকে প্রতিবাদে সোচ্চার হতে হবে৷ সংঘবদ্ধভাবে আন্দোলন করতে হবে৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা সবাই চাই সন্তানরা চিন্তা ভাবনা চেতনায় মানুষের মতো মানুষ হোক৷ তাদের তৈরী কররা দায়িত্ব বাড়িতে মা, বাবা, বড়রা এবং সুকলে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের৷ ভাল মানুষ হতে গেলে তাদের এক জাতি এক প্রাণ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে৷ একথা তাদের উপলব্দির মধ্যে নিয়ে যেতে হবে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশকে বিশ্বে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে নিয়ে যেতে ঐক্য চেতনায় তাদের সুসংহত করতে হবে৷ তিনি বলেন, আমাদের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলা হয়েছে৷ এর মূল কথা হলো রাষ্ট্রের কোনও ধর্ম থাকবেনা৷ সব ধর্ম সমান৷ কিন্তু গত কয়েক বছরে দেশের ধর্মনিরপেক্ষতায় আঘাত আসছে৷ একটি শক্তি ভারতকে একটি নির্দিষ্ট ধর্মের অনুসারি করতে চাইছে৷ তাতে আমাদের দেশের এখতা সংহতি নষ্ট হবে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের শুধু পরীক্ষায় পাশ করার পাঠ দিলেই হবে না৷ দেশপ্রেম, মানবিক মুল্যবোধের আবেদন, মানুষকে হিসেবে গণ্য করার ভাবনা ছেলেমেয়েদের মধ্যে নিয়ে যেতে হবে৷ জারি পথ প্রদর্শকের ভূমিকা নিতে হবে৷
আলোচনায় অংশ নিয়ে অনুষ্ঠানের সভাপতি শিক্ষা মন্ত্রী তপন চক্রবর্তী শিক্ষক – শিক্ষিকাদের অভিনন্দন জানান৷ তিনি বলেন, রাজ্যে শিক্ষার সামগ্রিক এবং উৎকর্ষগত বিকাশ হচ্ছে৷ এই ক্ষেত্রে শিক্ষক – শিক্ষিকাদেরও বিরাট ভূমিকা আছে৷ শিক্ষার বিকাশে ত্যাগ ও সেবার মানসিকতা নিয়ে তাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান শিক্ষামন্ত্রী৷ বিশেষ অতিথি সমাজ কল্যাণ ও সমাজ শিক্ষা মন্ত্রী বিজিতা নাথ বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থাকে আয়ের পথ হিসেবে চিন্তা করা হচ্ছে৷ শিক্ষা ব্যবস্থাকে বেসরকারি হাতে তুলে দিলে শিক্ষাকে সার্বজনীন করা যাবেনা৷ তিনি বলেন, ভারতে প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ দুবেলা খেতে পায়না৷ টাকার বিনিময়ে শিক্ষার ব্যবস্থা হলে তারা কি ভাবে পড়াশুনা করবে? শিক্ষাকে যে ভাবে ব্যবসায়ের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হচ্ছে তাতে বিদ্যালয় চলো অভিযান কথার কথাই থেকে যাবে৷ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন মুখ্য সচিব সঞ্জীব রঞ্জন, এম বি বি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গৌতম কুমার বসু, উচ্চ শিক্ষা দপ্তরের অধিকর্তা ড বি পালিত৷ স্বাগত বক্তব্য রাখেন মধ্যশিক্ষা অধিকারের অধিকর্তা ইউ কে চাকমা৷ অনুষ্ঠানে রাজ্যের এগারটি বিদ্যালয়কে তাদের উল্লেখযোগ্য ভূমিকার জন্য পুরসৃকত করা হয়৷ অতিথিগণ বিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন৷