পঞ্চায়েতে আসেন না সচিব ও জিআরএসরা জেনে শুনে ব্যবস্থা নিচ্ছেন না ব্লক আধিকারীক

নিজস্ব প্রতিনিধি, চুরাইবাড়ি, ২৬ আগস্ট৷৷ বাম সরকারের তথাকথিত মডেল রাজ্যের এক আজব গ্রাম পঞ্চায়েত৷ এই আজব গ্রাম পঞ্চায়েতের দৃশ্য দেখলে স্বয়ং পঞ্চায়েত মন্ত্রী মানিক দে মহোদয়ের চোখ কপালে উঠবে তা নিশ্চিত৷ এই দৃশ্য উত্তর জেলার কদমতলা ব্লকের অঘীন বাংলাদেশ সীমান্ত সাত গঙ্গম গ্রাম পঞ্চায়েতের৷ এই গ্রাম পঞ্চায়েতের একজন পঞ্চায়েত সচিব রয়েছেন এবং দুইজন গ্রাম সেবক অর্থাৎ জিআরএস রয়েছেন৷ উনারা কাগজে কলমে থাকলেও বাস্তবে উনারা কোথায় ডিউটি করছেন? সাত সঙ্গম গ্রাম পঞ্চায়েতের পঞ্চায়েত সচিব মানিক লাল দত্ত নিয়মিত পঞ্চায়েতে আসেন না৷ এমনকি দুজন গ্রাম সেবকও সচিবের পথে পা দিয়েছেন৷ দিনের পর দিন কোন সরকারি কর্মচারীরা পঞ্চায়েতে আসেনা৷ একজন গ্রামের মহিলাকে দিয়ে সকালে পঞ্চায়েত অফিস খোলানো এবং বিকেলে বন্ধ করান পঞ্চায়েত সচিব৷ গ্রামের ঐ মহিলা দীর্ঘ ৮ বৎসর যাবৎ পঞ্চায়েতটি খোলা লাগানোর কাজ করে আসছেন৷ মাঝে মধ্যে জাড়ু সাফাইও করে থাকেন৷ ঐ মহিলা রেখা রানী দাস৷ তার বিনিময়ে ঐ মহিলাকে ৩শ টাকা দেওয়া হয়৷ সেই ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনা স্থলে ছুটে যায় আমাদের প্রতিনিধি৷ সেখানে গিয়ে ঠিক একই ছবি পরিলক্ষিত হয়৷ গ্রাম পঞ্চায়েত খোলা কিন্তু কোন কর্মচারী নেই৷ তখন বিকাল ৩১৮ মিনিট৷ পঞ্চায়েতের অধিন সাধারন জনগণ পঞ্চায়েত এসে সচিবের অপেক্ষায় দিনের পর দিন বসে থাকতে হয়৷ দিনের পর দিন এভাবে সচিব ও দুই জিআরএস অফিস কামাই করে যাচেছন৷ উপস্থিত জনগণ উনাদের মনের ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেন, এই পঞ্চায়েতে সচিব ও জিআবএসগণ আসার জন্য পাগল, কারন ত্রিপুরা বাংলাদেশ সীমান্ত হওয়াতে এবং কদমতলা ব্লক থেকে অনেকটা দূর হওয়াতে বাড়ি বসে ঠিক সরকারি অর্থ হাতিয়ে নিতে সমস্যা হয়না৷ দুপুর ৩১৮ বাজলেও পঞ্চায়েতের সবকটি চেয়ার খালি৷ পাশাপাশি গোটা পঞ্চায়েতটি মেরামতির কোন উদ্যোগ নেই৷ ভেঙ্গে, ফেটে পড়ে, চুরমার সাত সঙ্গম গ্রাম পঞ্চায়েত৷ এক ভুতুরে বাড়ীতে পরিণত হয়েছে সাত সঙ্গম গ্রাম পঞ্চায়েত৷ এলাকাবাসীদের অভিযোগ, উনারা দীর্ঘ ৮ বৎসর যাবৎ যন্ত্রণা সহ্য করে আসছেন৷ সচিব ও জিআরএসরা সাত সঙ্গম গ্রাম পঞ্চায়েতে যাবার পর অফিস কামাই করতে শুরু করে দেন৷ সাপ্তাহে এক দুদিন আসেন কিনা তাও সন্দেহ৷ পঞ্চায়েতের কোন দরকারি কাজের জন্য দিনের পর দিন পঞ্চায়েত সচিব ও জিআরএসদের আশায় পথ চেয়ে বসে থাকতে হয়৷ গ্রামবাসীরা আরও বলেন, সিপিআইএম পরিচালিত সাত সঙ্গম গ্রাম পঞ্চায়েতের নির্বাচিত প্রধান মেম্বাররা দীর্ঘ ৮ বৎসর যাবৎ স্থানীয় শাসকদলীয় এক মহিলাকে দিয়ে প্রতিনিয়ত সকাল বিকেল খোলা লাগানোর কাজ করে আসছেন৷
এদিকে খোলা লাগানোর কাজে নিয়োজিতরেখা রানী দাসের বক্তব্য, তিনি নাকি মাসে ৩০০ টাকার বিনিময়ে দীর্ঘ আট বৎসর যাবৎ অফিস খোলা লাগানোর কাজ করে আসছেন৷ স্থানীয় পঞ্চায়েত মেম্বারগণ উনাকে এই কাজের জন্য রেখেছেন৷ অপরদিকে এ বিষয়ে কদমতলা ব্লকের ব্লক আধিকারিক বৈজয়ন্ত দাস জানান, এ ব্যাপারটা উনার নজরেও আছে৷ সাত সঙ্গম গ্রাম পঞ্চায়েতের সচিব ও দুই জিআরএস কে শোকজও করেছিলেন৷ এমন কি এক মাসের বেতন আটকে রেখেছেন পঞ্চায়েত সচিব মানিক লাল দত্তের৷ বিডিও সংবাদ কর্মীদের সামনে আরও বলেন, ব্লক থেকে অনেক দূর এই গ্রাম পঞ্চায়েত৷ প্রায় বাংলাদেশ সীমান্ত, সেই কারনে সেই সুযোগটা ওরা কাজে লাগাচ্ছে৷ তবে বিডিও বৈজয়ন্ত দাস জানিয়েছেন অতিসত্বর সচিব ও জিআরএসদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন৷