নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৫ জুলাই৷৷ রাজ্যে শান্তির আবহকে বিষাক্ত করার চেষ্টা হচ্ছে, এর বিরুদ্ধে ছাত্র সমাজকে অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে৷ দেশের মধ্যে একটা অস্বাভাবিক অস্থিরতা চলছে৷ নাগরিক জীবনে নেমে এসেছে আঘাত৷ ধর্মের নামে -সম্প্রদায়ের নামে-জাতের নামে বিভেদ সৃষ্টি করা হচ্ছে৷ এসবের বিরুদ্ধে কিছু বললেই চরম অসহিষ্ণুতার প্রকাশ ঘটছে৷ হরণ করা হচ্ছে সাংবিধানিক অধিকার৷ এ সবের বিরুদ্ধে আমাদের ছাত্র সমাজকেই অগ্রণী ভূমিকা নিয়ে রুখে দাঁড়াতে হবে৷ আজ আগরতলার রামঠাকুর মহাবিদ্যালয়ের গৌরবময় সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসবের সূচনা করে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার একথা বলেন৷ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার বলেন, দেশের মধ্যে ত্রিপুরা একটা ছোট্ট রাজ্য কিন্তু সুন্দর৷ ত্রিপুরা তার সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য নিয়ে দেশের মধ্যে মাথা তুলে ধাঁলিয়েছে৷ তিনি বলেন, আমাদের রাজ্যে গণতান্ত্রিক পরিবেশের একটা পরিমন্ডল রয়েছে৷ মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে৷ কিন্তু রাজ্যের শান্তির আবহকে বিষাক্ত করার চেষ্টা হচ্ছে৷ এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে৷ ছাত্র সমাজকে নিতে হবে অগ্রণী ভূমিকা৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের শাশ্বত সংসৃকতি ও ঐতিহ্যের বেদী মুলেও আজ আঘাত নেমে এসেছে৷ স্বৈরাচার এমন ভাবে মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে যে রেহাই পাচ্ছে না আমাদের দেশের গর্ব নোবেল জয়ী অমর্ত্য সেনও৷ মুখ্যমন্ত্রী সবাইকে সজাগ ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন৷ মুখ্যমন্ত্রী আজকের ছাত্র সমাজের উদ্দেশ্যে বলেন, শুধু পাশের জন্য পাশ করা নয়৷ রাজ্যে শিক্ষার যে সুবর্ণ সুযোগ তৈরী হয়েছে তাকে কাজে লাগিয়ে বড় মানুষ হতে হবে৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আজ থেকে ৫০ বছর আগে রামঠাকুর মহাবিদ্যালয়ের সূচনা হয়েছিল৷ সেই ১৯৬৭ সালে৷ সেই সময়ে একটি বেসরকারি কলেজ চালু করা সহজ বিষয় ছিল না৷ দৃঢ়তা ও আত্মপ্রত্যয় না থাকলে এটা সম্ভব নয়৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আজ রাজ্যে উচচ শিক্ষার যে প্রসার হয়েছে, অগ্রগতি ঘটে চলেছে তার বিচারে হয়তো একটা কলেজ বা সুকল স্থাপন এমন কিছু ঘটনা নয়৷ কিন্তু সেই সময়ের বিচারে তা ছিল এক অসাধারণ ঝুঁকিপূর্ণ ঘটনা৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সেই সময়ে রাজ্যে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ বলতে ছিল আগরতলার এম বি বি কলেজ ও মহিলা মহাবিদ্যালয়৷ এই দুটি সরকারি কলেজ৷ আর কৈলাসহরে বেসরকারি উদ্যোগে রামকৃষ্ণ মহাবিদ্যালয় এবং বিলোনীয়ায় একটি বেসরকারি কলেজ৷ সব মিলিয়ে এই ছিল উচ্চ শিক্ষার পরিকাঠামো৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রামঠাকুর মহাবিদ্যালয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী রাজ্যের একটা গৌরবময় অধ্যায়৷ শুধু অনুষ্ঠানের মধ্যেই আবদ্ধ থেকে ও সাংসৃকতিক অনুষ্ঠান করেই সুবর্ণ জয়ন্তী অনুষ্ঠান উৎসব পালন করলে চলবেনা৷ এই অনুষ্ঠান হোক ইতিহাসের সালতামামি৷ অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার মহাবিদ্যালয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষ্যে প্রকাশিত স্মরণিকার আবরণ উন্মোচন করেন৷ মহাবিদ্যালয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সম্মাননা জ্ঞাপন করা হয় মহাবিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রমোদ রঞ্জন ভট্টের নিকটাত্মীয়া শ্রীমতি শোভা ভট্ট, মহাবিদ্যালয়ের প্রথম অধ্যক্ষ ড রবীন্দ্রনাথ দাশশাস্ত্রী ও মহাবিদ্যালয়ের প্রাক্তণ ছাত্রী রাজ্যসভার সাংসদ শ্রীমতি ঝর্ণা দাস বৈদ্যকে৷ মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার তাদের হাত স্মারক উপহার তুলে দেন৷ মহাবিদ্যালয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষ্যে এলামনি এসোসিয়েশনর পক্ষ থেকে মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে পাঁচ হাজার টাকা দান করা হয়৷ এলামনি এসোসিয়েশনের সভাপতি সুকুমার দেবনাথ ও সম্পাদক নবারুণ দেব মুখ্যমন্ত্রীর হাতে এই অর্থ তুলে দেন৷
তিনদিন ব্যাপী এই উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শুরুতে মুখ্যমন্ত্রী মহাবিদ্যালয়ে আয়োজিত রক্তদান শিবিরেরও উদ্বোধন করেন এবং মহাবিদ্যালয় চত্বরে সুবর্ণ জয়ন্তী বৃক্ষ রোপণ করেন৷
2017-07-16

