রাজ্য সরকার এবং আগরতলা পুরনিগম চেষ্টা করছে পরিকল্পনা মাফিক বিভিন্ন প্রকল্প রূপায়ণের মাধ্যমে আগরতলাকে আধুনিক শহরে পরিণত করতে: মুখ্যমন্ত্রী

আগরতলা, ৩০ ডিসেম্বর: বর্তমান রাজ্য সরকার রাজ্যের সব অংশের মানুষের সরকার। এই সরকার কাজের মধ্য দিয়ে মানুষের বিশ্বাস ও আস্থা অর্জন করতে চায়। মানুষের সমস্যা দূর করতে রাজ্য সরকার বিভিন্ন প্রকল্প রূপায়ণ করছে। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, পানীয়জল, বিদ্যুৎ পরিষেবা সহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে রাজ্য সরকার বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করে কাজ করছে। আজ আগরতলা পুরনিগমের ৩২ নং ওয়ার্ডের নেতাজি আদর্শ শিক্ষা মন্দির প্রাঙ্গণে ৫টি প্রকল্পের ভূমিপুজন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা একথা বলেন।

মুখ্যমন্ত্রী একযোগে নেতাজি আদর্শ পল্লিতে ৫.৫০ এম.এল.ডি. ক্ষমতাসম্পন্ন ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, বাণীবিদ্যাপীঠ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ১ হাজার কিলোলিটার ক্ষমতাসম্পন্ন পানীয়জলের ওভারহেড ট্যাঙ্ক স্থাপন, ৩২ নং ওয়ার্ড ও সংলগ্ন এলাকায় ৫টি ডিপ টিউবওয়েল খনন, পুরনিগম এলাকায় ১ হাজার পরিবারের জন্য পানীয়জলের সংযোগ প্রদানের ব্যবস্থা এবং ১২ কিলোমিটার নতুন পানীয় জলের পাইপ লাইন সম্প্রসারণের কাজের ভিত্তিপ্রস্তর ও ভূমিপূজন করেন।

অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রতিদিনই মানুষের পরিস্তুত পানীয়জল প্রয়োজন। রাজ্য সরকার জল জীবন মিশনের মাধ্যমে রাজ্যের গ্রাম, পাহাড় থেকে শুরু করে সর্বত্র বিশুদ্ধ পানীয়জল পৌঁছে দেওয়ার কাজ করছে। একইভাবে আগরতলা পুরনিগম এলাকায় প্রতিটি বাড়িতে বিশুদ্ধ পানীয়জল পৌঁছে দেওয়ার কাজ চলছে। ত্রিপুরা জল বোর্ডের মাধ্যমে আজ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা প্রকল্পগুলি রূপায়ণে ব্যয় হবে ২২ কোটি ৫৫ লক্ষ টাকা। প্রসঙ্গক্রমে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আগরতলা শহরে উন্নয়নমূলক কাজ করতে গিয়ে মানুষের সাময়িক অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। দীর্ঘকালীন সমস্যার সমাধানে মানুষের কিছুটা সমস্যা হলেও অদূর ভবিষ্যতে মানুষ আরও ভালো নাগরিক পরিষেবা পাবেন। রাজ্য সরকার এবং আগরতলা পুরনিগম চেষ্টা করছে পরিকল্পনা মাফিক বিভিন্ন প্রকল্প রূপায়ণের মাধ্যমে আগরতলাকে আধুনিক শহরে পরিণত করতে। আগরতলা স্মার্ট সিটি প্রকল্পে এখন পর্যন্ত ৫৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬৫টি বৃহৎ প্রকল্প রূপায়ণ করা হয়েছে। প্রতিটি কাজই করা হচ্ছে আগরতলা শহরকে স্বচ্ছ, সুন্দর ও নাগরিক পরিষেবার সুব্যবস্থার জন্য। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, শুধু আগরতলা শহরই নয়, রাজ্যের জনজাতি এলাকাগুলিতেও পানীয়জলের সুব্যবস্থা করতে রাজ্য সরকার কাজ করছে।

নল সে জল কর্মসূচির মাধ্যমে প্রায় ৮৫ শতাংশ মানুষের বাড়িতে পানীয়জলের সংযোগ পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। রাজ্য সরকারের লক্ষ্য ১০০ শতাংশ মানুষের বাড়িতে পানীয়জলের সংযোগ পৌঁছে দেওয়া। আগরতলা শহরের উন্নয়নের পাশাপাশি রাজন্য আমলের ইতিহাস এবং বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া স্থানগুলি পুনরুদ্ধারের কাজও চলছে। নতুনভাবে জ্যাকশন গেইট গড়ে তোলা হবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আন্দোলনের নামে অশান্তির সৃষ্টি হলে উন্নয়ন ব্যাহত হয়। আমাদের একটাই পরিচয় আমরা ভারতবাসী। নিজ নিজ এলাকায় শান্তি, সম্প্রীতি রক্ষা করে সব অংশের মানুষকে উন্নয়নের কাজে শামিল হতে মুখ্যমন্ত্রী আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন আগরতলা পুরনিগমের মেয়র তথা বিধায়ক দীপক মজুমদার। তিনি বলেন, বর্ধিত পুরনিগম এলাকাতে অতীতে পানীয়জল, পয়ঃপ্রণালীর ব্যবস্থা, রাস্তা, বিদ্যুৎ পরিষেবা ভালো ছিল না। বর্তমানে এই সব পরিষেবা নাগরিকদের কাছে পৌঁছে দিতে পুরনিগম কাজ করে যাচ্ছে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ও বক্তব্য রাখেন আগরতলা পুরনিগমের সেন্ট্রাল জোনের চেয়ারম্যান রত্না দত্ত। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আগরতলা পুরনিগমের ডেপুটি মেয়র মণিকা দাস দত্ত, পুরনিগমের কমিশনার ডি.কে. চাকমা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন নগরোন্নয়ন দপ্তরের সচিব অভিষেক সিং। সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য রাখেন পুরনিগমের সি.ই.ও. মিহির কান্তি গোপ। অনুষ্ঠানে জল বোর্ডের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের ভিডিও ক্লিপিং দেখানো হয়। অমরুত প্রকল্পে উল্লেখযোগ্য কাজের জন্য স্বসহায়ক দলের ৩ জন কর্মীকে মুখ্যমন্ত্রী পুরস্কৃত করেন।

আজ সকালে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা মহারাণী তুলসীবতী বালিকা বিদ্যালয় সংলগ্ন স্থানে জ্যাকশন গেইট পুনর্নির্মাণ করার জন্য এলাকা পরিদর্শন করেন। তিনি গেইট নির্মাণের বিষয়ে খোঁজখবর নেন। সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানান, রাজ্য সরকার ত্রিপুরার প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরতে চায়। এজন্য রাজন্য স্মৃতি বিজড়িত স্থানগুলি পুনরুদ্ধারের কাজ চলছে। জায়গা পরিদর্শনের সময় আগরতলা পুরনিগমের মেয়র বিধায়ক দীপক মজুমদার, পূর্ত দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্য, পুরনিগমের কমিশনার ডি.কে. চাকমা সহ সংশ্লিষ্ট আধিকারিকগণ উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply