উন্নাও নির্যাতিতা ও তাঁর মাকে হেনস্থা, চলন্ত বাস থেকে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ সিআরপিএফ-এর বিরুদ্ধে

নয়াদিল্লি, ২৪ ডিসেম্বর : রাজধানীর বুকে বিচারপ্রার্থী উন্নাও গণধর্ষণ মামলার নির্যাতিতা ও তাঁর মায়ের ওপর নিরাপত্তা বাহিনীর বর্বরোচিত আচরণের সাক্ষী থাকল দেশ। প্রাক্তন বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সিং সেঙ্গারের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড স্থগিত করার প্রতিবাদে সরব হওয়া এই পরিবারটিকে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে বাধা দেওয়ার পাশাপাশি, চলন্ত বাস থেকে নির্যাতিতার বৃদ্ধা মাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠল সিআরপিএফ জওয়ানদের বিরুদ্ধে।

উন্নাওয়ের নির্যাতিতা, তাঁর মা এবং সমাজকর্মী যোগিতা ভায়ানা মঙ্গলবার রাতে ইন্ডিয়া গেটে বিক্ষোভ দেখানোর সময় আটক হন। আজ সকালে মা ও মেয়ে মান্ডি হাউসে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। সিআরপিএফ পাহারায় বাসে করে তাঁদের নিয়ে যাওয়ার সময় বাসটি মান্ডি হাউসে থামানো হয়নি। সিআরপিএফ কর্মকর্তাদের দাবি, ওই এলাকায় প্রতিবাদের কোনো অনুমতি ছিল না। তাঁদের যন্তর মন্তর অথবা বাড়িতে ফেরত নিয়ে যাওয়ার কথা জানানো হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি এবং সংবাদমাধ্যমের ফুটেজে দেখা গেছে, বাসটি যখন চলছিল, তখন নির্যাতিতার মা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করছিলেন। অভিযোগ, বাসে থাকা সিআরপিএফ কর্মীরা তাঁকে কনুই দিয়ে ধাক্কা মেরে বাস থেকে নেমে যেতে বাধ্য করেন। শেষ পর্যন্ত চলন্ত বাস থেকেই তাঁকে একপ্রকার রাস্তায় ফেলে দেওয়া হয়। আশ্চর্যের বিষয় হলো, নির্যাতিতা এবং তাঁর মা—দুজন নারী যাত্রী থাকা সত্ত্বেও ওই বাসে কোনো মহিলা সিআরপিএফ কর্মী ছিলেন না।

রাস্তায় পড়ে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়া মা সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা বিচার পাইনি। আমার মেয়েকে ওরা বন্দি করে রেখেছে। মনে হচ্ছে ওরা আমাদের মেরে ফেলতে চায়। সিআরপিএফ আমাকে রাস্তায় ফেলে দিয়ে ওকে ছিনিয়ে নিয়ে গেল।”

দিল্লি হাইকোর্ট মঙ্গলবার সেঙ্গারের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড স্থগিত করে শর্তসাপেক্ষ জামিন মঞ্জুর করেছে। এই রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে নির্যাতিতা প্রশ্ন তোলেন, “বিচার বিভাগ আমাদের সাথে এমনটা কী করে করতে পারল? উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনের ঠিক আগেই সেঙ্গারকে এই স্বস্তি দেওয়া হলো।” তিনি আরও জানান, সেঙ্গারের ক্ষমতা ও অর্থের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে গত আট বছরে তাঁর পরিবার সব হারিয়েছে। অবিলম্বে সুপ্রিম কোর্টে এই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।

আদালতের মতে, ২০১৯ সালের আগে পকসো আইন অনুযায়ী বিধায়ককে ‘পাবলিক সার্ভেন্ট’ হিসেবে গণ্য করা হতো না, যার ফলে তাঁর ন্যূনতম সাজা সাত বছর হতে পারে। যেহেতু সেঙ্গার সাত বছরের বেশি সময় জেলে কাটিয়েছেন, তাই তাঁর আপিল চলাকালীন সাজা স্থগিত করা হয়েছে। তবে ১৫ লক্ষ টাকার বন্ড এবং নির্যাতিতার বাড়ির ৫ কিমি এলাকার মধ্যে না ঢোকার মতো একাধিক কড়া শর্ত চাপানো হয়েছে। এছাড়া, নির্যাতিতার বাবার মৃত্যু সংক্রান্ত মামলায় ১০ বছরের সাজা প্রাপ্ত হওয়ায় সেঙ্গার এখনই জেল থেকে বেরোতে পারছেন না।

উন্নাওয়ের এই ঘটনার পর রাজধানীর নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং নির্যাতিতা পরিবারের সুরক্ষা নিয়ে ফের বড়সড় প্রশ্ন উঠে গেল।

Leave a Reply