বর্তমান কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার পরিকল্পিতভাবে তাদের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী ‘মনু সংহিতা’-র মনুবাদী দর্শন দেশের রাজনীতিতে চালু করতে চাইছে: কংগ্রেস

আগরতলা, ৫ অক্টোবর: বর্তমান কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার পরিকল্পিতভাবে তাদের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী ‘মনু সংহিতা’-র মনুবাদী দর্শন দেশের রাজনীতিতে চালু করতে চাইছে। বিশেষ করে মোদি-শাহ নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারের ১১ বছরের শাসনামল ও রাজ্যে ‘ডাবল ইঞ্জিন’ সরকারের কর্মকাণ্ডে এই ধারা স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আজ সাংবাদিক সম্মেলনে এমনটাই অভিযোগ করেন প্রদেশ কংগ্রেস মুখপাত্র প্রবীর চক্রবর্তী।

তিনি বলেন, “মনুতে নারীকে শুধুমাত্র সন্তান উৎপাদনের যন্ত্র ও দাসীবাদের ভাবনায় ধরা হয়েছে। এই ধারণা দেশের অর্ধেক মহিলাদের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও বৈষম্যের প্রকাশ।” দলের পক্ষ থেকে উল্লেখ করা হয়েছে যে, মোদি সরকারের তথ্য বিকৃতির মাধ্যমে প্রচারমাধ্যম ও আইটি সেল ব্যবহার করে এ ধরনের বাস্তবতা আড়াল করার চেষ্টা চালাচ্ছে।

প্রদেশ কংগ্রেস নারী ও শিশুদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগ প্রকাশ করে আরবিআই ও জাতীয় বিভিন্ন সংস্থার তথ্য তুলে ধরেছে। ২০২৫ সালের মার্চে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, দেশে ৫৭% নারী ও ৫২% শিশু অপুষ্টিজনিত রোগে আক্রান্ত, আর ত্রিপুরায় এই সংখ্যা যথাক্রমে ৬৬% ও ৬২%।

দলের অভিযোগ, “ত্রিপুরায় নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা সংকট ক্রমবর্ধমান। ধর্ষণ, গণধর্ষণ, খুন ও যৌন নির্যাতনের ঘটনা প্রতিদিন ঘটছে, গ্রেফতার মাত্র ২৫%।” বিশেষ করে উল্লেখ করা হয়েছে—২০১৮ সালে ‘ত্রিপল ইঞ্জিন’ সরকারের ক্ষমতায় আসার পর থেকে নিরপরাধ যুবতিদের উপর প্রকাশ্যে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।

প্রদেশ কংগ্রেস আরও জানায়, “মোদির ১১ বছরে ৯ কোটি ৫ লক্ষ মহিলাই কাজের জগৎ থেকে হারিয়ে গেছেন, নারী সংরক্ষণ পদ পূরণ কার্যত ব্যর্থ হয়েছে, আর শহরে বসবাসকারী ৪০% মহিলা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।” পাশাপাশি, ন্যাশনাল ক্রাইম ব্যুরোর রিপোর্টে মোদি শাসনে নারী-ঘটিত অপরাধের সংখ্যা ২৮% বৃদ্ধি পেয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

দল প্রধান নারীদের প্রতি সরকারের “বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও” প্রকল্পের কার্যকারিতা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, প্রকল্পের অর্থের ৮০% বিজ্ঞাপনী প্রচারে ব্যবহার হয়েছে, প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য পুরোদস্তুর অগ্রাহ্য হয়েছে।

শ্রীমতী বিজয়া রাহাতকারের মতামত উদ্ধৃত করে প্রদেশ কংগ্রেস উল্লেখ করেছে যে নারী নিরাপত্তা কেবল আইনশৃঙ্খলার প্রশ্ন নয়, এটি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান ও চলাফেরার স্বাধীনতার সঙ্গে জড়িত। “যখন মহিলারা নিরাপদ বোধ করতে পারেন না, তখন দেশের উন্নয়ন থেমে যায়।”

দলের পক্ষ থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে—এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের সকল মহিলাদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করে, নারী নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক দাবি বাস্তবায়নের জন্য লাগাতার গণ-আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। প্রদেশ কংগ্রেস প্রতিজ্ঞা করেছে, তারা এ উদ্যোগে সর্বাত্মকভাবে এগিয়ে আসবে।