জাতিসংঘে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মার্কো রুবিও, “ভারতের গুরুত্ব অপরিসীম” — জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠকে বাণিজ্য ও কৌশলগত অংশীদারত্বে জোর

নিউ ইয়র্ক, ২৩ সেপ্টেম্বর : জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের উচ্চপর্যায়ের অধিবেশনের ফাঁকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর এবং মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও-র মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হল সোমবার। বৈঠকে দুই দেশই বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা, জ্বালানি, ওষুধ, গুরুত্বপূর্ণ খনিজ এবং কৌশলগত সহযোগিতা সহ একাধিক বিষয়ে “টেকসই সংলাপ” বজায় রাখার উপর গুরুত্ব আরোপ করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট বৈঠকের পর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “ভারত-আমেরিকা সম্পর্ক আমাদের জন্য অপরিসীম গুরুত্বপূর্ণ। বাণিজ্য সহ একাধিক ক্ষেত্রে ভারতের অব্যাহত অংশগ্রহণকে আমরা স্বাগত জানাই।”

রুবিও আরও জানান, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে মুক্ত এবং উন্মুক্ত পরিবেশ বজায় রাখার লক্ষ্যে কোয়াড-এর মাধ্যমে দুই দেশ একসঙ্গে কাজ চালিয়ে যাবে। উল্লেখযোগ্যভাবে, এই মন্তব্য এমন সময়ে এল যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যের উপর ৫০ শতাংশ ট্যারিফ বসিয়েছেন এবং ভারতের বিরুদ্ধে একাধিক কড়া মন্তব্য করেছেন।

জয়শঙ্কর পরে এক্স-এ পোস্টে লেখেন, “নিউ ইয়র্কে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে সাক্ষাৎ হল। দ্বিপাক্ষিক ও আন্তর্জাতিক একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হল। অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ক্ষেত্রগুলিতে টেকসই অংশীদারিত্ব বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ—এই বিষয়ে আমরা একমত। আমরা নিয়মিত যোগাযোগ রাখব।”

বৈঠকের আগে দুই নেতা মিডিয়ার সামনে হাসিমুখে করমর্দন করেন, যদিও কোনও প্রশ্ন নেননি। এই সাক্ষাৎ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক মেরামতের পথে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ বলে মনে করছেন কূটনৈতিক মহল।

এর পাশাপাশি, মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ারের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়ালের নিউ ইয়র্কে সাক্ষাতের মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির প্রথম পর্বের আলোচনাও শুরু হয়েছে বলে সূত্রের খবর। কিছু বিষয় নিয়ে মতপার্থক্য থাকলেও, শীঘ্রই একটি অন্তর্বর্তী চুক্তিতে পৌঁছনোর ব্যাপারে দুই পক্ষই আশাবাদী।

সম্প্রতি, ১৬ সেপ্টেম্বর মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধিদের একটি দল দিল্লি সফরে এলে ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রকের বিশেষ সচিব রাজেশ আগরওয়ালের সঙ্গে তাঁদের বৈঠক হয়। এই আলোচনাকে “ইতিবাচক” বলেই বর্ণনা করেছে উভয় পক্ষ।

যদিও বাণিজ্য ও কৌশলগত আলোচনা এগিয়ে চলেছে, তবুও সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভারত সম্পর্কে মিশ্র সুরে কথা বলছেন। কিছুদিন আগেই তিনি ভারতের অর্থনীতিকে “মৃতপ্রায়” বলে কটাক্ষ করেছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ৭৫তম জন্মদিনে ট্রাম্প তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়ে ট্রুথ সোশ্যাল-এ লেখেন, “তিনি একটি অসাধারণ কাজ করছেন… রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধের অবসানে আপনার সমর্থনের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।”

জবাবে প্রধানমন্ত্রী মোদী এক্স-এ লেখেন, “আপনার মত, আমিও ভারত-মার্কিন ব্যাপক এবং বৈশ্বিক অংশীদারিত্বকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

জয়শঙ্কর ও রুবিওর মধ্যে এই বৈঠক ছিল চলতি বছরের মধ্যে তৃতীয়। এর আগে তাঁরা জানুয়ারি ও জুলাইয়ে পৃথকভাবে সাক্ষাৎ করেছিলেন, যার মধ্যে অন্যতম ছিল ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত ১০ম কোয়াড পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক। এবারের বৈঠক জাতিসংঘের ৮০তম সাধারণ অধিবেশনের পার্শ্ববর্তী আলোচনার অংশ হিসেবে অনুষ্ঠিত হয়েছে, যা চলবে ২৩ থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।

বৈঠকের পর জয়শঙ্কর আরও সাক্ষাৎ করেন যুক্তরাষ্ট্রের ভারতে মনোনীত রাষ্ট্রদূত সার্জিও গরের সঙ্গে, যিনি ট্রাম্পের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক বিশেষ দূত হিসেবেও মনোনীত হয়েছেন। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট এক্স-এ জানায়, “তারা মার্কিন-ভারত সম্পর্কের সাফল্যকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য উন্মুখ”, তবে গরের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ এখনও সেনেটের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

যদিও ট্রাম্প প্রশাসনের সুরে এখনও দ্বৈততা রয়েছে, তবে উচ্চপর্যায়ের এই কূটনৈতিক তৎপরতা ভারত-আমেরিকা সম্পর্ককে একটি নতুন পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল। বাণিজ্য চুক্তি ও কৌশলগত অংশীদারিত্বের দিক থেকে ভবিষ্যৎ মাসগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে।