নয়াদিল্লি, ২১ সেপ্টেম্বর : প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আজ সন্ধ্যা ৫টায় দেশের প্রতি ভাষণ দেওয়ার আগে কংগ্রেসে তীব্র প্রশ্ন উঠেছে, তিনি কি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এইচ-১বি ভিসার ফি বৃদ্ধির মতো বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলবেন? ট্রাম্পের ভারত-বিরোধী শুল্ক এবং পাকিস্তান-ভারত সংঘাতের সময় শান্তি আলোচনার মধ্যস্থতার দাবিকে কেন্দ্র করে ভারত-আমেরিকা সম্পর্কের অবনতির প্রসঙ্গেও কংগ্রেসের প্রশ্নের মুখে পড়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক ও যোগাযোগ দফতরের ইনচার্জ জৈরম রমেশ ‘এক্স’ প্ল্যাটফর্মে একটি পোস্টে মোদিকে আক্রমণ করে বলেন, “যখন প্রধানমন্ত্রী দেশের প্রতি ভাষণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তাঁর ‘ভাল বন্ধু’ ওয়াশিংটন ডিসিতে আবারও দাবি করেছেন – ৪২তমবার – যে তিনি অপারেশন সিদুর বন্ধ করেছেন।”
রমেশ আরও বলেন, এই দাবি ট্রাম্প শুধু আমেরিকায় নয়, সৌদি আরব, কাতার ও যুক্তরাজ্যের সফরের সময়ও করেছেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, “প্রধানমন্ত্রী কি এই দাবিগুলো মোকাবিলা করবেন? ক্রমবর্ধমান ভারত-আমেরিকা সম্পর্কের টানাপোড়েন নিয়ে কথা বলবেন? লক্ষাধিক এইচ-১বি ভিসা ধারকদের উদ্বেগের কথা তুলে ধরবেন? অথবা কোটি কোটি কৃষক ও শ্রমিকদের প্রতি আশ্বাস দেবেন, যাদের জীবিকা তাঁর ‘ভাল বন্ধুর’ শুল্কের কারণে ঝুঁকিতে রয়েছে? না কি শুধু নতুন জিএসটি হারের উপর আগের মতোই পুনরাবৃত্তি করবেন, যা নিঃসন্দেহে হতাশাজনক ও আগামীকাল থেকে কার্যকর হচ্ছে?”
গতকাল অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ ঘোষিত জিএসটি হারের এই পরিবর্তন আগামীকাল থেকে কার্যকর হবে, যার ফলে বিভিন্ন পণ্যের দাম কমবে।
গত শুক্রবার হঠাৎ করেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘোষণা করেন এইচ-১বি ভিসার বার্ষিক ফি ১ লক্ষ বাড়ানোর কথা। এই ঘোষণার পর শনিবার বিদেশি কর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং অনেকেই নির্দিষ্ট সময়সীমার আগে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যাওয়ার তাগিদ পায়। পরে ট্রাম্প প্রশাসন পরিষ্কার করে, এই নতুন ফি শুধুমাত্র নতুন আবেদনগুলোর জন্য এককালীন, বর্তমান ভিসাধারীদের জন্য প্রযোজ্য নয়।
ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের অবনতি চলাকালীন যুক্তরাষ্ট্র গত ৭ আগস্ট ২৫% প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপ করে, যা ২৭ আগস্ট রাশিয়ার তেল ক্রয়ের জন্য অতিরিক্ত ২৫% শুল্কের সঙ্গে মিলিয়ে মোট ৫০% শুল্কে পৌঁছায়।
এছাড়া ট্রাম্প বারবার দাবি করে চলেছেন যে, তিনি ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের মধ্যে চলা সংঘর্ষে মধ্যস্থতা করেছেন এবং এর জন্য তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কারের দাবিদার।
মে মাসে ভারতের অপারেশন সিনদূর নামে একটি সামরিক অভিযান শুরু হয়, যা পাকিস্তান ও পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটিতে বিমান হামলা চালায়। ভারত বারবার জানিয়েছে, এই সংঘর্ষের অবসানের জন্য কোনো তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা নেওয়া হয়নি এবং ভবিষ্যতেও নেওয়া হবে না। প্রধানমন্ত্রী মোদিও স্পষ্ট জানিয়েছেন, ভারত কখনো তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতাকে মেনে নেয়নি।
এই প্রতিক্রিয়ার মধ্যেই আজ প্রধানমন্ত্রী মোদির ভাষণ নিয়ে দেশের রাজনৈতিক মহলে উত্তেজনা বাড়ছে, যেখানে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্য ও কূটনৈতিক ক্ষেত্রের আগ্রহ বাড়ছে ভাষণের বিষয়বস্তুর ওপর।

