প্রযুক্তিই ভারতের সবচেয়ে বড় সমতা সূচক: প্রধানমন্ত্রী মোদী

নয়াদিল্লি, ১৯ সেপ্টেম্বর: প্রযুক্তি আজ ভারতের সবচেয়ে বড় ‘সমতা সূচক’ হয়ে উঠেছে, যা পথের ধারের বিক্রেতা থেকে শুরু করে কর্পোরেট নির্বাহী পর্যন্ত সকলকেই ক্ষমতায়ন করছে — শুক্রবার এমনটাই জানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

এক্স (সাবেক টুইটার)-এ পোস্ট করা এক প্রতিক্রিয়ায়, প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ইন্ডিয়া স্ট্যাক, ইউপিআই, জেএএম ট্রিনিটি এবং কোউইন -এর মতো বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে, উদ্ভাবন ও অন্তর্ভুক্তি শুধু জীবনমান পরিবর্তন করেনি, শাসন ব্যবস্থাও উন্নত করেছে এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের অবস্থানকে আরও মজবুত করেছে।

প্রধানমন্ত্রী এই মন্তব্যটি করেছেন ইলেকট্রনিক্স ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব-এর একটি প্রবন্ধের প্রতিক্রিয়ায়। সেখানে বলা হয়েছে, আগে সরকারি কাগজপত্র পেতে বহুবার অফিসে যেতে হতো, দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে হতো, আর নানা অজুহাতে টাকা দিতে হতো। কিন্তু আজ, প্রযুক্তি বিপ্লবের ফলে সব কিছুই মুঠোফোনে পৌঁছে গেছে।

বৈষ্ণব লিখেছেন, “প্রধানমন্ত্রী মোদী প্রযুক্তিকে ভারতের সর্বাধিক সমতামূলক শক্তি করে তুলেছেন**। মুম্বইয়ের এক ফুটপাথের হকার যেমন ইউপিআই ব্যবহার করেন, তেমনি এক কর্পোরেট কর্তা-ও সেই একই প্রযুক্তি ব্যবহার করেন। তাঁর দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রযুক্তির সামনে কোনও শ্রেণি বিভাজন নেই।”

এই পরিবর্তন প্রধানমন্ত্রী মোদীর মূল দার্শনিক নীতির প্রতিফলন অন্ত্যোদয়, অর্থাৎ সমাজের শেষ প্রান্তের মানুষের কাছে উন্নয়ন পৌঁছে দেওয়া। প্রতিটি ডিজিটাল উদ্যোগের লক্ষ্যই প্রযুক্তিকে সর্বজনীন ও গণতান্ত্রিক করে তোলা।

প্রবন্ধে বলা হয়েছে, গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদী প্রযুক্তিকে একটি কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে রাজ্যের উন্নয়নে এক আমূল পরিবর্তন ঘটিয়েছিলেন। ২০০৩ সালে চালু হওয়া জ্যোতিগ্রাম যোজনায় ফিডার সেপারেশন প্রযুক্তির মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলে ২৪x৭ বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছিল, যার ফলে একদিকে যেমন গ্রামীণ শিল্পে প্রাণ ফিরে আসে, তেমনই কৃষিকাজে ভূগর্ভস্থ জলের উপর নির্ভরতা হ্রাস পায়। ২০১২ সালে নর্মদা ক্যানালের উপর সৌর প্যানেল বসিয়ে এমন এক প্রকল্প চালু হয়, যা বছরে ১.৬ কোটি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে প্রায় ১৬ হাজার পরিবারের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হয়। পাশাপাশি, জল বাষ্পীভবনের হার কমে যাওয়ায় জল সংরক্ষণের দিকেও একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ঘটে। এই সব প্রকল্প মোদীর প্রযুক্তিনির্ভর, বহু-সমস্যার সমাধানমুখী চিন্তাধারার প্রতিফলন।

২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তিনি গুজরাটে অর্জিত অভিজ্ঞতাকে জাতীয় পর্যায়ে প্রয়োগ করতে শুরু করেন। তাঁর নেতৃত্বেই গড়ে ওঠে বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম এবং সর্বাধিক অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল পরিকাঠামো — ইন্ডিয়া স্ট্যাক। এর ভিত্তি তৈরি করে জেএএম ট্রিনিটি — জন ধন, আধার এবং মোবাইল। জন ধন যোজনার মাধ্যমে ৫৩ কোটিরও বেশি মানুষকে আনুষ্ঠানিক ব্যাংকিং ব্যবস্থার আওতায় আনা হয়েছে, যার ফলে দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সুরক্ষিতভাবে সঞ্চয় করতে পারছে, সরাসরি সরকারী ভর্তুকি পাচ্ছে এবং সহজে ঋণও গ্রহণ করতে পারছে। আধার এখন নাগরিকদের জন্য একটি ডিজিটাল পরিচয়ের রূপে কাজ করছে, যার মাধ্যমে সরকারী পরিষেবা গ্রহণ অনেক সহজ হয়েছে। ডিরেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফার ব্যবস্থার ফলে মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাব কমেছে এবং ভর্তুকির অপব্যবহার বন্ধ হয়েছে। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে ইতিমধ্যেই ৪.৩ লক্ষ কোটি রুপি সাশ্রয় হয়েছে, যা দেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পরিকাঠামো খাতে ব্যবহৃত হচ্ছে।

এছাড়াও, ওই প্রকল্পের মাধ্যমে নাগরিকরা সরাসরি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারতেন, যা জনগণের সঙ্গে শাসনের একটি ডিজিটাল সেতুবন্ধন তৈরি করে। অনলাইন টেন্ডারিং ব্যবস্থার মাধ্যমে দুর্নীতি হ্রাস পায় এবং প্রকল্পে স্বচ্ছতা নিশ্চিত হয়। মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব তাঁর প্রবন্ধে জোর দিয়ে বলেন, প্রযুক্তিকে কেবলমাত্র উন্নয়নের মাধ্যম নয়, বরং সমতা, স্বচ্ছতা ও ক্ষমতায়নের একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার দর্শন প্রধানমন্ত্রী মোদীর শাসনব্যবস্থার মূলভিত্তি। এর ফলশ্রুতি আজ দেশের প্রতিটি স্তরে দৃশ্যমান।