ভোট চুরির অভিযোগে মিছিল কংগ্রেসের, জমায়েতের স্থান পরিবর্তন নিয়ে পুলিশের সাথে বাকবিতণ্ডা

আগরতলা, ৩০ আগস্ট : বিজেপি সরকার ও নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে ভোট চুরির অভিযোগ তুলে আজ শহরের রাজপথে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়েছিল প্রদেশ কংগ্রেসের। এদিন প্রদেশ কংগ্রেস ভবন থেকে দলের কর্মী সর্মথকরা মিছিল করে মহাকরণে উদ্দেশ্য রওয়ানা দিয়েছিলেন। তাঁদের সার্কিট হাউস এলাকায় জনসভা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্ত রাধানগর আসতেই পুলিশ মিছিলটিকে আটকে দেয়। এবিষয়কে কেন্দ্র করেই পুলিশের সাথে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণ। তাঁর দাবি, সার্কিট হাউসে জনসভার জন্য প্রশাসন থেকে আগাম অনুমতি নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পুলিশ সুপারের দাবি, জনসভার জন্য আগাম অনুমতি নেয় নি কংগ্রেস। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কিছুক্ষণের জন্য গোটা এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়েছিল।

এবিষয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি আশিস কুমার সাহা বলেন, বিজেপি সরকার ভারততের নির্বাচন কমিশনকে কাজে লাগিয়ে দেশে এবং ত্রিপুরায় কারচুপির মাধ্যমে একের পর এক ক্ষমতায় আসছে। নির্বাচন কমিশনকে শাখা সংগঠনের মতো ব্যবহার করে চলছে বিজেপি। তাঁর অভিযোগ, নির্বাচন কমিশনকে নগ্ন হিসেবে ব্যবহার করে চলছে শাসক দল বিজেপি। এর বিরুদ্ধেই গোটা দেশে ভোট চোর গদি ছোড় এই স্লোগানকে সামনে রেখে কংগ্রেস প্রতিবাদে সামিল হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, কংগ্রেসের তরফে জানানো হয় এই স্লোগানকে সামনে রেখে মহাকরণ অভিযানের আয়োজন করবে। পরবর্তীতে সার্কিট হাউসে জনসভার আয়োজন করা হয়েছে। কিন্তু দেখা গিয়েছে পুলিশ বিজেপি নেতাদের কথায় রাধানগর আসতেই মিছিল আটকে দিয়েছে। এক কথায়, কংগ্রেসের জনসভা বানচাল করার চেষ্টা করেছে। বিরোধীদের কন্ঠরোধ করার চেষ্টা করেছে শাসক দল বিজেপি।

এদিন সার্কিট হাউসের বদলে রাধানগরে কংগ্রেসের মিছিল আটকে দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণ। তাঁর অভিযোগ, ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) দেশের পুঁজিপতিদের স্বার্থ রক্ষা করতে এবং নিজেদের শাসনব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতে ভোটে কারচুপি এবং বাকস্বাধীনতার উপর অত্যাচার চালাচ্ছে। তার কথায়, গত ১১ বছর ধরে দেশের জনগণের বাকস্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয়েছে এবং সংসদে বিরোধীদের কন্ঠরোধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। গোটা দেশে অরাজকতা চলছে এবং সরকার শুধু নিজের লাভের জন্য কাজ করছে।

তিনি আরও বলেন, গোটা দেশবাসী বিজেপিকে ক্ষমতায় এনে বড় ভুল করেছে। তার খেসারত প্রতিনিয়ত জনগণ পাচ্ছে। কংগ্রেস জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই করছে এবং আমরা প্রতিবাদে সামিল হবো।

সুদীপ রায় বর্মণ জানান, প্রদেশ কংগ্রেসের পক্ষ থেকে “ভোট চোর গদি ছোড়” স্লোগানকে সামনে রেখে মহাকরণ অভিযানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তবে, জনসভা ও প্রতিবাদের স্থান তিনবার পরিবর্তন করেছে বিজেপি প্রশাসন। প্রথমে সার্কিট হাউসে জনসভার জন্য অনুমতি পাওয়া যায়, কিন্তু শেষে দেখা যায়, বিজেপি মন্ডল নেতাদের নির্দেশে রাধানগরে কংগ্রেসের মিছিল আটকে দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে সুদীপ রায় বর্মণ আরও বলেন, বর্তমানে পুলিশের অবস্থা খুবই করুণ। পুলিশ এখন শুধু বিজেপি নেতাদের পা চাটছে। মন্ডল নেতাদের সামান্য আদেশ মেনে পুলিশ নিজেদের স্বাধীনতা ভুলে গেছে। পুলিশকে নিজেদের দায়িত্ববোধের জায়গায় দাঁড়িয়ে কাজ করতে হবে।

তাঁর কটাক্ষ, বিজেপি সরকার দেশের মানুষের বাকস্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে এবং বর্তমান সময়ে নির্বাচন কমিশনকেও কাজে লাগিয়ে ভোটে কারচুপি করছে। জনগণের অধিকার রক্ষায় কংগ্রেস প্রতিনিয়ত লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া, তিনি দাবী করেন, যে কংগ্রেসের প্রতিবাদ কর্মসূচি কোনওভাবেই আটকানো যাবে না এবং তারা জনগণের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবে। তিনি সমর্থকদের উদ্দেশে আরও বলেন, আমরা জনগণের জন্য কাজ করছি এবং জনগণের পাশে থাকবো, এই আন্দোলন চালিয়ে যাবো।

এবিষয়ে পুলিশ সুপার নমিত পাঠক বলেন, জনসভা করার জন্য কংগ্রেসের তরফ থেকে আগাম কোনো অনুমতি নেওয়া হয়নি। যার ফলে সার্কিট হাউসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। এর জন্য প্রশাসনপর তরফ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।