জম্মু-কাশ্মীরে অতিভারী বর্ষণে বিপর্যস্ত জনজীবন, বাতিল ৪৫টি ট্রেন, বন্ধ ৬ জেলার স্কুল-কলেজ, ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা

জম্মু/কাশ্মীর, ২৭ অগস্ট : জম্মু ও কাশ্মীর অঞ্চলে গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বর্ষণ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। প্রবল বৃষ্টিপাতের জেরে জনজীবন কার্যত থমকে গিয়েছে। উত্তর রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে জম্মু, উধমপুর এবং কাটরা থেকে ছাড়ার এবং সেখানে পৌঁছনোর মোট ৪৫টি ট্রেন সম্পূর্ণভাবে বাতিল করা হয়েছে, এছাড়াও আরও ২৫টি ট্রেনকে সংক্ষিপ্ত রুটে থামিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাতিল হওয়া ট্রেনগুলির মধ্যে কাটরা থেকে ছাড়ার কথা ছিল ৯টি, উধমপুর থেকে ২টি এবং জম্মু থেকে ১টি।

পাশাপাশি কাটরা, উধমপুর ও জম্মুগামী বেশ কয়েকটি আগত ট্রেনও বাতিল করা হয়েছে। কাটরা হল বৈষ্ণোদেবী মন্দিরের বেস ক্যাম্প, ফলে তীর্থযাত্রীদেরও ভোগান্তি চরমে উঠেছে। মাত্র ৩৮ ঘণ্টায় জম্মু শহরে ৩৮০ মিলিমিটারেরও বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা একাধিক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। প্রবল বৃষ্টির কারণে একাধিক সেতু ধসে পড়েছে, রাস্তা ভেঙে গিয়েছে এবং বহু এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। হাজার হাজার মানুষকে প্রশাসনের তরফে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
এই দুর্যোগ পরিস্থিতিতে রেল কর্তৃপক্ষ বুধবার থেকে আংশিকভাবে ট্রেন পরিষেবা পুনরায় চালু করেছে। জম্মু ডিভিশনের জনসংযোগ আধিকারিক জানিয়েছেন, ছয়টি ট্রেন — যার মধ্যে তিনটি পূর্বে বাতিল এবং তিনটি মাঝপথে সংক্ষিপ্ত রুটে থেমে গিয়েছিল — আজ তাদের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছে। এই ট্রেনগুলি হল: জম্মু তব্বি-কামাখ্যা এক্সপ্রেস, জম্মু-সাম্বলপুর, জম্মু-অম্বেদকর নগর, জম্মু-বারাণসী, জম্মু-বান্দ্রা এবং জম্মু-ছপরা। তবে, কাটরা-শ্রীনগর রুটে ট্রেন চলাচল এখনও সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রয়েছে বলে রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। অপরদিকে, কাশ্মীর উপত্যকায় টানা বৃষ্টির ফলে আবহাওয়ার অবনতি অব্যাহত রয়েছে।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে অনন্তনাগ, কুলগাম, পুলওয়ামা, শোপিয়ান, বাডগাম ও শ্রীনগর — এই ছয়টি জেলার সমস্ত স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ পরবর্তী কয়েকদিন ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে। এদিকে, গতকাল বিকেল থেকে কাশ্মীর উপত্যকার অধিকাংশ এলাকায় মোবাইল ও ল্যান্ডলাইন পরিষেবা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলি পরিষেবা পুনরায় চালু করার চেষ্টা চালালেও প্রবল বর্ষণ ও একাধিক এলাকায় ভূমিধসের কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না।
একইসঙ্গে জম্মু-শ্রীনগর জাতীয় সড়ক আজ দ্বিতীয় দিনের মতো পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে, যার ফলে সড়কপথেও যোগাযোগ কার্যত বিচ্ছিন্ন। এই পরিস্থিতিতে যাত্রীদের সহায়তার জন্য উত্তর রেলওয়ের পক্ষ থেকে জম্মু তব্বি, শ্রীমাতা বৈষ্ণোদেবী কাটরা, পাঠানকোট এবং নয়াদিল্লি রেল স্টেশনে হেল্প ডেস্ক খোলা হয়েছে। পাশাপাশি জারি করা হয়েছে হেল্পলাইন নম্বরও। জম্মুর জন্য হেল্পলাইন নম্বর হল ৭৮৮৮৮৩৯৯১১ এবং দিল্লির জন্য ৯৭১৭৬৩৮৭৭৫১।
নয়াদিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠকে উত্তর রেলওয়ের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক হিমাংশু শেখর উপাধ্যায় জানিয়েছেন, চলমান প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রেক্ষাপটে এই সিদ্ধান্তগুলি নেওয়া হয়েছে এবং পরিস্থিতির উন্নতির ওপর নির্ভর করেই পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। জম্মু ও কাশ্মীর প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাধারণ মানুষকে জরুরি প্রয়োজনে বাইরে না বেরনোর, সর্বদা সতর্ক থাকার এবং আবহাওয়া দফতরের নির্দেশিকা অনুসরণ করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসন, পুলিশ, এসডিআরএফ এবং সেনা বাহিনী একযোগে ত্রাণ ও উদ্ধারকাজ শুরু করেছে। তবে প্রশাসনের আশঙ্কা, পুরো অঞ্চল জুড়ে যে দুর্যোগ পরিস্থিতি বিরাজ করছে তা স্বাভাবিক হতে আরও কয়েকদিন সময় লাগতে পারে।