হায়দরাবাদ, ২৫ : দাম্পত্য কলহের জেরে নিজের পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে খুন করে দেহ টুকরো টুকরো করে মুসি নদীতে ফেলে দিল এক ব্যক্তি। ঘটনাটি ঘটেছে হায়দরাবাদের মেডিপল্লী এলাকায়। শনিবার রাতে এই নৃশংস ঘটনাটি ঘটানোর পর, রবিবার সকালে অভিযুক্তকে তার ভাড়া বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে রাচাকোন্ডা পুলিশ। ঘটনাস্থলে শুধুমাত্র নিহত স্ত্রীর শরীরের মূল অংশ (ধড়) পাওয়া গেছে। তার মাথা এবং হাত-পা নিখোঁজ ছিল।
পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তের নাম এস মহেন্দ্র রেড্ডি (২৭)। পেশায় একজন গিগ ওয়ার্কার। সে তার স্ত্রী বি স্বাতী (২১)-কে খুন করার কথা স্বীকার করেছে। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর, সে দেহটি কেটে টুকরো টুকরো করে মুসি নদীতে ফেলে দেয়। যদিও, দেহের বাকি অংশগুলো এখনও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। পুলিশ ডুবুরি এবং বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সদস্যদের দিয়ে তল্লাশি অভিযান শুরু করেছে, কিন্তু রবিবার রাত পর্যন্ত কোনো সাফল্য মেলেনি।
পুলিশের মতে, মহেন্দ্র এবং স্বাতী বিকরাবাদে প্রতিবেশী ছিলেন। ২০২৪ সালের জানুয়ারী মাসে তারা আর্য সমাজে আন্তঃবর্ণ বিবাহ করেন। বিয়ের পর প্রথম এক মাস তাদের দাম্পত্য জীবন ভালোই চলছিল। কিন্তু এরপর থেকেই তাদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া-বিবাদ শুরু হয়। মালকাজগিরির ডিসিপি পিভি পদ্মজা রেড্ডি জানান, “২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে স্বাতী মহেন্দ্রের বিরুদ্ধে গার্হস্থ্য হিংসার অভিযোগ এনেছিল। কিন্তু গ্রামের কিছু প্রবীণ ব্যক্তির হস্তক্ষেপে বিষয়টি মিটে যায়।” এরপর ২০২৪ সালের জুন মাস থেকে তারা বডুপ্পালে একটি ভাড়া বাড়িতে থাকতে শুরু করে। ডিসিপি আরও বলেন, “স্বাতী তিন মাস পাঞ্জাগুট্টায় একটি কল সেন্টারে কাজ করেছিল। কিন্তু পরে স্বামী মহেন্দ্র সন্দেহবশত তাকে চাকরি ছাড়তে বাধ্য করে।”
সম্প্রতি, অন্তঃসত্ত্বা স্বাতী স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য তার বাবা-মায়ের সাথে দেখা করতে বিকরাবাদে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু মহেন্দ্র এতে রাজি হয়নি, যা তাদের মধ্যে তীব্র ঝগড়ার জন্ম দেয়। পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, “স্বাতী তার স্বামীকে কটূক্তি করেছিল। আর এতেই মহেন্দ্র তাকে সরিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়।”
শনিবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে মহেন্দ্র স্বাতীকে শ্বাসরোধ করে খুন করে। এরপর প্রমাণ লোপাট করতে একটি করাতের মতো ধারালো বস্তু দিয়ে সে দেহটি টুকরো টুকরো করে। দেহের মাথা, হাত এবং পা প্রতাপসিংগরামের মুসি নদীতে ফেলে দেয়। শুধুমাত্র দেহের মূল অংশটি সে রেখে দেয়।
দেহটি টুকরো করার পর মহেন্দ্র তার বোনকে ফোন করে জানায় যে স্বাতী নিখোঁজ। তার বোন তখন হায়দরাবাদে তাদের এক আত্মীয়কে মহেন্দ্রের সাথে দেখা করতে বলে। মহেন্দ্র এবং সেই আত্মীয় দু’জনেই থানায় গিয়ে নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ দায়ের করে। কিন্তু, পুলিশের জেরায় মহেন্দ্রের কথায় সন্দেহজনক কিছু ধরা পড়ে। পরবর্তীতে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে তার অপরাধের কথা স্বীকার করে।
পুলিশের কাছে সিসিটিভি ফুটেজও আছে, যেখানে মহেন্দ্রকে একটি ব্যাকপ্যাক এবং একটি ব্যাগ হাতে বাড়ি থেকে বের হতে দেখা যায়। স্বাতীর বাবা-মায়ের অভিযোগ, মহেন্দ্র তাদের মেয়েকে কখনো তাদের সাথে দেখা করতে দিত না। পুলিশ ভারতীয় দণ্ডবিধির ১০৩ (খুন) এবং ২৩৮ (অপরাধের প্রমাণ লোপাট করা বা অপরাধীকে আড়াল করার জন্য মিথ্যা তথ্য দেওয়া) ধারায় মামলা দায়ের করেছে।

