চিকিৎসকের গাফিলতিতে রোগী মৃত্যুর অভিযোগ, উত্তর জেলা হাসপাতালে উত্তেজনা

ধর্মনগর, ১৫ জুন : সঠিক চিকিৎসা পরিষেবা না পাওয়ার অভিযোগে উত্তর জেলার ধর্মনগর হাসপাতালে এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মৃতার নাম শুক্লা দাস (৬০)। এই ঘটনায় চিকিৎসকের চরম গাফিলতির অভিযোগ তুলেছেন মৃতার পরিবার। অভিযোগ উঠেছে, পেটে ব্যথা নিয়ে কাতরালেও সময়মতো চিকিৎসক না আসায় মাঝবয়সী এই মহিলার মৃত্যু হয়েছে। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে মৃতদেহের ময়নাতদন্তে প্রথমে নারাজ থাকলেও, পরে ময়নাতদন্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
জানা গেছে, শনিবার সকালে ধর্মনগর মহকুমার ঢুপিরবন্ধ গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা শুক্লা দাসকে পেটে ব্যথার সমস্যা নিয়ে পরিবারের লোকজন ধর্মনগর স্থিত উত্তর জেলা হাসপাতালে নিয়ে আসেন। তাকে সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। মৃতার ছেলে অমল দাস জানান, তার মাকে যখন হাসপাতালে আনা হয়, তখন সার্জারি ওয়ার্ডের ইনচার্জ সার্জন ডাঃ শুভেন্দু ভট্টাচার্য উপস্থিত ছিলেন। মায়ের পেটে ব্যথার জন্য সিটি স্ক্যান করানো হয়। সিটি স্ক্যান এবং ইনজেকশন ও স্যালাইন দেওয়ার পর থেকেই মায়ের পেট ফুলতে শুরু করে, কিন্তু প্রস্রাব হচ্ছিল না।
অমল দাস অভিযোগ করেন, পরবর্তীতে কর্তব্যরত চিকিৎসক শেখর সরকার রোগীর আশঙ্কাজনক অবস্থা জানিয়ে সার্জন স্পেশালিস্ট ডাঃ শুভেন্দু ভট্টাচার্যের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও, তিনি আসবেন বলে আর আসেননি। ফলে বিনা চিকিৎসায় তার মায়ের মৃত্যু হয়েছে। অমল দাসের দাবি, যদি ডাঃ শুভেন্দু ভট্টাচার্যের সরকারি হাসপাতালে রোগী দেখার সময় না থাকে, তাহলে তার মাকে ভর্তি না করে অন্যত্র রেফার করে দিলে হয়তো অন্য কোথাও চিকিৎসা করিয়ে তার মাকে বাঁচানো যেত।
 তিনি বলেন, “সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সময়টা নষ্ট করে আমার মাকে মারার পেছনে সম্পূর্ণ দায়ী সার্জন ডাঃ শুভেন্দু ভট্টাচার্য।” চিকিৎসকের গাফিলতির কারণেই তার মায়ের মৃত্যু হয়েছে এবং সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা হয়নি বলে তিনি দাবি করেন। 
তিনি ধর্মনগর থানায় গোটা ঘটনায় একটি মামলা নথিভুক্ত করবেন বলে জানান এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানিয়েছেন। তিনি চান, তার মায়ের মতো আর কোনো রোগী যেন সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকের গাফিলতির কারণে বিনা চিকিৎসায় মারা না যান। এর আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
এদিকে, জেলা হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক শেখর সরকার জানান, রোগীর আত্মীয়রা দু’বার তার কাছে রোগীর সমস্যা নিয়ে আসেন এবং তিনি দু’বার রোগীকে দেখে প্রাথমিক ওষুধ দেন। তিনি ওই রোগীর স্পেশালিস্ট ডাঃ শুভেন্দু ভট্টাচার্যকে ফোন করে রোগীর অবস্থা গুরুতর জানালে, ডাঃ ভট্টাচার্য আসতে দেরি হবে বলে জানান। পরে সন্ধ্যা নাগাদ রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে খবর আসে এবং সার্জারি ওয়ার্ডে গিয়ে তিনি দেখতে পান রোগী মারা গেছেন। 
শেখর সরকার জানান, যেহেতু সকাল থেকে ডাঃ শুভেন্দু ভট্টাচার্য ওই রোগীকে দেখছেন এবং বিষয়টি তার নলেজে ছিল, আর এটি সার্জারি কেস, তাই সার্জনের মতামত সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। যেহেতু ডাঃ ভট্টাচার্য আসতে দেরি হবে বলেছিলেন, তাই তিনি ওই চিকিৎসকের অপেক্ষায় ছিলেন। রোগীর আত্মীয়দের রেফার করারও সরাসরি কোনো সুবিধা ছিল না। 
তিনি বলেন, স্পেশালিস্ট হাসপাতালে ছিলেন এবং তাকে তথ্য জানানো হয়েছিল। যদি স্পেশালিস্ট বলতেন তিনি আসবেন না বা আসতে অসুবিধা হবে, তাহলে তিনি রোগীর আত্মীয়দের অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার কথা বলতেন। তার মতে, সার্জন স্পেশালিস্টের সাথে সাথেই আসা উচিত ছিল। তিনি আরও জানান, রোগীর মৃত্যু হলেও ডাঃ শুভেন্দু ভট্টাচার্য একবারের জন্যও হাসপাতালে আসেননি।
প্রথমদিকে রোগীর আত্মীয়-স্বজনরা মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নারাজ থাকলেও, হাসপাতালের তরফে ধর্মনগর থানায় খবর দিলে পুলিশ হাসপাতালে ছুটে আসে। পরে ময়নাতদন্তের সিদ্ধান্ত হয়। রবিবার ময়নাতদন্তের পর মৃতদেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে।
এই ঘটনার পর হাসপাতাল চত্বরে তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। মৃতের আত্মীয়স্বজন অভিযুক্ত চিকিৎসক সার্জনের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির দাবি জানান। এই ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যেও ক্ষোভ ও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। আবারও ধর্মনগর জেলা হাসপাতালের চিকিৎসা পরিকাঠামো ও দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
তবে এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের পরই পরিষ্কার হবে প্রকৃত দায় কার। আপাতত জেলাজুড়ে এই ঘটনা নিয়ে তীব্র চাঞ্চল্য বিরাজ করছে।