বেঙ্গালুরু, ২৮ মে: অভিনেতা কামাল হাসানের সাম্প্রতিক মন্তব্য—যেখানে তিনি বলেন কন্নড় ভাষার উৎপত্তি তামিল থেকে—তা ঘিরে তীব্র বিতর্ক তৈরি হয়েছে কর্ণাটকে। এই ইস্যুতে বিরলভাবে একত্রে প্রতিবাদ জানিয়েছে রাজ্যের শাসক দল কংগ্রেস ও বিরোধী দল বিজেপি।
গত শনিবার চেন্নাইয়ে একটি সিনেমার প্রচারে গিয়ে কামাল হাসান মন্তব্য করেন, “কন্নড় ভাষার জন্ম তামিল থেকে হয়েছে।” এরপরই কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “কন্নড়ের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। দুঃখজনক, কামাল হাসান এসব জানেন না।”
বিজেপি নেতা ও বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা আর অশোক কামাল হাসানকে “মানসিক রোগী” বলে উল্লেখ করে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন। তিনি বলেন, “এই অভিনেতা বারবার কন্নড় ও কর্ণাটককে অসম্মান করছেন। সরকার যেন কামাল হাসানের সমস্ত সিনেমা কর্ণাটকে নিষিদ্ধ করে, না হলে তিনি বারবার এমন মন্তব্য করবেন।”
এই মন্তব্য ঘিরে ক্ষোভ ছড়িয়েছে রাজ্যের নানা স্তরে—প্রো-কন্নড় গোষ্ঠী, সংস্কৃতি কর্মী এবং ভাষা সংরক্ষণ আন্দোলনকারীরা কামাল হাসানের কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার দাবি তুলেছেন।
বিজেপি রাজ্য সভাপতি বি ওয়াই বিজয়েন্দ্র সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে লেখেন, “ভিন্ন ভাষার প্রতি অসম্মান দেখানো একেবারেই অসভ্যতা। বিশেষ করে শিল্পীদের উচিত সব ভাষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা। বহু ভারতীয় ভাষায় অভিনয় করেও কামাল হাসান কন্নড়কে অপমান করেছেন, যা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।”
এদিকে, জানা গেছে ডিএমকে’র সমর্থন নিয়ে রাজ্যসভার জন্য প্রার্থী হতে চলেছেন কামাল হাসান। আরেক প্রচার ইভেন্টে তিনি বলেন, “প্রথমে আমাদের প্রতিবেশী রাজ্যের ভাষা শিখতে হবে, পরে হিন্দির চিন্তা করব। আমরা সবাই দ্রাবিড়, তা ভুলে যাবেন না।”
কর্ণাটকের কংগ্রেস বিধায়ক রিজওয়ান আরশাদ বলেন, “কামাল হাসানের মন্তব্য একেবারেই অপ্রয়োজনীয় ও অযাচিত। তিনি কন্নড় বা তামিল বিষয়ে কোন কর্তৃত্ব রাখেন না। তার মন্তব্য অহেতুক বিভাজন সৃষ্টি করছে, যা কাম্য নয়।”
তামিলনাড়ুর বিজেপি নেত্রী তামিলিসাই সৌন্দররাজনও বলেন, “আমি একজন গর্বিত তামিল এবং ভারতীয়। ভাষা নিয়ে মতামত দেওয়ার সময় সাবধান হওয়া উচিত। কামাল হাসান ডিএমকে-কে খুশি করতে অন্য ভাষাগুলিকে আক্রমণ করছেন।”
উল্লেখ্য, সম্প্রতি কর্ণাটকে ভাষা সংক্রান্ত আরও দুটি বিতর্ক সামনে এসেছে। একটিতে বেঙ্গালুরুর এক স্টেট ব্যাঙ্ক শাখায় কর্মী এক গ্রাহকের সঙ্গে কন্নড়ে কথা বলতে অস্বীকার করলে তাকে বদলি করা হয়। অন্যদিকে, গায়ক সোনু নিগমের বিরুদ্ধে কন্নড় ভাষাকে অপমান করার অভিযোগে মামলা দায়ের হয়।
এই বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে কর্ণাটকে ভাষাগত গর্ব এবং সাংস্কৃতিক আত্মপরিচয় নিয়ে তীব্র আলোচনা শুরু হয়েছে, যেখানে রাজনীতিক, সংস্কৃতিজগত ও সাধারণ মানুষ সকলেই তাদের মতামত প্রকাশ করছেন।

