নতুন দিল্লি, ১৮ মে: ভারতের গোপন সামরিক তথ্য পাকিস্তানে পাচার করার অভিযোগে হরিয়ানার ইউটিউবার জ্যোতি মালহোত্রাকে গ্রেপ্তার করেছে হিসার পুলিশ। অভিযুক্ত ইউটিউবার ‘ট্রাভেল উইথ জো’ নামে একটি জনপ্রিয় ইউটিউব চ্যানেল চালান। অভিযোগ উঠেছে, তিনি পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর হয়ে কাজ করছিলেন, এবং এর পেছনে মূল অভিযুক্ত হিসেবে উঠে এসেছে পাকিস্তান হাইকমিশনে কর্মরত এহসান-উর-রহীম ওরফে দানিশ এর নাম।
জ্যোতির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অত্যন্ত গুরুতর হওয়ায়, ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো এর দলও তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদে নামছে। তাঁর মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ ও অন্যান্য গ্যাজেট ফোরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি, ২০২৩ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে তাঁর দেশ-বিদেশ সফরের রেকর্ড খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তদন্তে জানা গেছে, জ্যোতির পাকিস্তান সফরের সময় তিনি আলি আহওয়ান, শাকির ও রানা শাহবাজ-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। তাঁরা পাকিস্তানে সক্রিয় সন্দেহভাজন চর হিসেবে চিহ্নিত। এই যোগাযোগগুলোর মধ্যে দানিশের ভূমিকা কতটা, এবং জ্যোতি একা নাকি কারও সাহায্যে তথ্য পাচার করতেন, সেটাও তদন্তাধীন।
এই চক্রে পাঞ্জাবের গজালা, ক্যারানার নোমান ইলাহী, নুহ-র আরমান, দেবিন্দর সিং সহ একাধিক ব্যক্তি জড়িত বলে মনে করছে পুলিশ। তাঁদের মোবাইল ফোনের ডেটাও বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।
তদন্তকারীদের নজর এখন সবচেয়ে বেশি উত্তরপ্রদেশের ক্যারানা শহরের দিকে। ক্যারানা থেকে গ্রেপ্তার হওয়া নোমান ইলাহী-কে আইএসআই-এর বড় এজেন্ট হিসেবে সন্দেহ করা হচ্ছে। সূত্র অনুযায়ী, ক্যারানা থেকে পাকিস্তানে বসে ইকবাল কানা, দিলশাদ মির্জা, হমিদা, ও শাহিদ দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।
শাহিদের নাম আগেও সামনে এসেছে—সে পাকিস্তানে থেকে দুবাই, আফগানিস্তান, মরক্কো প্রভৃতি জায়গায় আইএসআই-এর হয়ে চর নিয়োগের কাজ করছিল।
গোটা চক্রে ইউপিআই ও অন্যান্য ডিজিটাল মাধ্যমে আর্থিক লেনদেনের তদন্ত চলছে। দানিশ ও অন্যান্যদের সঙ্গে কথোপকথনের সময় অভিযুক্তরা কোডনেম ব্যবহার করতেন এবং পাকিস্তানি নম্বরগুলো ফোনে ভিন্ন নামে সেভ করতেন।
ক্যারানা ও পার্শ্ববর্তী এলাকা পূর্বেও আইএসআই-র কার্যকলাপের কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। ২০২৩ সালে কান্ধলা থেকে সরদার আলি, ২০২1 সালের দরভাঙ্গা রেলওয়ে বিস্ফোরণ মামলায় সেলিম ও কফিল, এবং ১৯৯৫ সালে ৩৬১টি পিস্তল সহ ইকবাল কানা-র গ্রেপ্তার হওয়া সেই ইতিহাসকে ফের মনে করিয়ে দিচ্ছে।
দানিশের ভারতীয় সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারদের টার্গেট করার অভিযোগও সামনে এসেছে। পহেলগাঁও হামলার সময় জ্যোতি পাকিস্তানের পক্ষে প্রচার চালানোর কাজে জড়িত ছিলেন। তাঁর কাশ্মীর সফরে কার কার সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে, তা-ও তদন্তের আওতায়।
সবচেয়ে চমকপ্রদ তথ্য হলো—জ্যোতির পাকিস্তান সফরের সমস্ত খরচ বহন করেছে পাকিস্তান হাইকমিশনের দানিশ। তদন্তকারীরা বলছেন, তাঁকে “অ্যাসেট” হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছিল।
2025-05-18

