ককবরক ভাষায় রোমান হরফ ব্যবহারের দাবিতে টিএসএফ এর আন্দোলনের বিরোধিতা করলো আমরা বাঙালি দল

আগরতলা, ২১ মার্চ : ককবরক ভাষায় রোমান হরফ ব্যবহারের দাবিতে আজ সকাল থেকে বিভিন্ন জায়গায় বনধের সমর্থনে আন্দোলনে নামে টিএসএফ। এই আন্দোলনের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে আমরা বাঙালি দল।

আমরা বাঙালি দলের তরফে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ত্রিপুরার জনজীবনে চরম দুর্ভোগ নেমে এসেছে। স্বল্প সময়ের এই নোটিশে সড়ক অবরোধের ফলে শিক্ষক পরীক্ষার্থী সহ অফিস কাছারি সহ রোগী এম্বুলেন্স সহ সবাই বিড়ম্বনায় পড়েছেন।এর দায় কে নিবেন। যেহেতু রাজ্য সরকারের শরীক দলের সংগঠন এর শাখা এই অবরোধের ডাক দিয়েছে তাই এর দায় সরকারকেই নিতে হবে বলে দাবি করেছে আমরা বাঙালী দল।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ত্রিপুরাতে সংখ্যাগরিষ্ঠ জাতি হচ্ছে বাঙালী। এছাড়াও আরো ১৯টি উপজাতি সম্প্রদায়ের লোকজন আছে। এই উনিশটি সম্প্রদায়ের সকলের ভাষা ককবরক নয়। কিন্তু এই ঊনিশটি জাতির বেশীরভাগ মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলে এসেছে রাজ আমল থেকে। প্রত্যেকেই কম বেশি বাংলা ভাষায় কথা বলেন এবং পড়াশোনা করেছেন। আবার তাদের মধ্যে সংখ্যা গরিষ্ঠ হলো ককবরক ভাষীর লোক। এই ককবরক ভাষার উন্নয়নে তাদের যেমন অবদান আছে তেমনি বহু বাঙালী লেখক এই ভাষার উন্নয়নে অংশীদার হয়েছেন।

যেহেতু এই ভাষার শুরু থেকে বাংলা বর্ণমালা দিয়ে শুরু হয়েছে এতে বাঙালীদের যেমন তাদের ভাষা বুঝতে সুবিধা হয়েছে তেমনি তাঁরাও যেহেতু দীর্ঘ দিন ধরে বাংলা ভাষার সাথে পরিচিত তাই উভয়ের জন্যই সুবিধা হয়েছিলো। যেহেতু এই রাজ্যের কৃষ্টি সংস্কৃতি উৎসব সবাই একে অপরের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। বাংলা ছিল ত্রিপুরা রাজাদের রাজ ভাষা ছিল বাংলা। ১৯ টি উপজাতিদের সকলের ভাষা কিন্তু ককবরক না। ভারতবর্ষ সহ সারা বিশ্বে বহু ভাষাভাষী মানুষ রয়েছে যাদের নিজস্ব কোন লিপি নেই।। অথচ তারা স্বাচ্ছন্দে অন্য ভাষার লিপি ব্যবহার করে নিজেদের ভাষাকে সমৃদ্ধ করে তুলেছেন। এমতাবস্থায় দীর্ঘ সময় ধরে চলে আসা বাংলা ভাষার সংস্পর্শে থেকে বাংলা লিপিকে বাদ দিয়ে কেন রোমান লিপির প্রতি তাদের আসক্তি তৈরী হলো বোধগম্য হচ্ছে না। যাই হোক সবদিক থেকে বিবেচনা করে ককবরক লিপি বিতর্কের সমাধানের দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। আজ অনেক চাকমা ছাত্ররা ও ককবরক ভাষার রোমান হরফ আদায়ে আন্দোলনে নেমেছে। আমাদের প্রশ্ন তাদের ও নিজস্ব চাকমা ভাষা রয়েছে। তাছাড়া মণিপুরীদের নিজস্ব ভাষা রয়েছে।কাজেই সরকার কে সবদিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আবার পাশ্ববর্তী রাজ্য অসমের অসমীয়া ভাষার লিপি বাংলা ভাষার বর্ণমালা মতো থাকাতে বাংলা ভাষাভাষীদের বুঝতে পড়তে অসুবিধা হয়না। সুদীর্ঘ সময় ধরে ভোটের জন্য এদের তোষণের ফলে শত অন্যায় করেও যেমন এদের শাস্তি হয়নি। বরং রাষ্ট্রীয় পুরষ্কারে ভূষিত করা হয়েছে এবং এরা যা চেয়েছে প্রতিটি রাজনৈতিক দল ভোট ব্যাংকের স্বার্থে সমর্থন করে গেছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, এইভাবে ধীরে ধীরে রাজনৈতিক কারণে এবং বাম আমল থেকেই উপজাতিদের নাকি বাঙালীরা শোষণ করে আসছে প্রচার করে বাঙালী বিরোধী মানসিকতায় পরিণত করেছে। এরই অঙ্গ হিসেবে তারা দীর্ঘদিন ধরে ককবরক ভাষার লিপি রোমান হরফে আদায়ে আন্দোলন করে আসছে। আমরা বাঙালী দল সংকীর্ণ রাজনীতি তথা উপজাতি তোষণ নীতির তীব্র বিরোধিতা করে আসছে। আমরা বাঙালী দল গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। ত্রিপুরা রাজ্যের জাতি উপজাতি সবার কল্যাণ তথা পিছিয়ে পড়া প্রতিটি মানুষের উন্নয়ন চায় সে উপজাতি আর বাঙালী হোক। কারণ দল চায় প্রতিটি মানুষের ভাষা সংস্কৃতি কৃষ্টি শিক্ষা সাহিত্য ঐতিহ্যের উন্নয়ন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *