উত্তর পূর্বাঞ্চল ভারতীয় সংস্কৃতির এক অমূল্য রত্ন : অমিত শাহ

নয়দিল্লী, ১১ মার্চ : কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র তথা সমবায় মন্ত্রী অমিত শাহ আজ নতুন দিল্লিতে উত্তর-পূর্ব ছাত্র ও যুব সংসদে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন। স্টুডেন্ট এক্সপেরিয়েন্স ইন ইন্টার-স্টেট লিভিং (এসইআইএল) এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে ভারতীয় সংস্কৃতির এক অমূল্য রত্ন হিসাবে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, পরম্পরা ও ঐতিহ্য পূর্ণ এই অঞ্চল ভারতের সাংস্কৃতিক বুননকে সমৃদ্ধ করেছে। এই অঞ্চলের অপরিসীম সম্ভাবনার কথাও তুলে ধরেন তিনি। শ্রী শাহ বিশেষ করে পর্যটনের দৃষ্টিকোণ থেকে এই অঞ্চলের সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন। ভারতের মধ্যে সর্বোচ্চ আইকিউ বৃদ্ধির জন্য উত্তর-পূর্বাঞ্চলের যুবকদের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই অঞ্চযে বসবাস করছে অত্যন্ত কঠোর পরিশ্রমী জনজাতিদের জনগণ। শ্রী শাহ জোর দিয়ে বলেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চল হল বৈচিত্র্যের এক ভূমি, যেখানে ২২০টিরও বেশি জনজাতি গোষ্ঠী, ১৬০টি জনজাতি, ২০০টি উপভাষা ও ভাষা, ৫০টি অনন্য উৎসব এবং ৩০টিরও বেশি বিশ্বখ্যাত নৃত্যশৈলী রয়েছে।

অমিত শাহ স্বীকার করেন যে, বহু অনন্য গুণাবলী থাকা সত্ত্বেও উত্তর-পূর্বাঞ্চল উন্নয়নের ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়েছে। কারণ একটা সময় বিদ্রোহ ও বিচ্ছিন্নতাবাদ উসকে দেওয়া হয়েছিল। তিনি উল্লেখ করে বলেন, হিংসা, বনধ, মাদক, অবরোধ এবং আঞ্চলিকতা এই অঞ্চলকে বিভক্ত করে রেখেছিলো, যা কেবল উত্তর-পূর্ব এবং দেশের বাকি অংশের মধ্যেই নয়, এই অঞ্চলের রাজ্যগুলির মধ্যেও বিভাজন সৃষ্টি করেছিলো। ফলস্বরূপ, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিকাশ প্রক্রিয়া ৪০ বছর বিলম্বিত হয়। সন্ত্রাসবাদ এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলি এই সময়কালে প্রাথমিক বাধা ছিল।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শ্রী শাহ বলেন, তাঁর দল যখনই ক্ষমতায় এসেছে, উত্তর-পূর্বকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। তিনি বলেন, আগে এত বড় ও অনুন্নত অঞ্চলের জন্য কোনও পৃথক মন্ত্রক ছিল না। কিন্তু অটলজীর নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে এই মন্ত্রক প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিটি কর্মসূচিতে উত্তর-পূর্বাঞ্চল কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। শ্রী শাহ দৃঢ়তার সাথে বলেন, মোদী সরকারের সবচেয়ে বড় সাফল্য হল উত্তর-পূর্ব থেকে বাকি ভারতের মধ্যে দূরত্ব কমানো। আগামী ২০২৭ সালের মধ্যে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সবক’টি রাজ্যের রাজধানীকে রেল, বিমান ও সড়ক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে যুক্ত করার ঘোষণা দেন তিনি। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদী কেবল উত্তর-পূর্ব এবং ভারতের বাকি অংশের মধ্যে যোগাযোগই সমৃদ্ধ করেননি, মানসিক বিভাজন দূর করতেও কাজ করছেন। শ্রী শাহ বলেন, মোদী সরকার উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে প্রতিটি পরিকল্পনার কেন্দ্রবিন্দুতে রেখেছে, বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে একে একে আলোচনায় বসেছে, তাদের উদ্বেগ অনুধাবন করেছে এবং চুক্তির মাধ্যমে তাদের মূলস্রোতে নিয়ে আসার জন্য কাজ করছে।

অমিত শাহ বলেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চলে এখন শান্তি বিরাজ করছে। ২০০৪ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে এই অঞ্চলে ১১ হাজার সহিংসতার ঘটনা ঘটেছিলো, যেখানে ২০১৪ থেকে ২০২৪ সাল সময়কালেএই সংখ্যা প্রায় ৭০ শতাংশ কমে ৩ হাজার ৪২৮-তে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, জঙ্গি কার্যকলাপের নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মী-আধিকারিকদের নিহত হওয়ার ঘটনা ৭০ শতাংশ কমেছে এবং বেসামরিক নাগরিক নিহত হবার মত ঘটনা ৮৯ শতাংশ কমেছে। শ্রী শাহ উল্লেখ করেন যে, মোদী সরকার সমস্ত জঙ্গি গোষ্ঠীর সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, যার ফলে ১০,৫০০ এরও বেশি বিদ্রোহী তাদের অস্ত্র সমর্পণ করেছে এবং মূলধারার সাথে যুক্ত হয়েছে । তিনি জোর দিয়ে বলেন, গত ১০ বছরে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে ১২টি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারত উদ্যোগের অধীনে, সরকার উত্তর-পূর্বের ভাষা, উপভাষা, সংস্কৃতি, পোশাক, ঐতিহ্যবাহী নৃত্য এবং শিল্পকলাকে সম্মান ও সংরক্ষণ করেছে। জঙ্গিরা মূলস্রোতে ফিরে আসার মাধ্যমে ১০,০০০ এরও বেশি অস্ত্র সমর্পণ করেছে এবং এই প্রক্রিয়ায় এই অঞ্চল জুড়ে শান্তির পরিবেশ গড়ে উঠেছে।

অমিত শাহ বলেন, শান্তি ছাড়া কোনও অঞ্চলের উন্নয়ন সম্ভব নয়, কারণ শান্তি অগ্রগতির এক মৌলিক শর্ত। তিনি জোর দিয়ে বলেন, মোদী সরকার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠায় আন্তরিকভাবে নজর দিয়েছে । শ্রী শাহ মোদী সরকারের অধীনে মহাকাশ প্রযুক্তি থেকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উল্লেখযোগ্য সুবিধাগুলির কথা তুলে ধরেন, উত্তর-পূর্ব স্পেস অ্যাপ্লিকেশন সেন্টার (এনইএসএসি) এর মাধ্যমে প্রায় ১১০টি প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে বলে তিনি জানান । তিনি আরও উল্লেখ করেন যে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বন্যা ব্যবস্থাপনার জন্য, এই অঞ্চলে ৩০০ টিরও বেশি হ্রদ নির্মাণের পরিকল্পনা করতে স্যাটেলাইট ম্যাপিং এবং টপোগ্রাফি ব্যবহার করা হয়েছে, যা আগামী দিনে স্থায়ী বন্যা ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করবে।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা সমবায় মন্ত্রী বলেন, মোদী সরকারের আমলে গত ১০ বছরে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নের জন্য অনেক চেষ্টা করা হয়েছে। সরকার এই অঞ্চলের জন্য বাজেটের সংস্থান বাড়িয়েছে। তিনি বলেন, ২০১৪-১৫ অর্থবর্ষের তুলনায় প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের বাজেট ১৫৩ শতাংশ বৃদ্ধি করেছেন। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে উন্নত যোগাযোগের জন্য, সড়ক উন্নয়নে ৪১,০০০ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে এবং গ্রামীণ রাস্তার জন্যে পৃথকভাবে ৪৭,০০০ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। তিনি বলেন, মোদী সরকার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে রাস্তাঘাটের জন্য ৯০ হাজার কোটি টাকা খরচ করেছে। শ্রী শাহ উল্লেখ করেন যে, বিমান যোগাযোগের জন্য ৬৪ টি নতুন বিমান রুট চালু করা হয়েছে, ভাইব্র্যান্ট ভিলেজ কর্মসূচিতে ৪,৮০০ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে এবং রেলওয়ের জন্য ১৮,০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

অমিত শাহ বলেন, আজ ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর ভারতের বৃহত্তম রেল-কাম-রোড সেতু নির্মিত হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন যে প্রধানমন্ত্রী মোদী ভূপেন হাজারিকা সেতু নির্মাণ করেছেন, অরুণাচল প্রদেশকে একটি সবুজ ক্ষেত্র বিমানবন্দর দিয়েছেন, রেলওয়ে নেটওয়ার্কের ১০০ শতাংশ বৈদ্যুতিকীকরণ অর্জন করেছেন এবং আসাম থেকে ভুটান পর্যন্ত একটি নতুন রেলপথ নির্মিত হচ্ছে। শ্রী শাহ আরও বলেন, আগামী ২০২৭ সালের মধ্যে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সবক’টি রাজ্যের রাজধানীগুলিকে রেল, বিমান ও সড়কপথে যুক্ত করা হবে। মোদী সরকারের আমলে শুধু উত্তর-পূর্বের ভৌগোলিক দূরত্বই কমানো হয়নি, হৃদয়ের দূরত্বও কমেছে। তিনি আরও বলেন, সিকিমে ১০০ শতাংশ জৈব চাষের লক্ষ্য আমাদের সরকারের আমলেই পূরণ হয়েছে। তিনি বলেন, আজ অসমে ২৭ হাজার কোটি টাকার সেমিকন্ডাক্টর প্ল্যান্ট আসছে, যা যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেবে। শ্রী শাহ উল্লেখ করেন যে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২.৫ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগ আসছে। তিনি বলেন, মোদী সরকারের অধীনে গত ১০ বছরে এই উন্নয়নের ভিত্তি স্থাপন করা হয়েছে এবং পরবর্তী ১০ বছরে উত্তর-পূর্ব থেকে কোনও শিশুকে কাজের জন্য দেশের অন্য অংশে যেতে হবে না; সেখানেই কর্মসংস্থান হবে।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’-এর সময় আমরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম যে ২০৪৭ সালের মধ্যে ভারত একটি সম্পূর্ণ উন্নত দেশ হয়ে উঠবে এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে বিশ্বকে নেতৃত্ব দেবে। তিনি বলেন, ২০৪৭ সালের মধ্যে ভারত মাতা তাঁর পূর্ণ শক্তি নিয়ে বিশ্বের সামনে দাঁড়াবে। তিনি আরও বলেন, বিশ্বের প্রতিটি ক্ষেত্রেই ভারতকে নেতৃত্ব দিতে হবে । শ্রী শাহ উল্লেখ করেন যে, মহর্ষি অরবিন্দ এবং স্বামী বিবেকানন্দের এই স্বপ্ন এখন বাস্তবায়িত হতে চলেছে। এই প্রক্রিয়ায় যুবসমাজকে যুক্ত করতে আমাদের সরকার বেশ কিছু প্রয়াস গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদীই প্রথম নতুন শিক্ষানীতি চালু করেছেন, যেখানে আমরা আমাদের ভাষা সংরক্ষণ এবং মাতৃভাষাকে গুরুত্ব দেওয়ার উপর জোর দিয়েছি। তিনি আরও বলেন, নতুন শিক্ষানীতির মাধ্যমে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা স্থানীয় এবং বৈশ্বিক উভয়ই ধরনের হবে, যা যুবকদের জন্য অনেক সুযোগ তৈরি করবে।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং ভারত সরকারের হৃদয়ের খুব কাছের। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্বে ভারত সরকার কেবল বাজেট বরাদ্দের জন্যই নয়, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উন্নয়ন, ঐক্য ও শান্তির প্রতিও সম্পূর্ণ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *