রাজ্যের সার্বিক উন্নয়নের প্রশ্নে ফের একবার কমিউনিস্টদের সমালোচনা মুখ্যমন্ত্রীর

আগরতলা, ২৮ ফেব্রুয়ারি: সাধারণ মানুষের প্রয়োজনে উন্নয়নমূলক কাজ নিয়ে রাজনীতি না করাই ভালো। রাজ্যের সার্বিক উন্নয়নে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে বর্তমান রাজ্য সরকার। উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির মধ্যে জিএসডিপি ও মাথাপিছু আয়ের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্থানে রয়েছে ত্রিপুরা।
শুক্রবার আগরতলার ৩৯ নং পুর ওয়ার্ডের উদ্যোগে ওয়ার্ড কমিউনিটি হলে আয়োজিত এক মেগা রক্তদান শিবিরের উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। রাজ্যের সার্বিক উন্নয়ন নিয়ে এদিন ফের একবার কমিউনিস্টদের তীব্র সমালোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, রক্তদান থেকে অনেক শিক্ষণীয় রয়েছে। রক্তের মধ্যে অস্বচ্ছতা থাকলে সেটা কোন অবস্থায় গ্রহণ করা যাবে না। আর সমাজের মধ্যে অস্বচ্ছতা থাকলে সেটাও সমাজ গ্রহণ করবে না। আগে আমরা দেখতাম সমস্ত জায়গায় অস্বচ্ছতা। যে কারণে মানুষ তাদের পরিত্যাগ করেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও সবসময় স্বচ্ছতার কথা বলছেন। আর রক্ত দিতে আসলে শরীরের কোন ধরণের সমস্যা রয়েছে কিনা সেটা পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে চিহ্নিত করা যায়। এতে নিজের শরীরে কোন রোগ ব্যাধি রয়েছে কিনা সেটা ধরা পড়ে। তাই এধরণের রক্তদান শিবির করা খুবই প্রয়োজন। রক্ত ছাড়া বাঁচা যাবে না। সমাজের ভালোর জন্যও ভালো কাজ করার প্রয়োজন রয়েছে।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, রক্তের চাহিদা বাজার থেকে কিনে পূরণ করা সম্ভব নয়। একমাত্র সেটা পূরণ করা সম্ভব এধরণের রক্তদান কর্মসূচির মাধ্যমে। রক্তদানের চাইতে বড় দান আর কিছুই হয় না। হাসপাতালে অপারেশনের সময়েও রক্তের প্রয়োজন হয়। সেজন্য অপারেশনের আগে প্রয়োজনীয় রক্তের মজুত রাখতে হয়। রক্তের চার ধরণের শ্রেণী বিন্যাস রয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে পজিটিভ ও নেগেটিভ রক্ত। আমাদের ত্রিপুরা রাজ্যে রক্তের কোন সমস্যা হলে মানুষ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। কোভিডের সময়েও আমার আহ্বানে সাড়া দিয়ে মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে স্বেচ্ছা রক্তদানে এগিয়ে এসেছেন। কিছুদিন আগেও রাজ্যে ভয়াবহ বন্যার মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলায় সরকারের সমস্ত দপ্তরের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। ৩/৪ দিনের মধ্যেই আমরা পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছি।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মন কি বাত কার্যক্রমে সারা দেশের মধ্যে ত্রিপুরা সর্বপ্রথম হয়েছে। আজ উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির মধ্যে জিএসডিপি ক্ষেত্রে আমাদের ত্রিপুরা রাজ্য দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্থানে রয়েছে। সবদিক দিয়ে বেস্ট পারফর্মিং স্টেট এবং ফ্রন্ট রানার হয়েছে ত্রিপুরা। মাথাপিছু আয়ের ক্ষেত্রেও ত্রিপুরা উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলির মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্থানে রয়েছে। অথচ সারা দেশের মধ্যে ত্রিপুরা হচ্ছে তৃতীয় ক্ষুদ্রতম একটি রাজ্য। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে আমাদের মধ্যে একাগ্রতার অভাব নেই। ভারতবর্ষের মানচিত্রে এখন মানুষ ত্রিপুরাকে চিনতে পারে। আগে আমরা দেখতাম শুধু জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ করা হতো। উন্নয়নমূলক কোন কাজ করা হলে বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা হতো। কমিউনিস্টরাই রাজ্যে চাকরি প্রদান সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করে গেছে। আর এখন আমাদের সরকার সেসব সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে। রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে ড্রেনের সংস্কার সহ সব ক্ষেত্রেই সমস্যা তৈরি করে গিয়েছে তারা। ঋণ তারা রেখে গিয়েছেন। আর এখন আমাদের সেই ঋণ পরিশোধ করতে হচ্ছে। গত অর্থ বছরে আমাদের বাজেট ছিল ২৭,৮০০ কোটি টাকা। এবার হয়তো আরেকটু বাড়বে। আমাদের নিজস্ব বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে ৩,৭০০ কোটি টাকা আসে। সেখান থেকেও ২৫% এডিসিকে দিতে হয়। কিন্তু এরপরও আমরা উন্নয়নমূলক কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের ডাবল ইঞ্জিন সরকারের এই একটা সুবিধা। আমাদের প্রয়োজন হলে কেন্দ্রীয় সরকার সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়।
এদিকে রাজধানীর লেইক চৌমুহনী বাজারে উচ্ছেদ অভিযান নিয়ে সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, সাধারণ মানুষের প্রয়োজনে উন্নয়নমূলক কাজ নিয়ে রাজনীতি না করাই ভালো।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আগরতলা পুর নিগমের মেয়র তথা বিধায়ক দীপক মজুমদার, বিধায়িক মীনা রানী সরকার, ৩৯ নং পুর ওয়ার্ডের কর্পোরেটর অলক রায় সহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *