আগরতলা, ৩০ জানুয়ারী : ত্রিপুরার আর্থিক ব্যবস্থাপনা খুবই ভালো। কিন্তু জাতীয় গড়ের তুলনায় রাজ্যের মাথাপিছু আয় কম। আজ দুপুরে রাজ্য সরকারি অতিথিশালায় আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে এমনটাই জানিয়েছেন ষোড়শ অর্থ কমিশনের চেয়ারম্যান ড. অরবিন্দ পানাগড়িয়া ।
এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে ষোড়শ অর্থ কমিশনের চেয়ারম্যান রাজ্যের আর্থিক পরিস্থিতির প্রশংসা করে বলেন, এটা নিশ্চিতভাবেই একটা রাজ্যের পক্ষে ভালো লক্ষণ। তিনি জানান, আজ সকালে সচিবালয়ে এক বৈঠকে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কমিশনের কাছে রাজ্যের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দাবি দাওয়া সম্পর্কিত একটি স্মারকলিপি পেশ করা হয়। এতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা) মানিক সাহা, অর্থমন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহ রায়, মুখ্যসচিব জে কে সিনহা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। তাঁর কথায়, ত্রিপুরার আর্থিক অবস্থা ভালো। ঋণ হ্রাস পাচ্ছে এবং ব্যয়ও হ্রাস পাচ্ছে। এটি সুষ্ঠু আর্থিক ব্যবস্থাপনার ইঙ্গিত দেয়।তাঁর নিজস্ব পর্যবেক্ষণ হল ত্রিপুরা একটি সুপরিচালিত রাজ্য। যে রাজ্যটি কৃষি থেকে শিল্প ও পরিষেবার দিকে রূপান্তরিত হচ্ছে।
এদিন তিনি আরো বলেন, ত্রিপুরার একটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হল যে এখানকার জনগণ কৃষির উপর অনেকটা কম নির্ভরশীল। যেখানে জাতীয়স্তরে, ৪৫ শতাংশ কর্মী কৃষিক্ষেত্রের উপর নির্ভরশীল। সেখানে ত্রিপুরায় ৩০-৩১ শতাংশ শ্রমিক কৃষির উপর নির্ভরশীল। নগরায়নের পরিমাণ এবং কৃষি থেকে শিল্প ও পরিষেবায় রূপান্তর উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি বিবেচ্য বিষয়। ত্রিপুরা এই ক্ষেত্রে ভারতের অনেক অংশের তুলনায় অনেক এগিয়ে রয়েছে।তাছাড়া, এদিন চেয়ারম্যান স্বীকার করেন, জাতীয় গড়ের তুলনায় রাজ্যের মাথাপিছু আয় কম। একই সাথে রাজ্যের সামগ্রিক পরিস্থিতি “অত্যন্ত ইতিবাচক এবং আশাবাদী” বলেও উল্লেখ করেন।উত্তর-পূর্বের অন্যান্য অংশের তুলনায়, এটি অগ্রগতির পথে আরও এগিয়ে রয়েছে।
এদিন পানাগড়িয়া বলেন, ত্রিপুরা বিভিন্ন প্যারামিটার পরিবর্তন করে ১৫তম অর্থ কমিশনের করের অনুভূমিক বিভাজনের সূত্র সংশোধন করতে চেয়েছিল। যেমন, রাজ্য জনসংখ্যার ভিত্তিতে বর্তমান ১৫ শতাংশ ভাগ কমিয়ে ১০ শতাংশ, ভৌগোলিক এলাকার ভিত্তিতে ১৫ শতাংশ ভাগ কমিয়ে ৫ শতাংশ এবং বন ও বাস্তুতন্ত্রের ভিত্তিতে বর্তমান ১০ শতাংশ ভাগ বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছে। তাছাড়া, রাজ্য মোট উর্বরতার হারের জন্য ১২.৫ শতাংশ ভাগ সংশোধন করে ৫ শতাংশ করার পরামর্শ দিয়েছে। তিনি আরও বলেন যে ত্রিপুরা কর বিভাজনের জন্য দুটি নতুন প্যারামিটার প্রস্তাব করেছে – আন্তর্জাতিক সীমান্তের জন্য ৫ শতাংশ ভাগ এবং ৫ শতাংশ করের অংশ সহ অবকাঠামোর সূচক ব্যবহার করা।
তাঁর কথায়, এই দুটি প্যারামিটার অতীতের কোনও অর্থ কমিশন ব্যবহার করেনি। তিনি বলেন, পূর্ববর্তী সমস্ত কমিশন কিছু ন্যায্যতার উপর জোর দেওয়ার চেষ্টা করেছে যাতে প্রতিটি রাজ্য শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যের মতো একই স্তরের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষেবা প্রদান করতে সক্ষম হয়। তিনি জানান, পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী কেন্দ্রীয় করের ৪১ শতাংশ অর্থ রাজ্যগুলিকে দেওয়া হচ্ছে এবং ৫৯ শতাংশ অর্থ কেন্দ্রীয় সরকার নিজের হাতে রাখছে। এবার অধিকাংশ রাজ্য রাজ্যকে দেওয়া কেন্দ্রীয় করের পরিমাণ ৪১ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করার দাবি জানিয়েছে। আজ ত্রিপুরা সরকারের পক্ষ থেকেও এই পরিমাণ ৪১ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ৫০ শতাংশ করার দাবি জানানো হয়েছে।
এদিন তিনি আরো বলেন, ত্রিপুরা সফরকালে অর্থ কমিশন আগরতলার একটি গ্রাম পঞ্চায়েত পরিদর্শন করে। ওই পঞ্চায়েতের অধীনে বসবাসকারীদের সাথে কথা বলেন। তাঁরা অর্থ কমিশনের নিকট দুর্যোগ মোকাবিলায় ত্রাণের সুপারিশ করা হয়েছে। গত বছর ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছিল ত্রিপুরা। যার ফলে ৩৮ জন মারা গিয়েছিল এবং ১.৭ লক্ষেরও বেশি মানুষ তাদের বাড়িঘর থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছিল।
এদিন ১৬তম অর্থ কমিশনের সুপারিশে উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলির জন্য কোনও বিশেষ কোটা অন্তর্ভুক্ত করা হবে কিনা জানতে চাইলে, পানাগড়িয়া বলেন যে পাহাড়ি ভূখণ্ডের কারণে এই অঞ্চলে পরিষেবার খরচ বেশি। যেমন হিমাচল প্রদেশ এবং উত্তরাখণ্ডেও খরচ বেশি। এক অর্থে বলা যায়, রাজ্যগুলির জন্য দুটি মানদণ্ড অনুকূলভাবে কাজ করেছে তা হল বন। সাধারণত, উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলিতে বন ঘন থাকে এবং অতীতে এটিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এটি এমন একটি মানদণ্ড যা কিছু সুবিধা প্রদান করে। এছাড়াও, এলাকা অনুসারে, এই রাজ্যগুলি ছোট। ত্রিপুরা দেশের ভৌগোলিক এলাকার প্রায় ০.৫-০.৭ শতাংশ নিয়ে গঠিত। তাই, এই জাতীয় সমস্ত রাজ্যের জন্য আমরা সরাসরি ২ শতাংশ এলাকা নির্ধারণ করি। স্বাভাবিকভাবেই, সমতল অঞ্চলের রাজ্যগুলির তুলনায় উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলিতে মাথাপিছু বিচ্যুতি বেশ বেশি।