আগরতলা, ২৮ নভেম্বর : রাজ্য সরকার রাজ্যের উন্নয়নে তাজ হোটেল শহরের পাশ্ববর্তী স্থানে বানিয়ে রাজ্যের মান উন্নয়ন করুক। রাজ্যের উন্নয়নে ও জনগণের উন্নয়নে আমরা বাঙালী দল সব সময় সহযোগিতা করবে। আজ সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে এই কথাগুলো তুলে ধরেন আমরা বাঙালি দলের সদস্যরা।
সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে রাজ্যের পুস্পবন্ত প্রাসাদকে তাজ হোটেল বানানোর প্রস্তাবের বিরোধিতায় আমরা বাঙালি দল। আজ সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন রাজ্য সচিব গৌরাঙ্গ রুদ্র পাল, দুলাল ঘোষ, অশোক কুমার দাস সহ আমরা বাঙালী দলের অন্যান্য প্রতিনিধিগণ।
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া ও পত্রিকা মারফত জানা যায় রাজ্য সরকার মহারাজা বীরেন্দ্র কিশোর মাণিক্য মিউজিয়াম এন্ড কালচারাল সেন্টারকে তাজ হোটেল গ্ৰুপের হাতে তুলে দিতে চাইছে। একটি স্টার হোটেল বানানোর জন্য এই উদ্যোগ। ইতিপূর্বে দেখা গেছে, স্মার্টসিটির রাস্তার পরিসর বাড়ানোর জন্য পোষ্ট অফিস চৌমুহনীর মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত কামান টিকে সরিয়ে ফেলা হয়েছিল। যেখানে এটি রেখে রাস্তা বড় করা যেত। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বিরোধীতা সহ শহরের বিশিষ্ট জনগণের বিরোধীতা স্বত্বেও সরকার রাজনৈতিক ক্ষমতার জোরে স্মৃতি স্তম্ভটিকে সরিয়ে নিয়েছিল।
এইবার রাজ্যের কৃষ্টি সাংস্কৃতি বিসর্জন দিয়ে পাহাড়ী বাঙালীদের আবেগ জড়িত মাণিক্য রাজাদের অতিথি শালা অর্থাৎ পুস্পবন্ত প্রাসাদকে ধ্বংস করে তাজ হোটেল বানানোর পরিকল্পনায় রয়েছে। যদিও ওই প্রাসাদের উল্টোদিকে আন্তর্জাতিক মানের একটি হোটেল রয়েছে। সরকার হোটেল বানাতে অন্যত্র জায়গা পছন্দ করে তাজ হোটেল বানানোর জন্য রাজ্য সরকারের কাছে দাবি করছে আমরা বাঙালি দল।
প্রসঙ্গত, এই প্রাসাদের সাথে মাণিক্য রাজাদের স্মৃতি জড়িয়ে আছে। পাশাপাশি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আবেগও জড়িয়ে আছে। প্রাসাদের অন্য আরেকটি নাম ছিল কুঞ্জবন প্রাসাদ। প্রায় একশত বছরের পুরনো প্রাসাদটিতে সুরক্ষিত আছে রাজ পরিবারের অনেক পুরনো স্মৃতি। ১৯৪৯ সালে ত্রিপুরা রাজ্য ভারতীয় ইউনিয়নের অন্তর্গত হওয়ার পর ৪/৩১ একর জায়গার ওপর নির্মিত এই প্রাসাদটি প্রধান কমিশনারের বাংলোতে পরিণত হয়। পরবর্তী সময়ে ত্রিপুরা পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা পেলে এই পুষ্পবন্ত হয়ে উঠে রাজভবন এবং ২০১৮ সাল পর্যন্ত এখান থেকেই রাজভবনের কার্যক্রম চলতো।
এদিকে, ২০২২ সালের ১৪ ই অক্টোবর ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রোপদী মুর্মু পুস্পবন্ত প্রাসাদটিকে উত্তর পূর্বাঞ্চলের কৃষ্টি সংস্কৃতি ধরে রাখার জন্য ডিজিটাল জাদুঘর হিসেবে উদ্বোধন করেন, যার নামকরণ করা হয় প্রাসাদটির নির্মাতাকে সন্মান জানিয়ে মহারাজা বীরেন্দ্র কিশোর মাণিক্য মিউজিয়াম এন্ড কালচারাল সেন্টার। তাই রাজ্যের এমন একটি প্রাচীন ঐতিহ্য যা জাতি জনজাতিদের মিলনায়তন ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে তাজ হোটেল বানানোর তীব্র বিরোধিতা করেছে আমরা বাঙালী দল।