আগরতলা, ১৬ সেপ্টেম্বর : সম্প্রতি বন্যায় সারা রাজ্যে বিভিন্ন খারিফ কৃষিজ ফসল চাষে ক্ষতিগ্রস্ত ১ লক্ষ ৪৮ হাজার ৩৭৯ জন কৃষককে এই সপ্তাহের মধ্যে তাদের ব্যাঙ্ক একাউন্টে ১ হাজার টাকা করে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ব্যয় হবে ১৪ কোটি ৮৩ লক্ষ ৭৯ হাজার টাকা। শীতকালীন সব্জি, পান, ফল ও বাগিচা ফসল চাষে ক্ষতিগ্রস্ত ৪৫ হাজার ২৪৮ জন কৃষককে চলতি সপ্তাহেই আর্থিক সহায়তা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৪২ হাজার ৩৭৪ জন সব্জিচাষিকে ১ হাজার টাকা করে, ৮৯৭ জন ফল ও বাগিচা চাষিকে ২ হাজার টাকা করে এবং ১,৯৭৭ জন ক্ষতিগ্রস্ত পান চাষিকে পান বরোজ মেরামতের জন্য ২,৯৫০ টাকা করে তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে দেওয়া হবে। আজ আগরতলা প্রেস ক্লাবে এক সাংবাদিক সম্মেলনে কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের সচিব অপূর্ব রায় একথা জানান। তিনি জানান, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের অন্তবর্তীকালীন সহায়তার জন্য রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরকে ২০ কোটি টাকা দিয়েছে। এর মধ্যে কৃষি খাতে ১৫ কোটি টাকা এবং উদ্যান ও বাগিচা ফসলের জন্য ৫ কোটি টাকা দিয়েছে। উদ্যান দপ্তরের অধিকর্তা ফনিভূষণ জমাতিয়াও সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের সচিব অপূর্ব রায় জানান, সাম্প্রতিক বন্যায় খারিফ কৃষিজ ফসল উৎপাদনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ১ লক্ষ ৪৮ হাজার ৩৭৯ জন কৃষক। ক্ষতির পরিমাণ ৯৪৩ কোটি ৫৯ লক্ষ টাকা। জৈব ফসল চাষে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৭ হাজার ৯২৯ জন কৃষক। ক্ষতির পরিমাণ ৬৮ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা। জমিতে বালি, নুড়ি এবং পলিমাটি জমে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৪১ হাজার ৫২১ জন কৃষক। ক্ষতির পরিমাণ ১৬৩ কোটি ৭৮ লক্ষ টাকা। ডালপালা, কাঠ, বাঁশ, ভূমি ধুসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ১৫ হাজার ১২৪ জন কৃষক। ক্ষতির পরিমাণ ৯০ কোটি ১২ লক্ষ টাকা। বিভিন্ন জলাধারে মাটি, বালি, পলি পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ২ হাজার ৭৭৯ জন কৃষক। ক্ষতির পরিমাণ ১৮কোটি ৬৪ লক্ষ টাকা। সচিব জানান, সব মিলিয়ে কৃষিজ ফসলের ক্ষতি হয়েছে ১ হাজার ২৮৪ কোটি ৯৩ লক্ষ টাকা। উদ্যানজাত ফসল চাষে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৪৫ হাজার ৩৪৯ জন কৃষক। ক্ষতির পরিমাণ ৭১২ কোটি ৫০ লক্ষ ৩৮ হাজার টাকা। বালি, নুড়ি, পলিমাটি জমে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এবং ডালপালা, কাঠ, বাঁশ, ভূমি ধুসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ১৫ হাজার ৭৯৯ জন উদ্যান ও বাগিচা চাষি। ক্ষতির পরিমাণ ৬৯ কোটি ৮৯ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা। উদ্যান ও বাগিচা ফসলে সব মিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ ৭৮২ কোটি ৪০ লক্ষ ৮ হাজার টাকা।
কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের সচিব জানান, এসডিআরএফ ও এনডিআরএফ’র নিয়ম অনুযায়ী কৃষি ও উদ্যানজাত ফসলের ক্ষেত্রে বৃষ্টিনির্ভর এলাকায় হেক্টর প্রতি সহায়তার পরিমাণ ৮ হাজার ৫০০ টাকা। সেচ সেবিত এলাকার ক্ষেত্রে ১৭ হাজার টাকা এবং বহু বর্ষজীবী ফসলের ক্ষেত্রে ২২ হাজার ৫০০ টাকা। এছাড়া বালি, নুড়ি এবং পলিমাটি জমে জমি ও জলাধারের ক্ষতির জন্য হেক্টর প্রতি সহায়তার পরিমাণ ১৮ হাজার টাকা। ভূমিধসের কারণে ক্ষতির জন্য হেক্টর প্রতি সহায়তার পরিমাণ ৪৭ হাজার টাকা। এই হিসেবে কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তর থেকে ১২৮ কোটি ৮০ লক্ষ ৪৩ হাজার টাকা সহায়তার প্রস্তাব রাজ্যের রাজস্ব দপ্তরের কাছে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে কৃষি খাতে ১১৩ কোটি টাকা এবং উদ্যান ও বাগিচা ফসলের জন্য ১৫ কোটি ৮০ লক্ষ ৪৩ হাজার টাকা। সচিব জানান, ইতিমধ্যেই কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তর থেকে ১২৩ মেট্রিক টন উচ্চফলনশীল আমন ধানের বীজ ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি কৃষি খামারগুলিতে ১০ হেক্টর এলাকায় নার্সারি তৈরির মাধ্যমে ধানের চারা উৎপাদন করে বিনামূলে নিকটবর্তী আমন ধান চাষিদের বিতরণ করা হয়েছে। উদ্যান ও ভূমি সংরক্ষণ বিভাগ ইতিমধ্যেই রাজ্যের ৪ হাজার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষককে ৪০০টি করে ১৬ লক্ষ শীতকালীন সব্জির চারা বিনামূল্যে বিতরণ করার উদ্যোগ নিয়েছে। দক্ষিণ ত্রিপুরা, গোমতী ও সিপাহীজলা জেলায় ৫১ হাজার ৭০০টি চারা জুমেরঢেপা সব্জি উৎকর্ষতা কেন্দ্র থেকে কৃষকদের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে।
কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের সচিব জানান, আসন্ন রবি খন্দে ২৬ হাজার ৩৭০ হেক্টর এলাকায় হাইব্রিড ধান এবং ১৫০ হেক্টর এলাকায় গম চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বীজ, অন্যান্য উপকরণ ও আর্থিক সহায়তা বাবদ হেক্টর প্রতি ৯ হাজার টাকা করে সহায়তা দেওয়া হবে। রবি মরশুমে ৭০ হেক্টর এলাকায় বেবিকর্ণ এবং ১২০ হেক্টর এলাকায় ভুট্টা চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তাতে হেক্টর প্রতি ৬ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। ডাল জাতীয় শস্যের মধ্যে ৪৮০ হেক্টরে মটর এবং ১২৯২ হেক্টরে রাজমা চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রতি হেক্টরে ৯ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। রবি খন্দে তৈলবীজ ফসলের মধ্যে ৭ হাজার ৫০০ হেক্টর এলাকায় সরিষা এবং ৫০০ হেক্টর এলাকায় বাদাম চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সরিষা চাষের জন্য প্রতি হেক্টরে ৯ হাজার টাকা এবং বাদাম চাষের জন্য প্রতি হেক্টরে ২৪ হাজার টাকা সহায়তা দেওয়া হবে। শীতকালীন সব্জি চাষের জন্য ৪২ হাজার ৩৭৪ জন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষককের প্রত্যেককে ১ হাজার টাকা মূল্যের বিভিন্ন শীতকালীন সব্জিবীজ বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে। তাতে ব্যয় হবে ৪ কোটি ২৩ লক্ষ ৭৪ হাজার টাকা। বন্যায় ১৯৭৭ জন ক্ষতিগ্রস্ত পান চাষিকে পান বরোজ মেরামতের জন্য অতিরিক্ত ১ হাজার ৫০ টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। তাতে ব্যয় হবে ২০ লক্ষ ৭৬ হাজার টাকা। তাতে ১ জন ক্ষতিগ্রস্ত পানচাষি মোট ৪ হাজার টাকা করে সহায়তা পাবেন। সহায়তা করা হবে ১০১ জন ফুল চাষিকেও। তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ২ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে বলে কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের সচিব অপূর্ব রায় জানিয়েছেন।

