নবান্ন অভিযানে পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে খণ্ডযুদ্ধ, বনধের ডাক বিজেপির 

কলকাতা, ২৭ আগস্ট : আরজি কর কান্ডের প্রতিবাদে নবান্ন অভিযান ঘিরে কলকাতায় আজ তুলকালাম বেঁধেছে। পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে খণ্ডযুদ্ধ রণক্ষেত্রের রূপ নিয়েছে। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ও পাথর ছোড়া হয়েছিল। পাল্টা পুলিশ লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস ও জল কামান ছুড়ে প্রতিবাদীদের ছত্রভঙ্গ করেছে। পুলিশের দাবি, পরিস্থিতি মোকাবিলায় নেমে অন্তত ১১ জন পুলিশকর্মী আহত হয়েছেন। এদিকে, আন্দোলনকারীদের উপর পুলিশের বল প্রয়োগের প্রতিবাদে বিজেপি আগামীকাল পশ্চিমবঙ্গ বনধের ডাক দিয়েছে। প্রশাসন আগামীকাল বনধের সব কিছু স্বাভাবিক থাকবে বলে নির্দেশিকা জারি করেছে।   

এদিন হাওড়া ব্রিজে তুমুল অশান্তি বেঁধেছে। বিক্ষোভকারীদের হঠাতে পুলিশ জলকামান ছুড়েছে। ফোরশোর রোডেও ধরা পড়েছে একই অশান্তির ছবি। আন্দোলনকারীদের ছোড়া ইটের ঘায়ে হাওড়ায় জখম হয়েছেন ব়্যাফের এক জওয়ানের। মাথা ফেটেছে চণ্ডীতলা থানার সিআইয়েরও। আহত পুলিশকর্মীকে উদ্ধার করেছেন আন্দোলনকারীরাই। 

এদিকে, বেলা যত গড়িয়েছে বদলে গেছে সাঁতরাগাছি, ফোরশোর রোড, হাওড়া ব্রিজের চেহারা। প্রথমে সাঁতরাছিতে ব্যারিকেড ভাঙতে শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। বেশ কয়েকটি ব্যারিকেড ভেঙেও ফেলেন তাঁরা। আন্দোলনকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট, পাথর ছোড়ে। পরিস্থিতি সামাল দিতে পালটা লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। কাঁদানে গ্যাসের শেলও ফাটানো হয়ছে। হাওড়া ব্রিজে আন্দোলনকারীদের হঠাতে জলকামান কাজে লাগানো হয়ছে।

অন্যদিকে, হাওড়া ও সাঁতরাগাছি স্টেশন চত্বরেও বাড়তে থাকে জমায়েত। আন্দোলনকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাথর ছুঁড়তে শুরু করে। পরিস্থিতি সামাল দিতে ফের কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়ে পুলিশ। ইটবৃষ্টিতে এক পুলিশকর্মীর মাথা ফেটে যায়। তবে জাতীয় পতাকা হাতে অনড় আন্দোলনকারীরা। বিভিন্ন জায়গায় জাতীয় পতাকা হাতে রাস্তায় বসে পড়েন আন্দোলনকারীরা। আবার কোথাও কোথাও ব্যারিকেডের উপর জাতীয় পতাকা হাতেও দাঁড়িয়ে স্লোগান দিতে দেখা গিয়েছে তাঁদের। 

বাবুঘাটের কাছে পুলিশ লেখা বাইকে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয় সেই পুলিশকর্মীর। যদিও প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি বাইকআরোহী একজন আরপিএফ কর্মী, তাঁকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ, হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে সেই ব্যক্তিকে। ঘটনার সময় রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় বাবুঘাট চত্বর। ময়দানে মোহনবাগান ক্লাবের কাছে এসেও বাইকে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। পুলিশের বড় বাহিনী আসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। ফোর্ট উইলিয়ামের কাছেও পুলিশের একাধিক গাড়ি ভাঙচুর করা হয় বলে অভিযোগ। দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকে এলাকা।

বড়সড় গন্ডগোলের ছক ছিল। সেই পরিস্থিতি এড়াতেই গতকাল থেকে অন্তত ২৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের অনেকের কাছ থেকেই বোমা-গুলি উদ্ধার হয়েছে।  পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজের ডাকে নবান্ন অভিযান নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে সাফ জানালেন এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার। তাঁর দাবি, আন্দোলনের আড়ালে ছিল চক্রান্ত। দুষ্কৃতীরা ওই আন্দোলনে সামিল হয়ে লাশের রাজনীতির ছক কষেছিল। এডিজি আইনশৃঙ্খলা মনোজ বর্মা দাবি করেছেন, এদিনের গোলমালে ৯৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে রাজ্য পুলিশ। কলকাতা পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে ১২৬ জনকে। তাঁদের মধ্যে ২৩ জন মহিলা। পরিস্থিতি মোকাবিলায় নেমে অন্তত ১১  পুলিশকর্মী আহত হয়েছেন।

এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম আরও জানান, গতকাল থেকে আজ সকাল পর্যন্ত ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আরও অনেককে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। গতকাল রাতে হাওড়া স্টেশন গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৪ জনকে। তারা খুনের পরিকল্পনা করেছিল। অস্ত্র, বোমা, গুলি নিয়ে অশান্তি পাকানোর ছক ছিল। তাঁর আরও দাবি, ধৃতদের বিরুদ্ধে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ রয়েছে। যথাসময়ে সেই প্রমাণ দেওয়া হবে।

ছাত্রসমাজের পাশে দাঁড়াতে বুধবার রাজ্যব্যাপী ১২ ঘণ্টা বন্‌ধের ডাক দিল বিজেপি। মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠক ডেকে বাংলা বন্‌‌ধের কথা ঘোষণা করলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। জানালেন, বুধবার সকাল ছ’টা থেকে সন্ধ্যা ছ’টা পর্যন্ত চলবে ‘সাধারণ ধর্মঘট’। তাঁর দাবি, ‘প্রচুর আহত, গ্রেফতারি হয়েছে, পুলিশ লাঠিচার্জ করেছে’, তাঁদের কথা ভেবে বাংলা বনধের ডাক।

বুধবার রাজ্যে বনধ হবে না, জানিয়ে দিয়েছেন আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার রাজ্যের অর্থ দফতর থেকেও এল নির্দেশিকা। না এলে কারণ দর্শাতে হবে। সরকারি কর্মীদের কেউ যদি বুধবার অনুপস্থিত থাকেন তাহলে তাঁকে শোকজ করা হবে। মঙ্গলবার যাঁরা ছুটিতে আছেন, বুধবার তাঁদের কাজে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই মর্মে এক বিবৃতি জারি করা হয়েছে রাজ্যের অর্থ দফতর থেকে। আলাপনবাবু জানালেন, সরকার এই বনধ মানবে না। সারা রাজ্যে জনজীবন স্বাভাবিক থাকবে বলেই ঘোষণা তাঁর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *