নয়াদিল্লি, ৯ মে ২০২৪: ভারতের রাষ্ট্রপতি আজ নয়াদিল্লিতে নাগরিক সম্মাননা জ্ঞাপন অনুষ্ঠানে বস্ত্রবয়ন শিল্পে অনবদ্য কৃতিত্ব রাখার জন্য ত্রিপুরার শ্রীমতি স্মৃতিরেখা চাকমাকে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করলেন।
পুরস্কার প্রাপকের জীবন ও কর্ম সম্পর্কে বিবরণ:
শ্রীমতি স্মৃতি রেখা চাকমা (পদ্মশ্রী):
চাকমা জনজাতির একজন দক্ষ বস্ত্রবয়ন শিল্পী শ্রীমতি স্মৃতিরেখা চাকমা ত্রিপুরার ঐতিহ্যপূর্ণ বস্ত্রশিল্পের কারিগর হওয়ার পাশাপাশি টেক্সটাইলস ক্ষেত্রের আধুনিক ঐতিহ্যবাহী ডিজাইনারও।
২) শ্রীমতি স্মৃতিরেখা চাকমা ১৯৬৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বালিকা বয়স থেকেই প্রথাগত কোমড় তাঁত দিয়ে বয়ন শুরু করেন, পরবর্তীতে কম বয়সেই দক্ষ হয়ে উঠেন। তিনি জঙ্গল থেকে সংগ্রহ করা বিভিন্ন গাছ, লতাপাতা, বীজ, ফুল, ভেষজ, শেকড়, গাছের ছাল ইত্যাদি পরিবেশ-বান্ধব সামগ্রী দিয়ে সূতির সুতোকে রাঙানোর কাজে বিশেষ দক্ষতা দেখিয়েছেন। তাঁর কাজ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত, এমনকি বিদেশেও বিভিন্ন মন্দির ও জাদুঘরে স্থান পেয়েছে। গত দুই দশকের বেশি সময় ধরে তিনি তাঁর মর্যাদাপূর্ণ সৃষ্টির প্রদর্শনের জন্য ত্রিপুরা, দিল্লি, কর্ণাটক, উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র ও আসামে বিভিন্ন সেমিনার, কর্মশালা, প্রদর্শনী, প্রশিক্ষণ ইত্যাদিতে অংশগ্রহণ করেছেন।
৩) শ্রীমতি চাকমা দেশের বাইরেও বিভিন্ন আলোচনা সভা এবং কর্মশালায় ভারতের প্রতিনিধি হয়ে যোগ দিয়েছেন। যার মধ্যে আছে, ২০০৯ সালে ঢাকায় রিজিওনাল ব্যাক স্ট্র্যাপ লুম কনফারেন্স এন্ড ওয়ার্কশপ, ২০০৯ সালেই ঢাকার প্রবর্তনার পক্ষ থেকে গুরু হিসেবে ন্যাচারাল কালার্স প্রোগ্রামে, এবং ২০১৪ সালে ইয়াঙ্গুনে ‘ট্রেড এন্ড ইনভেস্টমেন্ট শো ইন্ডিয়া-মায়ানমার’ অনুষ্ঠান। তাঁর এই দক্ষতা সংরক্ষণ করে রাখতে কয়েকটি প্রামাণ্য চিত্র বা ডকুমেন্টারি চলচ্চিত্রও করা হয়েছে। যার মধ্যে আছে, চাকমাদের ঐতিহ্যগত বয়ন, নকশা ও ভেষজ রঙ করার বিষয় নিয়ে দূরদর্শনের ফিল্ম ডিভিশনের করা ‘কালচার এন্ড হ্যান্ডিক্রাফ্টস অফ ত্রিপুরা’। কলকাতা দূরদর্শন করেছে ‘দ্য কালচার এন্ড হেরিটেজ অফ চাকমা’ নামের ডকুমেন্টারি এবং দূরদর্শন কেন্দ্র, ত্রিপুরার পক্ষ থেকে করা হয়েছে ‘পার্বত্য ত্রিপুরার একটি উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম স্মৃতিরেখা চাকমা’ নামের প্রামাণ্য চিত্র।
৪) শ্রীমতি চাকমা গ্রামীণ মহিলাদের শিক্ষা ও অর্থনীতির উন্নতির জন্য ১৯৯৯ সালে ‘উজেইয়া জধা’ (উন্নত সমাজ) নামের এনজিও স্থাপন করেন। তাঁর কাছে আশা প্রশিক্ষণার্থীদের তিনি বিনামূল্যে খাওয়া-থাকার সুবিধা দিয়ে এবং এমনকি স্টাইপেন্ড দিয়েও বয়ন ও প্রাকৃতিক রঙের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিচালনা করেন। যার ফল স্বরূপ তাঁর চারজন প্রশিক্ষণার্থীও জাতীয় পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
৫) শ্রীমতি চাকমাকে নানা অনুষ্ঠানে অনেক সম্মাননা দিয়ে সম্বর্ধিত করা হয়েছে। যার মধ্যে আছে ‘স্টেট বিজু মেলা-২০০২, ত্রিপুরা’, ‘ইন্টারন্যাশনাল চাকমা লিটারারি এন্ড কালচারাল ফেস্টিভেল-২০১৮, ত্রিপুরা’, ত্রিপুরার চাকমা লিটারারি একাডেমির ‘ইন্টারন্যাশনাল পয়েট এন্ড লিটারারি উৎসব-২০২২’।
৬) শ্রীমতি চাকমা বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। যার মধ্যে আছে— ভারত সরকারের বস্ত্রমন্ত্রকের পক্ষ থেকে ২০০০ সালে দেওয়া জাতীয় পুরস্কার, নাগাল্যান্ডের ডিমাপুরে ২০১১ সালে ‘গুরু-শিষ্য পরম্পরা’ পুরস্কার, দিল্লির ক্রাফ্টস কাউন্সিলের পক্ষ থেকে ‘সূত্রকার সম্মান-২০১৮’, বস্ত্রমন্ত্রকের পক্ষ থেকে মাস্টার বয়নশিল্পী হিসেবে ২০১৮ সালে ‘সন্ত কবীর’ পুরস্কার, ইউনেস্কোর দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চল কেন্দ্রের তরফে কুয়েতে ২০১৮ সালে ‘ওয়ার্ল্ড ক্রাফ্টস কাউন্সিল অ্যাওয়ার্ড’ এবং ত্রিপুরার ইন্টারন্যাশনাল চাকমা ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ‘লাইফটাইম অ্যাওয়ার্ড-২০২২’।.