নিজস্ব প্রতিনিধি, খোয়াই, ১ আগস্ট৷৷ খোয়াই শহরে অনবদ্য পেট্রোল পাম্পে শান্তিপূর্ণভাবে পেট্রোল বন্টন চলে সোমবার৷ উল্টোদিকে কিন্তু পেট্রোলের দাবিতে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে রামচন্দ্রঘাট এলাক৷ সোমবার সাত সকালেই খোয়াইয়ের রামচন্দ্রঘাট দেবনাথ পেট্রোল পাম্পে প্রত্যেক মোটর বাইকে একশ টাকার পেট্রোল বন্টনকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি উতপ্ত হয়ে উঠে৷ কারন চাহিদা অনুযায়ী পেট্রোল আসেনি খোয়াইয়ের দুটো পেট্রোল পাম্পে৷ বিশেষ করে বাইক চালকদের দাবি সাতদিন পর খোয়াইয়ে পেট্রোল এসেছে তাই একশ টাকার পেট্রোল নিতে অসম্মতি প্রকাশ করে সোমবার সাত সকালেই রামচন্দ্রঘাট পেট্রোল পাম্পের সামনে চূড়ান্ত উত্তেজনার সৃষ্টি করে৷ এক সময় স্তব্ধ হয়ে পড়ে খোয়াই তেলিয়ামুড়া সড়কে যান চলাচল৷ ঘটনাস্থলে ছুটে যান খোয়াইয়ের এসডিপিও শ্যামানন্দ শর্মা, খোয়াইয়ের ওসি শান্তি ভূষন ভূইয়া সহ বিশাল পুলিশ বাহিনী৷ পুলিশ পৌঁছানোর পরই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আসে৷ খোয়াইয়ের দুটি পেট্রোল পাম্পেই সোমবার এক লিটার করে মোটর বাইকে এবং ছোট গাড়িতে তিনশত টাকা করে পেট্রোল বন্টন করা হয়৷ তবে দুটি পেট্রোল পাম্পেই একজন করে ডিসিএম উপস্থিত থেকে পেট্রোল বন্টন করেন৷
চাহিদার তুলনায় অনেক কম৷ তবুও কিছুটা স্বস্তি খোয়াইবাসীর৷ দুদিন যাবত শহরে উপর ব্যস্ততম রাস্তার পাশে দিন রাত লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা বাইক সহ অন্যান্য যান চালকদের মুখে হাসি ফুটল সোমবার সকালে৷ তবে সবার নয়৷ যাদের হাতে ছিল গাড়ী বা বাইকের বৈধ কাগজ-পত্র তাদের যানবাহনেরই পিপাসা মিটেছে এদিন৷ যাদের ছিল অবৈধ কাগজ-পত্র তাদের হাতে পৌঁছায় কেইসের চালান৷ তবে জনগনের মতে প্রশাসন যদি প্রথম থেকেই এই কড়া ব্যবস্থা গ্রহন করতো তবে এতটা দুর্ভোগ বোধহয় হতনা৷ তবে প্রশাসনের দেরীতে ঘুম ভাঙার পেছনে কি রহস্য লুকিয়ে আছে তা নিয়েই জনমনে কৌতুহল বিরাজ করছে৷ ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে এসেছে কালোবাজারিদের বেশ কিছু অবৈধ জ্বালানী মজুত ভান্ডার৷ খোয়াই রামচন্দ্রঘাটেও প্রশাসনিক তৎপরতায় বেশ কিছু বেআইনী মজুত জ্বালানী উদ্ধার হয়েছে৷ কিন্তু সবাটাই হয়েছে তীরে এসে তরী ডুবে যাবার সময়৷ তাছাড়া খোয়াই শহরকে শাপমুক্ত না করে, খোয়াইতে কালোবাজারী বন্ধে কোন উদ্যোগ না নিয়ে শহর থেকে ১৮কিমি দূরে রামচন্দ্রঘাট এলাকায় অভিযান চালানো হয়৷ এনিয়েও জনমনে ব্যাপক প্রশ্ণের উদ্রেক হয়েছে৷ এদিকে প্রশাসনের ঘুম ভাঙতে ভাঙতে পকেট কেটে গেছে বাইক সহ অন্যান্য যান চালকদের৷ তবে শেষ পর্যন্ত খোয়াই প্রশাসন জেগে উঠায় কিন্তু পেট্রোল সংকট কিছুটা হলেও হ্রাস করা যাবে বলে মনে করছেন জনসাধারন৷
এদিকে সোমবারও রাহুমুক্তি হলনা পেট্রোল সংকটে দুর্বার খোয়াইবাসীর৷ দীর্ঘদিন যাবত ভোর থেকে গভীর রাত অবধি রৌদ-বৃষ্টি সহ্য করে হাজারো যানবাহন লম্বা লাইন করে পেট্রোলের আশায় প্রহড় গুনলেও রবিবার রাত দশটা নাগাদ এসে পৌঁছে পেট্রোলের গাড়ী৷ কিন্তু অধিক রাত অবধি পেট্রোলের গাড়ীর দেখা না পেয়ে অনেকেই হতাশ হয়ে বাড়ী ফিরেন৷ অবশেষে সোমবার সকাল থেকে পেট্রোল দেওয়া শুরু হয় খোয়াইতে৷ খোয়াই অনবদ্য পেট্রোল পাম্প থেকে পেট্রোল নেওয়ার জন্য সোমবারও যানবাহনের দীর্ঘ লাইন চোখে পড়ে৷ একদিকে যানবাহনের লম্বা লাইন ছাড়িয়ে যায় স্টেট ব্যাঙ্ক তো অন্যদিকে সুভাষপার্ক৷ তবে রাহুমুক্তির বদলে এদিন সর্ষের ভূত তাড়া করে বেড়াল অবৈধ কাগজপত্র বহন করা যান চালকদের৷ পেট্রোল সংকটের মুখে দীর্ঘদিন যাবত নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে রাস্তায় রাস্তায় লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও ঐ সমস্ত যান চালকদের মুখে কিন্তু সোমবারও হাসি ফুটলনা৷ কারণ তাদের কাছে ছিলনা বৈধ কাগজ-পত্র৷ এদিকে রবিবার রাতেই পেট্রোল এসে পৌঁছায় পাম্পে৷ কিন্তু তাও যতসামান্য৷ পেট্রোল পাম্পের জন্য পেট্রোল বরাদ্দ হয় চার হাজার লিটার৷ যা খোয়াইয়ের চাহিদার তুলনায় খুবই সামান্য৷ তার মধ্যেই বাইক প্রতি ১০০ টাকা, অটো ২০০ এবং মারুতি গাড়ী সহ অন্যান্য যানবাহনের জন্য ৩০০ টাকার পেট্রোল দেওয়া শুরু হয় সোমবার সকাল থেকে৷ তবে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন ভোর রাত থেকেই শুরু হয়ে যায়৷ ভোর ৪টা নাগাদ প্রায় দুই শতাধিক যানবাহন লাইনে দাঁড়িয়ে পড়ে৷ বেলা বাড়ার সাথে সাথে এই লাইন খোয়াই শহককে ঘিরে ফেলে৷ তবে রাহুমুক্ত হননি যান চালকরা৷ রবিবারই প্রশাসনিক সূত্রে খবর ছিল সোমবার পেট্রোল দেওয়া হবে কিন্তু যানবাহনের কাগজ পত্র ঠিক থাকলে তবেই দেয়া হবে পেট্রোল৷ কথা মতো কাজ করলো প্রশাসনও৷ সোমবার খোয়াইতে কেবল মাত্র তাদেরই যানবাহনের জন্য পেট্রোল দেওয়া হয় যারা বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পেরেছেন৷ অন্যথায় মিলেনি একবিন্দু পেট্রোলও৷ বরং জুটে গেছে কেইসের চালান৷ যেখানে দীর্ঘদিন যাবত পেট্রোল সংকটে দুর্বার রাজ্য, সেখানে দিনের পর দিন বৈধ কাগজপত্র ছাড়া যান চালকদের গাড়ীর ট্যাঙ্ক না ভরে যদি প্রথম থেকেই প্রশাসন এবিষয়ে তৎপর হতো তবে জনগনের সাথে চলা এই রশিকতা কবেই শেষ হয়ে যেত৷
উল্লেখ্য, শনিবারই ইন্ডিয়ান ওয়েলের পক্ষে খোয়াইয়ে দুটি গাড়িতে ৪০ হাজার লিটার ডিজেল এবং গাড়ি পেট্রোল দেবে বলে সন্মত হয়৷ এক গাড়ি পেট্রোল খোয়াইয়ের দুটি পেট্রোল পাম্প সুভাষপার্ক এবং রামচন্দ্রঘাট পাম্পে মিলিয়ে দেয়া হয়৷ খোয়াই অনবদ্য পেট্রোল পাম্পে পেট্রোল বরাদ্দ হয়েছে চার হাজার লিটার এবং রামচন্দ্রঘাট দেবনাথ ডিপোতে বরাদ্দ হয়েছে আট হাজার লিটার পেট্রোল৷ যা খোয়াইয়ের চাহিদার তুলনায় খুবই সামান্য৷
2016-08-02

