গত বছরের বকেয়া ঋণ ৩৭.৮৪ থেকে কমিয়ে এবারের বাজেটে ২৯.২২ শতাংশে নামানোর প্রচেষ্টা : মুখ্যমন্ত্রী লালদুহোমা

আইজল, ২৭ ফেব্রুয়ারি (হি.স.) : মিজোরামের অর্থ দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত মুখ্যমন্ত্রী লালদুহোমা আজ মঙ্গলবার বিধানসভায় ১৩,১৭৬.৮৫ কোটি টাকার তাঁর প্রথম বাজেটে পেশ করেছেন। বাজেট পেশ করে বিধানসভা সভাকক্ষে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তৃতা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী লালদুহোমা বাজেটের মাধ্যমে রাজ্যের অর্থনৈতিক ও সংশ্লিষ্ট নানা বিষয়ের ব্যাখ্যা দিয়েছেন। বকেয়া ঋণ মোকাবিলায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকারের লক্ষ্য হলো বকেয়া ঋণ আগের বছরের ৩৭.৮৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে এ বছর ২৯.২২ শতাংশে নামানো। পূর্ববর্তী সরকারের কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত কথিত আর্থিক চ্যালেঞ্জের কথা স্বীকার করে তিনি বিদ্যমান ঋণ ব্যবস্থাপনা ও কমানোর জন্য কঠোর ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছেন।

মুখ্যমন্ত্রী লালদুহোমা বলেন, ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের জন্য রাজ্য বাজেটের প্রাক্কলনের মোট মূল্য ১৩,১৭৬.৮৫ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষের জন্য একটি সম্পূরক চাহিদা (ভোটেড এক্সপেনডিচার) ৩,২৮৭.৯৩ কোটি টাকা। বলেন, ২০২৪-২৫ একত্রীকরণের বছর হবে বলে আশা করছে তাঁর সরকার। নতুন সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে রাজস্ব ঘাটতি কমানো এবং যত সম্ভব উচ্চ ঋণ কমানো। তিনি আরও বলেন, সরকার এই অর্থবৰ্ষ রাজ্য তহবিল ব্যবহার করে বড় আকারের প্রকল্প গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকবে যেগুলির জন্য উল্লেখযোগ্য প্রতিপক্ষের তহবিল প্রয়োজন।

সরকারি ঋণের প্রভাবের উপর জোর দিয়ে লালদুহোমা বলেন, বর্তমান সরকার এক্সটাৰ্নাল সহায়তাপ্রাপ্ত প্রকল্পগুলি ৬৫.২৯ শতাংশ এবং কেন্দ্রীয়ভাবে সাহায্যপ্রাপ্ত প্রকল্পগুলি ৪.১৫ শতাংশ হ্রাস করেছে। মুখ্যমন্ত্রী এমন সব প্রকল্পে গুরুত্বের উপর জোর দিয়ে বলেন, রাজ্যের অর্থনীতির উপর চাপ সৃষ্টি না করে এগুলিতে সম্পূর্ণরূপে অর্থায়ন করা হয়েছে। তিনি বলেন, তাঁর সরকার উচ্চতর রাজস্ব আয় এবং ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে রাজস্ব উদ্বৃত্ত হিসাবে ৬৫৪.৯৫ কোটি অর্জনের প্রত্যাশা করছে।

কঠোর ব্যবস্থাপনার উপর জোর দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘২০২৪-২৫ অর্থবৰ্ষ হবে একত্রীকরণের বছর যেখানে রাজ্যের আর্থিক প্ৰবৃদ্ধি উন্নতিতে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। সরকারি অর্থের বিচক্ষণ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আমাদের রাজস্ব ঘাটতি কমাতে এবং ঋণ পুঞ্জিভূত রোধ করার জন্য কৌশলগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে যা পূর্বোক্ত বিবেচিত অতিরিক্ত ব্যয় থেকে শুরু করে।’

লালদুহোমা বলেন, ‘আমাদের প্রতিশ্রুতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের জন্য সরকারি ঋণ ৬৯৭.৬৯ কোটি টাকায় কমানো হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। রাজ্য তহবিল থেকে বিশাল মূলধন ব্যয় এবং উল্লেখযোগ্য প্রতিরূপ তহবিল প্রয়োজন প্রধান প্রকল্পগুলি ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের জন্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি৷’

মিজোরামের নতুন সরকার আসন্ন অর্থবর্ষর জন্য বাজেট পরিকল্পনা করেছে। আর্থিক স্থিতিশীলতা একত্রিত করা এবং আর্থ-সামাজিক সংস্কার বাস্তবায়নের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে এই বাজেট তৈরি করা হয়েছে, বলেন মুখ্যমন্ত্রী।

বাজেটে যে সব মূল উদ্যোগ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে সে সম্পৰ্কে জানাতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্ৰী বলেন, এগুলির মধ্যে ‘কালফুং থার – মিপুই সাওরকার’ শীর্ষক একটি নতুন শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন এবং মুখ্যমন্ত্রীর ১০০ দিনের কর্মসূচির বাস্তবায়ন। এছাড়া রাজস্ব ঘাটতি কমাতে, ঋণ পুঞ্জিভূতকরণ রোধ এবং পরিবেশ সুরক্ষা ও সামাজিক সমতা সহ ভারসাম্যপূর্ণ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য প্রচেষ্টা করা হয়েছে বাজেটে।

সাংবাদিক সম্মেলনেও তিনি বলেন, সরকারের লক্ষ্য হ্যান্ড হোল্ডিং নীতি এবং লাভজনক মূল্যে মূল অর্থকরী ফসল সংগ্রহের মতো উদ্যোগের মাধ্যমে বিভিন্ন সেক্টরকে ক্ষমতায়ন করা। এছাড়া সামাজিক নিরাপত্তা শক্তিশালী, কল্যাণমূলক পরিষেবার প্রসার এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহের উন্নতির জন্যও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপরন্তু, বাজেটে শিক্ষা সংস্কার, পরিকাঠামো উন্নয়ন, এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য বরাদ্দ রয়েছে। আর্থিক সীমাবদ্ধতা, মূলধন বৃদ্ধি এবং জনসম্পদের দক্ষতা ব্যবহার নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সরকার।

মিজোরামের অর্থনীতি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের মধ্যে স্থিতিস্থাপকতা প্রদর্শন করে ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের জন্য ১১.০৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধির প্রত্যাশিত গ্রস স্টেট ডোমেস্টিক প্রডাক্ট (ডিএসডিপি) হার। তৃতীয় খাত অর্থনৈতিক সম্প্রসারণ চালিয়ে যাওয়ার জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে বাজেটে।

এছাড়া কৃষির স্থায়িত্ব বাড়ানোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। সরকার বাজারের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি উৎপাদনকারীদের ক্ষমতায়ন করা, লাভজনক মূল্যে মূল অর্থকরী ফসল সংগ্রহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, বলেন অর্থ দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত মুখ্যমন্ত্রী লালদুহোমা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *