নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১ জুন৷৷ পরিস্কার হল না রাজ্যে স্বপ্ণের রেলের আনুষ্ঠানিক সূচনার বিষয়টি৷ ক্রমাগত পিছিয়ে

চলেছে আগরতলা থেকে দূরপাল্লার যাত্রী রেলের আনুষ্ঠানিক সূচনা৷ বুধবার মুখ্যমন্ত্রী এবং পরিবহণ মন্ত্রীর সাথে বৈঠকের পর আগরতলা থেকে ব্রডগেজে যাত্রী রেলের সূচনার বিষয়ে পূর্বোত্তর সীমান্ত রেলের কর্তাদের কাছ থেকে স্পষ্টভাবে কোন কিছুই জানা যায়নি৷ রেল কর্তাদের মতে, পাহাড় লাইনে বৃষ্টির কারণে রেল লাইন ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়ায় লামডিং-শিলচর লাইনে রেল পরিষেবা বন্ধ হয়ে রয়েছে৷ ফলে, চলতি মাসের দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় সপ্তাহের আগে আগরতলা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে দূরপাল্লার যাত্রী রেলের সূচনা কোনভাবেই সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন পূর্বোত্তর সীমান্ত রেলের জেনেরাল ম্যানেজার এইচ কে জাগ্গি৷
বুধবার তিনি পূর্বোত্তর সীমান্ত রেলের অন্যান্য আধিকারীকদের নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের সাথে বৈঠক করেন৷ এরপর পরিবহণ মন্ত্রী মানিক দে’র সাথেও বৈঠক করেন৷ তাতে রেল নিয়ে বর্তমান পরিস্থিতি এবং যাত্রী রেলের সূচনার বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়৷ বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে পূর্বোত্তর সীমান্ত রেলের জেনেরাল ম্যানেজার জানান, পাহাড় লাইনে ক্রমাগত ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে৷ ফলে, লামডিং-শিলচর লাইনে রেল লাইন বন্ধ আছে৷ হাফলং অঞ্চলে চলতি বছরে গত দুই মাসে রেকর্ড পরিমান বৃষ্টিপাত হয়েছে৷ যেখানে এ অঞ্চলে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমান ৩৩০০-৩৫০০ এমএম, সেখানে গত দুই মাসেই ২০০০ এমএম বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে৷ ক্রমাগত ভারী বৃষ্টিপাতে রেল লাইনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে৷ বিশেষ করে, পাহাড় লাইনের দুটি স্থানে রেল লাইন মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে৷ তাঁর বক্তব্য, পাহাড় লাইনের মাটি ভিষণ নরম৷ ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে রেল লাইনের মাটি ১মিটার পর্যন্ত সরে যাচ্ছে৷ ফলে, বাধ্য হয়ে এই রুটে রেল চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে৷ তবে, পূর্বোত্তর সীমান্ত রেলওয়ে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় রেল লাইনের সারাইয়ের কাজ করে চলেছে বলে জানান শ্রী জাগ্গি৷ তাঁর মতে, এক সপ্তাহের মধ্যে লামডিং-শিলচর রুটে রেল পরিষেবা চালু করা সম্ভব হবে৷ কিছু কিছু জায়গায় ভারী যন্ত্রপাতি নিয়ে গিয়ে কাজ করা মুশকিল হলেও এক সপ্তাহের মধ্যেই পাহাড় লাইন রেল পরিষেবা চালু হয়ে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন৷
তবে, আগরতলা থেকে দূরপাল্লার রেলের সূচনা লগ্ণে সরাসরি কলকাতা এবং দিল্লি এক্সপ্রেস ট্রেন পাওয়া যাবে কিনা সেই প্রশ্ণে শ্রীজাগ্গির বক্তব্যে আশার আলো দেখা যাচ্ছে না৷ তাঁর বক্তব্য, রেলের কোচের যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে পূর্বোত্তর সীমান্ত রেলওয়ের কাছে৷ দূরপাল্লার রেল চালাতে গেলে যথেষ্ট পরিমানে কোচের প্রয়োজন৷ সেক্ষেত্রে রেল মন্ত্রককে জানানো হয়েছে কোচের বন্দোবস্ত করতে৷ এখন দেখা যাক, দূরপাল্লার যাত্রী রেলের ফ্ল্যাগ অফ’র সময় সরাসরি কলকাতা এবং দিল্লি একইসাথে শুরু করা যায় কিনা৷ তবে, তিনি নিশ্চিত হয়ে কিছুই জানাতে পারেননি৷ অবশ্য, পর্যায়ক্রমে আগরতলা থেকে সরাসরি কলকাতা এবং দিল্লি পর্যন্ত এক্সপ্রেস ট্রেন দেওয়া হবে, সে বিষয়ে তিনি অনেকটাই নিশ্চিত বলে জানিয়েছেন৷
সূত্রের খবর, আগামী ১৪ জুন আগরতলা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রী রেলের সূচনার জোর প্রস্তুতি নিয়েছে রেল মন্ত্রক৷ এদিন, শ্রী জাগ্গি জানিয়েছেন, আগরতলা থেকে যাত্রী রেল সূচনার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী বা রেলমন্ত্রী উপস্থিত থাকতে পারবেন কিনা সে বিষয়টিও রেল মন্ত্রক ভাবনা চিন্তার মধ্যে রেখেছে৷
এদিক, পরিবহণ মন্ত্রীর সাথে রেলের আধিকারীকদের বৈঠকে সুনির্দিষ্ট কয়েকটি দাবি আবারও তাঁদের কাছে তুলে ধরা হয়েছে৷ পরিবহন মন্ত্রী মানিক দে জানিয়েছেন, অন্যান্য দাবিগুলির মধ্যে মিটার গেজ’র সময়ে যে ট্রেনগুলি ছিল সেগুলি পুনর্বহাল করতে হবে৷ সে বিষয়ে পূর্বোত্তর সীমান্ত রেলের জেনারেল ম্যানেজার জানিয়েছেন, আগরতলা থেকে ধর্মনগরের প্যাসেঞ্জার ট্রেনটি পুণরায় চালু করার বিষয়ে চিন্তাভাবনা চলছে৷ খুব শীঘ্রই এই ট্রেনটি চালু করা হবে৷
এদিকে, আগরতলা-উদয়পুর রুটে সুরক্ষা পর্যবেক্ষণ চলতি মাসেই করা হবে বলে জানিয়েছেন শ্রীজাগ্গি৷ এদিন তিনি বলেন, আগামীকাল উদয়পুর পর্যন্ত রেল লাইনের কাজকর্ম খতিয়ে দেখবেন৷ বিশেষ করে সিগনালিংয়ের কাজ কতটা সম্পন্ন সে বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন তিনি৷ কারণ, চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে সেফটি কমিশনার আগরতলা থেকে উদয়পুর রেল লাইনের সুরক্ষা পর্যবেক্ষন করবেন৷ তাতে ধারণা করা হচ্ছে, আগরতলা থেকে যাত্রী রেল সূচনার কিছুদিনের মধ্যেই উদয়পুর পর্যন্ত রেল পৌছে যাবে৷ বুধবার আগরতলা রেল স্টেশনের কাজকর্ম খতিয়ে দেখেন শ্রীজাগ্গি সহ অন্যান্য আধিকারীকরা৷

