শিক্ষার ক্ষতি আটকাতে সরকারকে ৯ দফা স্মারকলিপি

কলকাতা, ৩ জুলাই (হি. স.) : পশ্চিমবঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পঠনপাঠন ও গবেষণার মত বহু দৈনন্দিন কাজ। সোমবার রাজ্যের ১৯টি শিক্ষা সংগঠন এ ব্যাপারে সরকারকে ৯দফা একটি স্মারকলিপি দিয়েছে।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির (জুটা) সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতীম রায় এ প্রসঙ্গে জানান, এগুলো আমাদের রাজ্যের উচ্চশিক্ষার ভবিষ্যতের জন্য গভীর উদ্বেগজনক। সোমবার রাজ্যের বিভিন্ন শিক্ষা সংগঠনের তরফে এব্যাপারে আশঙ্কা প্রকাশ করা হল।

আপনারা জানেন যে রাজ্যের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এক অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক এবং প্রশাসনিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ইউজিসির নিয়মের বাইরে গিয়ে বেআইনি উপাচার্য নিয়োগ, উপাচার্য, ডিনের মত গুরুত্বপূর্ণ পদে স্থায়ী নিয়োগ বন্ধ করে রাখা, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্বাধিকার খর্ব করে সরকারি নিয়ন্ত্রণ কঠোর করার জন্য কোনও বিধি তৈরি না করা, বিধিসম্মত কমিটিগুলোতে নির্বাচিত শিক্ষক প্রতিনিধিত্ব না রাখার মত অজস্র অনাচার চালিয়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে বহু জায়গায় নতুন নিয়োগ, পদোন্নতির মত কাজগুলোও বন্ধ আছে আচার্যের প্রতিনিধির অভাবে। এর ফলে

এই পরিস্থিতিতে আমাদের দাবি
১. কোনও ভাবেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ‘উপাচার্যহীন’ রেখে ভর্তি, পরীক্ষাসহ স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত করা যাবে না। অবিলম্বে এই সব বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন মোতাবেক উপাচার্য নিয়োগ করতে হবে। আচার্য-সরকারের টানাপোড়নে ‘অস্থায়ী উপাচার্য’রাও আজ সংকটে। এই সংকট নিরসনে অবিলম্বে আইনসম্মতভাবে স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করতে হবে।

২. উপাচার্য বাছাইয়ের সার্চ কমিটিতে দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিত্ব রাখতে হবে। সংকীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থে দখলদারির উদ্দেশে উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের অর্ডিন্যান্সে তিনজন সরকারি প্রতিনিধি রাখার বিষয়টি বাতিল করতে হবে।

৩. বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্থায়ী ডিন নিয়োগ করতে হবে। যেখানে ডিন নেই সেখানে ফ্যাকাল্টির অ্যাকাডেমিক কাজকর্ম চালু রাখার স্বার্থে আইন মেনে অন্তর্বতীকালীন অস্থায়ী ডিন নিয়োগ করতে হবে।

৪. শূন্যপদে শিক্ষক নিয়োগ সহ শিক্ষকদের পদোন্নতির (সিএএস) প্রক্রিয়া চালু রাখতে অবিলম্বে আচার্যের প্রতিনিধি দিতে হবে।

৫. ফ্যাকাল্টি কাউন্সিল, ইসি-কোর্ট/ সেনেট-সিন্ডিকেট সহ সমস্ত স্ট্যাটিউটারি বডিতে নির্বাচিত শিক্ষক প্রতিনিধি রাখতে হবে।

৬. রাজ্য সরকারের নতুন আইন ও নিয়ম প্রকাশের প্রায় দশ বছর পরেও স্ট্যাটিউট তৈরি হলনা। বহু বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট কোর্ট- কাউন্সিল/সেনেট–সিন্ডিকেটে স্ট্যাটিউট অনুমোদন করে পাঠালেও রাজ্য সরকার তা ফেলে রেখেছে স্রেফ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপর খবরদারির জন্য। অবিলম্বে সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ট্যাটিউট প্রণয়ন করতে হবে।

৭. কোনও রকম আলোচনা ছাড়াই এবং পরিকাঠামোগত উন্নয়নের ব্যবস্থা না করে একতরফাভাবে চার বছরের ডিগ্রি কোর্স চালু করা হয়েছে। নতুন পাঠক্রম চালুর আগে অবিলম্বে এবিষয়ে শিক্ষকসমাজের মতামত নিতে হবে এবং প্রয়োজনীয় নতুন পরিকাঠামোর সুবন্দোবস্ত করতে হবে।

৮. দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে সাযুজ্য রেখে রাজ্যের কৃষি, প্রাণী ও মৎসবিজ্ঞান সহ আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগের নীতি প্রণয়ন করতে হবে। অন্যান্য বিশ্ববিদালয়গুলোর সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণভাবে শিক্ষকদের অবসর গ্রহণের বয়সসীমা নির্ধারণ করতে হবে।

৯. রাজ্যের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এমনিতেই ছাত্র-ছাত্রীদের আনুপাতিক হারে ন্যূনতম শিক্ষক-শিক্ষিকা নেই এবং বর্তমানে আচার্যের নমিনি না থাকার কারণে বেশিরভাগ জায়গায় নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে আছে। এর মধ্যে ভোটের ডিউটি সহ নানা কাজে শিক্ষক-সমাজকে যুক্ত করা হচ্ছে। ছাত্র-ছাত্রীদের স্বার্থে অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে।

দাবি পূরণে সরকার সদর্থক ভূমিকা না নিলে আমরা যৌথভাবে বৃহত্তর আন্দোলনে সামিল হব। সেই পরিস্থিতির দিকে যেতে বাধ্য করলে তার দায়ভার সরকারকেই নিতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *