অসমিয়া–বাঙালি গামছা বিতর্ক : অবিলম্বে বাংলা সাহিত্য সভার কর্মকর্তাদের গ্রেফতারের দাবি বিডিএফ-এর

শিলচর (অসম), ২৮ মার্চ (হি.স.) : বাংলা সাহিত্য সভা, অসম নামের এক সংগঠনের সাম্প্রতিক অধিবেশনে অতিথিদের স্বাগত জানাতে অসমিয়া ও বাঙালি গামছা অর্ধেক কেটে জোড়া লাগিয়ে সংবর্ধনা দেওয়ায় গোটা রাজ্যে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে সরব হয়েছে বরাক ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট (বিডিএফ)-ও। বিডিএফ অসমিয়া এবং বাংলা সংস্কৃতিকে অপমানের দায়ে বাংলা সাহিত্য সভা, অসম-এর কর্মকর্তাদের গ্রেফতারের দাবি তুলেছে।

এ ব্যাপারে বিডিএফ-এর মুখ্য আহ্বায়ক প্রদীপ দত্তরায় তাঁর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে সাংবাদিকদের বলেন, ভুঁইফোড় সংগঠনটির এই প্রচেষ্টায় অসমিয়া সমাজ সংগত কারণেই ক্ষোভ ব্যক্ত করছেন। কারণ দীর্ঘকাল ধরে অসমিয়া গামোছাকে তাঁরা তাঁদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রতীক বলে মনে করেন। তাই এভাবে অসমিয়া গামোছাকে বিকৃত করে সমগ্র অসমিয়া জাতির ভাবাবেগে আঘাত দেওয়া ক্ষমাহীন অপরাধ।

তিনি বলেন, বরাক উপত্যকার সরকারি ভাষা আইন লঙ্ঘন করে অসমিয়া সাইনবোর্ড লাগানোর অপরাধে যদি মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে জেলে পাঠাতে পারেন, তবে অসমিয়া সংস্কৃতিকে অপমান করার দায়ে এই সব সংগঠকদের কেন জেল হবে না? যদি তেমন কোনও পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তা-হলে অবশ্যই বুঝতে হবে, এ সবের পেছনে সরকারি মদত রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে প্রদীপবাবু আরও বলেন, সম্প্রতি কোকরাঝাড়ে সমস্ত অসমিয়া সাইন বোর্ডে কালো কালি দিয়ে মুছে দিয়েছে অল বড়ো স্টুডেন্টস ইউনিয়ন। কিন্তু সারা অসমের কোথাও কোনও প্রতিবাদ চোখে পড়েনি। তিনি বলেন, যারা বিডিএফ-এর প্রতিবাদের সময় মিডিয়া ট্রায়াল বসিয়েছিলেন, কুশপুতুল পুড়িয়েছিলেন, এখন কোথায় গেলেন ওই সব অসমিয়া জাতীয়তাবাদের ধ্বজাধারীরা? কোথায় গেল আসু কিংবা লাচিত সেনা? তার মানে কি ধরে নিতে হবে, বড়োদের তাঁরা ভয় পান এবং বাঙালিরা ভদ্র বলে তাঁদের দুর্বল মনে করেন?
প্রদীপ দত্তরায় বলেন, এভাবে গামছা জোড়া দিয়ে বকচ্ছপ সমন্বয়ের প্রচেষ্টা হাস্যকর। তিনি বলেন, অসমিয়া ও বাংলাভাষিক গোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে এক সাথে বসবাস করছেন, সাধারণ মানুষের মধ্যে সমন্বয়ের কখনওই অভাব হয়নি। বলেন দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার মূল কারিগর রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ।

বিডিএফ-প্রধান দত্তরায় বলেন, যদি ডি ভোটার নোটিশ, এনআরসি ইত্যাদি করে বাঙালিদের হেনস্তা করা হয়, যদি বরাক উপত্যকার বাঙালিদের সরকারি চাকরি না দেওয়া হয়, যদি ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় একের পর এক বাংলা স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়, যদি ভাষিক আগ্রাসনের নিত্যনতুন ছক কষা হয়, তবে সমন্বয়ের আশা দুরাশা মাত্র। তিনি বলেন, যেহেতু বিডিএফ এবং বরাকের মানুষ এ সবের বিরুদ্ধে সংগঠিত হতে শুরু করেছেন তাই সরকার ভয় পেয়েছে এবং সেজন্যই সরকারি মদতে এ সব মেকি সমন্বয়ের নাটক মঞ্চস্থ করা হচ্ছে।

বক্তা বলেন, গামছা বাঙালিদের পুজোপার্বণ বা শ্রমজীবী মানুষের প্রয়োজনে ব্যবহৃত হলেও তা দিয়ে কখনওই অতিথি বরণ করা হয় না। তাই অসমিয়াদের অন্ধ অনুকরণ করতে গিয়ে এ সবের মাধ্যমে সংগঠকরা বাঙালি ঐতিহ্য সম্পর্কে তাঁদের অজ্ঞতা ও চাটুকারিতার প্রমাণ পেশ করেছেন। তিনি বলেন, এই সংগঠন কোনওভাবেই রাজ্যের বাঙালিদের প্রতিনিধি নন। বরাকের কিছু চাটুকার ও মিরজাফর, যারা এই প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে সংবাদ মাধ্যমে বক্তব্য পেশ করেছেন, তাদেরও সম্পূর্ণভাবে বর্জন করার জন্য তিনি সবাইকে আহ্বান জানিয়েছেন।

বিডিএফ মিডিয়া সেলের মুখ্য আহ্বায়ক জয়দীপ ভট্টাচার্য এদিন বলেন, ওই অধিবেশনের মঞ্চে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সেই শিলাদিত্য দেব যিনি বরাকে এসে সবাইকে ভাষা সংগ্রামের আবেগ ও ভাষা শহিদদের ভুলে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। জয়দীপ বলেন, যার বিন্দুমাত্র আত্মগরিমা নেই, বাঙালিদের কলঙ্ক সেই নেতা যে সংগঠনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক সেই সংগঠন কতটা বাঙালিদের স্বার্থে কাজ করবে এটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।

জয়দীপ আরও বলেন, হিন্দু ও মুসলমানের মধ্যে যে বিদ্বেষ ছড়িয়ে শিলাদিত্য হিন্দু অসমিয়া ও হিন্দু বাঙালিদের একত্রীকরণ করতে চাইছেন তা একমাত্র বিজেপি দলের ভোটব্যাংক স্ফীত করার স্বার্থে। এর সাথে রাজ্যের বাঙালিদের প্রকৃত উন্নয়ন কিংবা সমন্বয়ের কোনও সম্পর্ক নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *