ঢাকা, ১৮ জুন (হি.স.): ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক পয়গম্বর হজরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্যের প্রেক্ষিতে নূপুর শর্মা-সহ দু’জনের শাস্তির দাবিতে বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে বাংলাদেশে প্রতিদিনই সভা ও সমাবেশ হচ্ছে। বিজেপি থেকে শুধু বহিষ্কারই নয় নূপুর শর্মার ফাঁসিরও দাবি করেছে বাংলাদেশের ইসলামিক সংগঠনগুলি। কোনও কোনও সংগঠন আবার বাংলাদেশের সংসদে নিন্দা প্রস্তাবের দাবিও জানিয়েছে। আবার কোনও রাজনৈতিক দল বাংলাদেশের সংসদে নিন্দা প্রস্তাবের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন, তাঁদের মতে এভাবে নিন্দা প্রস্তাব আনা একটি স্বাধীন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা। তবে, সকলেই একটি বিষয়ে সহমত পোষন করেছেন, আর তা হল-প্রত্যেক ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া। নিন্দা প্রস্তাবের বিষয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলিই দ্বিধাবিভক্ত, এ বিষয়ে বহুভাষী সংবাদ সংস্থা “হিন্দুস্থান সমাচার”-এর সঙ্গে মতামত বিনিময় করেছেন বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা।
বাংলাদেশের সংসদে নিন্দা প্রস্তাব আনার বিষয়ে আল-হাসানী আল-মাইজভান্ডারী ও ওয়ার্ল্ড সূফী ফোরামের বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের চেয়ারম্যান শাহ্জাদা সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমেদ বলেছেন, যাঁরা অন্যের ধর্মকে আঘাত করে তারা কখনও মানুষ হতে পারে না। সেটা ভারতের নূপুর শর্মাই হোক অথবা অন্য কোনও ব্যক্তি। প্রত্যক ধর্মেই অন্যের ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও সহনশীল হওয়ার কথা বলা আছে। আর আমাদের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলিতে কোনও ধর্ম সম্পর্কেই এমন কথা বলা যাবে না যাতে সাম্প্রদায়িক হিংসা হয়। মহানবী (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তিতে বিশ্বের সকল মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে। তিনি আরও বলেছেন, ইসলাম কখনও সন্ত্রাস ও হিংসাকে সমর্থন করে না। যে অপরাধী বা দোষী তাকে শাস্তি দিতেই হবে। একইসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, বাড়ি-ঘর, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে আগুন লাগানো ও ভাঙচুর করাকে ইসলাম সমর্থন করে না।
আবার বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্য জোটের চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান চৌধুরী বলেন, মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে বিশ্বের সকল মুসলমানরা শেষ নবী হিসেবে মানেন। নবীজী সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী। তাঁর মহান চরিত্রকে কটাক্ষ করে যে মন্তব্য করেছে তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। ইসলামী ঐক্য জোট অভিযুক্তের শাস্তির দাবিতে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেছে। শুনেছি বিজেপি থেকে তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে। ইসলামী ঐক্য জোটের পক্ষ থেকে নবীজীর সম্পর্কে কটূক্তিকারী দু’জনের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব গ্রহণ করা এবং একই সঙ্গে ওই দুই নেতার বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার জন্য ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশের পার্লামেন্টে একটি প্রস্তাব পাসের দাবি জানানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমাদের এই উপমহাদেশের সকলকে মনে রাখতে হবে আমাদের শান্তিপূর্ণ ভাবে একত্রে বসবাস করতে হবে। প্রসঙ্গত, মহানবী সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্যের পরই পশ্চিমবঙ্গ-সহ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজনের বাড়ি-ঘর ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে হামলা চালানো হয়, এ সবের তীব্র নিন্দা করে মিছবাহুর রহমান বলেন, আমি কিছু ঘটনার কথা শুনেছি তবে কোনও গণমাধ্যমে দেখিনি। এই ধরণের হামলার ঘটনা যদি ঘটে থাকে সেটা খুবই নিন্দনীয়।
আবার বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)-এর সাধারণ সম্পাদক ও প্রাক্তন সাংসদ নাজমুল হক প্রধান বলেন, বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মুসলিম তাই বাংলাদেশের সংসদে নুপুর শর্মার কঠোর শাস্তির দাবিতে একটি প্রস্তাব পাস করা দরকার। এটা করা হলে বাংলাদেশের মুসলিমদের সঙ্গে সরকার যে একমত সেটা প্রকাশ পাবে।
নিন্দা প্রস্তাবের ব্যাপারে ভিন্ন মত পোষন করেছেন বাংলাদেশের জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ও একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মেহে জেবুন্নেসা রহমান টুম্পা। তিনি বলেন, মহানবী (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তি করে সমগ্র বিশ্বের কোটি কোটি ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের হৃদয়ে আঘাত করা হয়েছে। জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে প্রতিবাদে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। আমরা অবশ্যই কটূক্তিকারীদের কঠোর শাস্তির দাবি করছি। ভারত বিশ্বের একটি বৃহত্তম গণতান্ত্রীক দেশ। আমরা আশা করছি সেই দেশ অবশ্যই বিচার করবে। কিন্তু বাংলাদেশের সংসদে নিন্দা প্রস্তাব আনা হলে একটি বন্ধু রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের সামিল হবে। তিনি বলেছেন, বিগত দুর্গা পুজোর সময় বাংলাদেশে হিন্দুদের উপরে র্নিযাতন হয়েছে, বেশ কয়েকজন মারা গিয়েছিলেন। কিন্তু ভারত নিজেদের সংসদে এ ব্যাপারে কোন নিন্দা প্রস্তাব আনেনি। দু’জন ব্যক্তির দায় ভারত সরকারের ওপর চাপালে সেটা বড় অন্যায় হবে।

