BJP : রাজ্য ভাগের দাবী তুলে সমালোচনার মুখে বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ

বাঁকুড়া, ২৪ মে (হি. স.) : বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁর রাজ্য ভাগের দাবী নিয়ে সোরগোল রাজনৈতিক মহলে।বিজেপি সাংসদের এই দাবীকে কেউ শিশু সুলভ বলে মন্তব্য করেছেন তো কেউ পাগলের প্রলাপ বলে মন্তব্য করেছেন।

উত্তরবঙ্গ, গোর্খাল্যান্ড ইত্যাদি নিয়ে বাংলা ভাগের দাবি উঠেছে বারবার। এখনও সেই দাবী নিয়ে সরব কেউ কেউ। তাদের সমর্থন নিতে ঘুরিয়ে সহানুভূতিশীল হয়ে কখনো শাসক দল তো কখনো বিরোধীরা নির্বাচনে উত্তরবঙ্গ জয় করেছে। এরকম দাবি নিয়ে গত বিধানসভা নির্বাচনের পর বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর লোকসভার সাংসদ সৌমিত্র খাঁ আলাদা জঙ্গলমহল রাজ্যের দাবি উসকে দিয়েছিলেন। এই নিয়ে বিরোধীরা তার তোলা দাবিকে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করতেও ছাড়েননি । দলের নেতারা কেউ কেউ তার দাবিকে সমর্থন জানালেও এটা তার ব্যক্তিগত মতামত বলে মন্তব্য করেছিলেন। সোমবার সৌমিত্র খাঁ ফের তার সাংসদ এলাকা বিষ্ণুপুরে রীতিমতো সাংবাদিক বৈঠক ডেকে দক্ষিণবঙ্গের বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম, মেদিনীপুর ও পশ্চিম বর্ধমান জেলা নিয়ে ফের আলাদা জঙ্গলমহল রাজ্যের দাবি তুললেন। রাজ্য ভাগের এমন দাবির সমালোচনা কংগ্রেস, সিপিএম, তৃণমূল সকলেই রে রে করে সাংসদের বিরোধিতায় সরব হয়েছে। এমনকি বিজেপি নেতারাও সৌমিত্রর এই দাবিকে তার আবেগ ও জঙ্গলমহল বাসীর দাবি বলে মন্তব্য করলেও আলাদা রাজ্য গঠনকে আমল দিতে চাননি।
কেন আলাদা রাজ্যের দাবি করেছেন সৌমিত্র? বঙ্গভঙ্গের এই কারণকে সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করলেন তিনি। সৌমিত্র বলেন, রাঢ়বঙ্গের বীরভূম, পশ্চিম বর্ধমান, পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ার উত্তরাংশ প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর। পাশাপাশি পুরুলিয়া, দক্ষিণ বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গলমহল এলাকার বনজ সম্পদ ও পূর্ব মেদিনীপুরে শিল্পাঞ্চল। তার দাবি, এই রাঢ়বঙ্গ ও জঙ্গলমহলের সমস্ত সম্পদ নিয়ে যাচ্ছে কলকাতা। তিনি দাবি করেন এর ফলে ধীরে ধীরে কল্লোলিনী হচ্ছে তিলোত্তমা। আর রাঢ়বঙ্গ ও জঙ্গলমহল বঞ্চনার শিকার হচ্ছে। এখানের মানুষের হাহাকার নিত্যসঙ্গী। সৌমিত্র বলেন, আর নয় – এবার জঙ্গলমহলের মানুষের ঘুম ভেঙেছে। তাদের অধিকার ছিনিয়ে নিতে হবে। আমার জঙ্গলমহল ও রাঢ়বঙ্গের মানুষকে কারো মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে না। তারা নিজেরাই স্বাবলম্বী হবে।তিনি বলেন আমাদের দামোদর আছে। কাঁসাই, কংসাবতী, শালি, শিলাবতী, গন্ধেশ্বরী, দ্বারকেশ্বর, অজয়, ময়ূরাক্ষী আছে। এই নদীমাতৃক রাঢ়বঙ্গ ও জঙ্গলমহলের বালি এলাকার মানুষ ব্যবহার করতে পারছেন না। সব চলে যাচ্ছে কলকাতায়। আসানসোল, রানীগঞ্জ, মেজিয়া, শালতোড়া, বড়জোড়া, নিতুরিয়া, পারবেলিয়ার কয়লা সহ মিথেন গ্যাস সব লুট হচ্ছে। পাঁচামি ও শালতোড়ার পাথরের সমস্ত আয় চলে যাচ্ছে কলকাতায়। আর এই এলাকার মানুষ নিজের সম্পদ বালি, পাথর, কয়লা ব্যবহার করতে পারছেন না। একসময় লরিতে বালি লোড করতেন শ্রমিকরা। কয়েক হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হতো। কিন্তু এখন বালি মাফিয়ারা মেশিনের সাহায্যে বালি-পাথর তুলছে। এরফলে হাজার হাজার মানুষের কর্মচ্যুতি ঘটিয়েছে তারা। আর মানবো না আমরা।

সৌমিত্র বলেন, আলাদা রাজ্য হলে বিধানসভা হবে, মহাকরণ হবে, মন্ত্রীসভা হবে, কেন্দ্রীয় বরাদ্দ আসবে। ফলে অসংখ্য কর্মসংস্থান হবে। তাই রাঢ়বঙ্গ ও জঙ্গলমহলকে নিয়ে আলাদা রাজ্য চাই। তিনি বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলা ভেঙে টুকরো টুকরো করতে পারেন। আর আমরা ন্যায্য দাবী নিয়ে বলতে পারবোনা। বিষয়টি নিয়ে তারই দলের বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বিল্লেশ্বর সিংহ বলেন, এটা দলীয় কোনো সিদ্ধান্ত নয়। তবে জঙ্গলমহলের মানুষ তথা বাঁকুড়া পুরুলিয়া চির অবহেলিত। স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরও এই দুই জেলাকে পিছিয়ে পড়া তকমা থেকে সরানো যায়নি। এলাকার মানুষের মর্মব্যথার কথা এবং সাংসদ তার আবেগ ধরে রাখতে না পেরেই হয়তো এই দাবি করেছেন। কংগ্রেসের জেলা সভাপতি নীলমাধব গুপ্ত বলেন, শিশুসুলভ কথাবার্তা। সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক সুজিত চক্রবর্তী তার প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে বলেন, তৃণমূলের জমানায় চমকদারি কথাবার্তা শিখে সৌমিত্র বাবু এখন বিজেপির ভাঙ্গনের রাজনীতি রপ্ত করেছেন। কিন্তু বঙ্গভঙ্গ আর নয়। এর জন্য বামপন্থীরা সর্বদাই অখণ্ডতা রক্ষায় শামিল থাকবে। সৌমিত্র খাঁয়ের রাজ্য ভাগকে পাগলের প্রলাপ বলে মন্তব্য করেন তৃণমূলের বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি অলক মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, উনি বেশ কিছুদিন সংবাদ শিরোনাম এমনকি সামাজিক মাধ্যমেও আসতে পারছেন না। সংবাদ শিরোনামে থাকার জন্য এই ধরনের কথা বলেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *