গুয়াহাটি, ৬ ফেব্রুয়ারি (হি.স.) : গোটা দেশকে শোকসাগরে ভাসিয়ে ইহজগতের মায়া-অভিমান-আদর-বিতৃষ্ণা, সব ফেলে বিদায় নিয়ে অন্য সুরলোকে চলে গেছেন সুরসম্ৰাজ্ঞী, কোকিলকণ্ঠী গায়িকা, ভারতরত্ন, ভারতের কণ্ঠ লতা মঙ্গেশকর। কেবল ভারত নয়, গোটা বিশ্বে কোটি কোটি অনুরাগী নাইটেঙ্গলের প্রয়াণে চোখের জল ধরে রাখতে পারছেন না। স্তব্ধ হয়ে গেছে কোকিলকণ্ঠ, অশ্রুসজল অসমও শোকস্তব্ধ। কেননা, অসমের সঙ্গে কিংবদন্তি কোকিলকণ্ঠী লতা মঙ্গেশকরের গভীর সম্পৰ্ক আছিল।
প্ৰায় দু-হাজার কিলোমিটার দূরের বাসিন্দা লতাজির কাছে কী করে আজন্ম পরিচিত হয়ে পড়েছিল অসমের নাম? অসমের সংগীত জগতের মহীরূহ ড. ভূপেন হাজরিকার সঙ্গে এক সুমধুর আত্মিক সম্পৰ্ক ছিল লতাজির। আত্মিক এই সম্পর্কের মধ্য দিয়ে এই দুজন সংগীত জগতে অবলীলাক্রমে কীর্তি রেখে গেছেন। লতাজির কাছে ভূপেন হাজরিকা ছিলেন দাদা। এই ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধেই ভূপেন-দা বলে সম্বোধন করতেন লতা মঙ্গেশকর।
ভূপেন হাজরিকা সুরসম্রাজ্ঞির কণ্ঠে বাণীবদ্ধ করিয়েছিলেন বেশ কয়েকটি অসমিয়া গান। অসমিয়া ‘এরা বাটর সুর’ চলচ্চিত্রে লতা মঙ্গেশকরকে প্ৰমুখ নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী হিসেবে চুক্তিবদ্ধ করে ভূপেন হাজরিকা অসমবাসীকে উপহার দিয়েছিলেন ‘জোনাকর রাতির…’ মতো জনপ্ৰিয় গান। সুধাকণ্ঠ ড. ভূপেন হাজরিকা এবং লতা মঙ্গেশকরের যুগলবন্দিতে প্ৰাণ পেয়ে উঠেছিল বেশ কয়েকটি চিরসবুজ অসমিয়া গান। নাইটেঙ্গলের কণ্ঠে রেকর্ডকৃত প্রত্যেকটি অসমিয়া গান আজও ব্যাপক জনপ্রিয়, গানগুলি আজও বিশেষ সম্পদ বলে পরিগণিত হচ্ছে। লতা মঙ্গেশকর আজ কায়িকভাবে আমাদের মধ্যে না থাকলেও তাঁর কণ্ঠে রেকর্ডেড গানগুলি আজও সমানে অমর।
১৯৫৬ সাল, সুধাকণ্ঠ ভারতরত্ন ড. ভূপেন হাজরিকার সংগীত পরিচালিত ‘এরা বাটর সুর’-এ প্রথম এবং পরবর্তীতে ‘সিরাজ (দ্বিতীয়)’, ‘অপরাজয়’, ‘পানী’ ইত্যাদি ছায়াছবিতে লতা মংঙ্গেশকর গেয়েছিলেন অসমিয়া গান। এছাড়া ভূপেন হাজরিকা এবং কোকিলকণ্ঠী গায়িকার যুগলবন্দিতে তৈরি অ্যালবাম ‘চয়নিকা’ অসমে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছিল। কেবল তা-ই নয়, ‘জোনাকরে রাতি, অসমীরে মাটি’ গান আজও কালজয়ী হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে, এই গান আজও অসমবাসী গুনগুন করে গান। এছাড়া কিংবদন্তি কোকিলকণ্ঠী লতা মঙ্গেশকর আরও বেশ কয়েকটি অসমিয়া গান গেয়ে সেগুলিকে অমরত্ব প্ৰদান করেছেন।
এগুলির মধ্যে অন্যতম ‘গোদাবরী নৈরে পাররে পরা…’, ‘রোদ পুয়াবর কারণে…’ ইত্যাদি বহু কালজয়ী গান গেয়ে লতা মঙ্গেশকর এ-সব গানের মাধ্যমে প্ৰত্যেক অসমিয়ার হৃদয়ে স্থান লাভ করেছেন। শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার মানুষটির প্রয়াণে আজ অসমের প্ৰত্যেকটি হৃদয় বিষাদের বেদনায় ডুকরে ডুকরে কাঁদছে।