গুয়াহাটি, ৩১ ডিসেম্বর :
আসামে জনসংখ্যা ও পরিচয় রাজনীতি ঘিরে চলমান বিতর্কে নতুন করে বিতর্ক উসকে দিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। মঙ্গলবার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তিনি হিন্দু দম্পতিদের এক সন্তানে সীমাবদ্ধ না থেকে অন্তত দুই থেকে তিনটি সন্তান নেওয়ার আহ্বান জানান।
মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, রাজ্যে ধর্মীয় সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে জন্মহার তুলনামূলকভাবে বেশি, অথচ হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে তা ক্রমশ কমছে। তাঁর কথায়, “ধর্মীয় সংখ্যালঘু-প্রধান এলাকায় সন্তানের জন্মের হার বেশি। হিন্দুদের মধ্যে সেই হার কমে যাচ্ছে। এই পার্থক্য স্পষ্ট।”
এই প্রসঙ্গেই তিনি বলেন, “তাই আমরা হিন্দু জনগণকে বলছি, এক সন্তানেই থামবেন না। অন্তত দু’টি সন্তান নিন। যাঁরা পারেন, তাঁরা তিনটি সন্তানও নিন।” একইসঙ্গে তিনি মন্তব্য করেন, “আমরা মুসলিমদের বলি, যেন সাত-আটটি সন্তান না নেয়। আর হিন্দুদের বেশি সন্তান নেওয়ার অনুরোধ করি। না হলে হিন্দু সমাজের ঘর দেখভালের মতো মানুষ থাকবে না।”
এর আগে, গত ২৭ ডিসেম্বর, রাজ্যের জনসংখ্যাগত প্রবণতা নিয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ২০২৭ সালের জনগণনায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ‘মিয়া’ মুসলিমদের জনসংখ্যা ৪০ শতাংশে পৌঁছতে পারে। তিনি জানান, অল আসাম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন-এর সঙ্গে রাজনৈতিক জীবনের শুরুতে ওই জনগোষ্ঠীর জনসংখ্যা ছিল প্রায় ২১ শতাংশ, যা ২০১১ সালের জনগণনায় বেড়ে ৩১ শতাংশে দাঁড়ায়।
হিমন্ত বিশ্ব শর্মার বক্তব্য, “তাদের জনসংখ্যা ৪০ শতাংশেরও বেশি হবে। এমন দিন দূরে নয়, যখন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম দেখবে আসামি জনগণের অনুপাত ৩৫ শতাংশের নিচে নেমে যাচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশের দিক থেকে প্রায়ই বলা হয়, উত্তর-পূর্ব ভারতকে আলাদা করে বাংলাদেশে যুক্ত করা উচিত। তাদের যুদ্ধ করতে হবে না। একবার যদি তাদের জনসংখ্যা ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়, স্বয়ংক্রিয়ভাবেই উত্তর-পূর্ব ভারত তাদের হাতে চলে যাবে।”
এছাড়াও মুখ্যমন্ত্রী কংগ্রেসের এক মুখপাত্রের মুসলিমদের জন্য ৪৮টি বিধানসভা আসন সংরক্ষণের দাবি প্রসঙ্গে কটাক্ষ করেন। তাঁর অভিযোগ, ওই বক্তব্যের পরও কংগ্রেস কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়নি। হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেন, “বিজেপি হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে আসামি জনগণের জন্য আসন সংরক্ষণের কথা বলে। অথচ কংগ্রেস মুসলিমদের জন্য আলাদা সংরক্ষণের দাবি তোলে।” তাঁর সংযোজন, “কংগ্রেসের গোটা ইকোসিস্টেমই ওই জনগোষ্ঠীর ওপর নির্ভরশীল।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্য আসামে অভিবাসন, পরিচয় ও নাগরিকত্ব সংক্রান্ত দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক ও সামাজিক বিতর্ককে আরও তীব্র করল। বিশেষত, বাংলাদেশ থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশ সংক্রান্ত অতীত বিতর্কের প্রেক্ষাপটে জনসংখ্যাগত পরিবর্তন নিয়ে রাজ্যে মতভেদ অব্যাহত রয়েছে।

