আগরতলা, ২৪ ডিসেম্বর: উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির নিজস্ব উৎপাদিত উদ্যানজাত জি.আই. স্বীকৃত ফসলগুলির ভ্যালুচেইন গড়ে তুলতে গুরুত্ব আরোপ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা। এক্ষেত্রে ‘ন্যাচার্যালি নর্থ ইস্ট’ নামে একটি অভিন্ন ব্র্যান্ড তৈরির বিষয়েও মুখ্যমন্ত্রী অভিমত ব্যক্ত করেন। আজ কেন্দ্রীয় উত্তর পূর্বাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রকের (ডোনার) মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উত্তর পূর্বাঞ্চল রাজ্যগুলির কৃষি ও উদ্যান বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের টাস্ক ফোর্সের ভার্চুয়াল বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা অংশ নিয়ে এই অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা বলেন, উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির ৭০ শতাংশেরও বেশি জনগণ কৃষি ও কৃষি সংশ্লিষ্ট কাজের উপর নির্ভরশীল। দারিদ্র্য দূরীকরণ, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং কৃষি পণ্য রপ্তানির সম্ভাবনা সৃষ্টি করার লক্ষ্যে সমগ্র উত্তর পূর্বাঞ্চলের জন্য একটি সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আসামের চা, মণিপুরের কালো চাল, নাগাল্যান্ডের স্থানীয় উৎপাদিত বিশেষ জাতের মরিচ, ত্রিপুরার ক্যুইন আনারস, সিকিমের বড় এলাচ ইত্যাদি উদ্যানজাত ফসলের জি.আই. স্বীকৃতি রয়েছে। এগুলিকে সমন্বিত করে ভ্যালুচেইনের মাধ্যমে ‘ন্যাচার্যালি নর্থ ইস্ট’ নামে একটি ব্র্যান্ডের অধীনে যুক্ত করলে এই অঞ্চলের কৃষিজাত পণ্য বিশেষ পরিচিতি লাভ করবে।
বৈঠকে কৃষি ও উদ্যান বিষয়ক টাস্ক ফোর্সের আহ্বায়ক সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী প্রেমসিং তামাং ছাড়াও আসাম, অরুণাচলপ্রদেশের কৃষিমন্ত্রী যথাক্রমে অতুল বোরা, জি.ডি. ওয়াংসু সহ ডোনার মন্ত্রক এবং উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির পদস্থ আধিকারিকগণ আলোচনায় অংশ নেন। সচিবালয়ে আজ সকালে আয়োজিত এই ভার্চুয়াল বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা ছাড়াও মুখ্যমন্ত্রীর সচিব ড. পি. কে. চক্রবর্তী, কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের সচিব অপূর্ব রায় এবং কৃষি ও উদ্যান দপ্তরের পদস্থ আধিকারিকগণ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা বলেন, উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে অর্থকরী উদ্যানজাত ফসল যেমন আনারস, কলা, হলুদ, আদা, বড় এলাচ, অর্কিড এবং প্রাকৃতিক সম্পদ বাঁশ উৎপাদনের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এইসব ফসল ও সম্পদের রোগমুক্তভাবে উৎপাদন করা এবং সারা বছর ধরে এর উৎপাদন নিশ্চিত করতে প্রতিটি রাজ্যের রাজধানীতে টিস্যুকালচার ল্যাব স্থাপন করা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, উত্তর পূর্বাঞ্চলে প্রিসিশন ফার্মিং-এর সম্ভাবনা অপরিসীম। এক্ষেত্রে জি.পি.এস, সেন্সরস এবং আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মতো আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি, সুস্থায়ী কৃষি ব্যবস্থা এবং পরিবেশ রক্ষা করা সম্ভব। কিষাণ রেল ও কৃষি উড়ান যোগাযোগের মাধ্যমে অন্যান্য উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলি থেকে কৃষি পণ্য সংগ্রহ ও দ্রুত পরিবহণের জন্য গুয়াহাটিতে একটি মেগা কালেকশন সেন্টার স্থাপনের প্রয়োজনীয়তার কথাও তিনি উল্লেখ করেন।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারের পণ্য সংরক্ষণের মেয়াদ ও গুণমান বজায় রাখার লক্ষ্যে উন্নত প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে ভাবা অ্যাটোমিক রিসার্চ সেন্টার থেকে গামা বিকিরণভিত্তিক সংরক্ষণ প্রযুক্তির সহায়তা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, কৃষি পণ্যের বিপণনের জন্য শক্তিশালী বাজার কাঠামো, মান্ডি ব্যবস্থা, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলার পাশাপাশি ক্রেতাদের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করা অত্যন্ত প্রয়োজন, যাতে মধ্যস্থতাকারীদের উপর নির্ভরতা কমানো যায় এবং কৃষকরা তার কৃষি পণ্যের ন্যায্যমূল্য পান। প্রতিবেশী দেশগুলিতে উত্তর পূর্বাঞ্চলের কৃষি পণ্যের রপ্তানির চাহিদা সমীক্ষা করার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের সহায়তার জন্যও মুখ্যমন্ত্রী গুরুত্বারোপ করেন।

