ঢাকা, ১৯ ডিসেম্বর: ছাত্রনেতা ও যুব আন্দোলনের অন্যতম মুখ শরীফ ওসমান হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশজুড়ে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়েছে। বৃহস্পতিবার রাতভর সহিংস বিক্ষোভের পর শুক্রবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। সামনে জাতীয় নির্বাচন থাকায় পরিস্থিতি আরও অবনতির আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
শুক্রবার সকালে রাজধানীর রাস্তাঘাট তুলনামূলক শান্ত থাকলেও জুমার নামাজের পর নতুন করে সহিংসতা ছড়াতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এই দক্ষিণ এশীয় দেশটিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে প্রশাসন।
৩২ বছর বয়সী শরীফ ওসমান হাদি ছিলেন ‘ইনকিলাব মঞ্চ’ নামের একটি সংগঠনের মুখপাত্র। তিনি গত বছর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার পতনে ভূমিকা রাখা ছাত্রনেতৃত্বাধীন আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতিকালে গত শুক্রবার ঢাকায় মুখোশধারী দুর্বৃত্তদের গুলিতে মাথায় গুরুতর আহত হন হাদি।
প্রথমে তাকে ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানো হলে ছয় দিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর তার মৃত্যু হয়।
হাদি ভারতের কট্টর সমালোচক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ইনকিলাব মঞ্চ নিজেদের ওয়েবসাইটে একটি ‘অভ্যুত্থানের চেতনা থেকে অনুপ্রাণিত বিপ্লবী সাংস্কৃতিক প্ল্যাটফর্ম’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
হাদির মৃত্যুর পর বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকায় বিক্ষোভকারীরা দেশের শীর্ষস্থানীয় দৈনিক প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের কার্যালয়ে ভাঙচুর চালায় বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে। বিক্ষোভকারীরা হাদির নাম ধরে স্লোগান দেন এবং দ্রুত বিচার দাবি করেন। বিভিন্ন এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, ডেইলি স্টার কার্যালয়ে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। ঘটনাস্থলে সেনা মোতায়েন করা হয় এবং ভেতরে আটকে পড়া সাংবাদিকদের উদ্ধার করা হয়।
২০২৪ সালের আগস্টে ছাত্রনেতৃত্বাধীন অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেলে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। বর্তমানে সংস্কার বিলম্ব, রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য অস্থিরতার হুঁশিয়ারির মুখে সরকার চাপে রয়েছে। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।
হাদির মৃত্যুর পর জাতির উদ্দেশে দেওয়া টেলিভিশন ভাষণে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, তার প্রয়াণ দেশের রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক অঙ্গনের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। তিনি জনগণকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, দোষীদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
একই সঙ্গে তিনি সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়ে সতর্ক করেন, সহিংসতা দেশের বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের পথে অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করবে।

